ছায়ায় ঢাকা কিংবদন্তি

রান করে গেছেন নিয়মিত কিন্তু প্রচারের আলোয় আসতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ানদের মনেও তাই জায়গা করে নিতে পারেননি তিনি। কিন্তু ক্রিকেট তাকে খালি হাতে ফেরায়নি, আজও তার কথা স্মরণ করে বিশ্বজুড়ে থাকা ক্রিকেটপ্রেমীরা। তিনি অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক জ্যাক রাইডার, কলিংউডের বাসিন্দারা যাকে আদর করে ডাকে 'কিং অফ কলিংউড'।

যে ক্লাসের সেরা দুই ছাত্র হলেন স্যার ডন ব্র‍্যাডম্যান এবং ভিক্টর ট্রাম্পার, সে ক্লাসের বাকিদের নাম মনে না রাখাটাই স্বাভাবিক। অথচ টেস্ট ক্রিকেটে ৫১.৬২ গড় বিশ্বের যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই ঈর্ষণীয়।

রান করে গেছেন নিয়মিত কিন্তু প্রচারের আলোয় আসতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ানদের মনেও তাই জায়গা করে নিতে পারেননি তিনি। কিন্তু ক্রিকেট তাকে খালি হাতে ফেরায়নি, আজও তার কথা স্মরণ করে বিশ্বজুড়ে থাকা ক্রিকেটপ্রেমীরা। তিনি অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক জ্যাক রাইডার, কলিংউডের বাসিন্দারা যাকে আদর করে ডাকে ‘কিং অব কলিংউড’।

১৮৮৯ সালে ভিক্টোরিয়ার কলিংউডে জন্মগ্রহণ করেন জ্যাক রাইডার। লম্বা, সুদর্শন, সদাহাস্য রাইডার ছোটবেলাতেই মন জয় করে নিয়েছিলেন কলিংউডবাসীর। অলিতে-গলিতে বন্ধুদের সাথে ক্রিকেটে মেতে উঠতেন কিশোর বয়স থেকেই। স্থানীয় টুর্নামেন্টগুলোতে ভালো খেলতে খেলতে একসময় সুযোগ পেয়ে যান রাজ্যদলে।

১৯১২-১৩ সালে নিজের প্রথম মৌসুমেই ১৫.৪০ গড়ে ত্রিশ উইকেট নেন। পাশাপাশি ব্যাট হাতে রান করেন প্রায় ৩৩ গড়ে। তখন থেকেই অজিরা ধরে নিয়েছিল নতুন তারকার আবির্ভাব ঘটেছে। ভিক্টোরিয়ার হয়ে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে খেলেন ২৯৫ রানের দারুণ এক ইনিংস।

সে ইনিংসে ছয়টি ছক্কা হাঁকান তিনি। সে যুগে ছক্কা হাঁকানো ছিল অত্যন্ত দুরূহ কাজ। এখনকার মতো কেবল বাউন্ডারি পার করলেই হতো না, বল উড়িয়ে একদম মাঠের বাইরে পাঠাতে হতো। ১৯১৪-১৫ সালে পুরো মৌসুমজুড়ে তিনি রান করেন ৮৫ গড়ে!

কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার। নিজের সেরা সময়ে প্রায় সাত বছর খেলা থেকে থেকে দূরে ছিলেন তিনি। অবশেষে ১৯২০ সালে সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক ঘটে তার। অভিষেকেই অদ্ভুত এক রেকর্ডের সম্মুখীন হন তিনি, দুই ইনিংসেই সাজঘরে ফেরেন রানআউট হয়ে। পরের বছর দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ড সফর করেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ১০০ এর বেশি গড়ে রান করেন তিনি। ১৯২৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৯ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে অজিরা যখন ধুঁকছে তখন ব্যাটিংয়ে নেমে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন রাইডার। সাড়ে ছয় ঘন্টা ব্যাট করে অপরাজিত ছিলেন ২০১ রানে।

জ্যাক রাইডার ছিলেন অত্যন্ত আক্রমণাত্নক একজন ক্রিকেটার। তিনি এত জোরে কভার ড্রাইভ খেলতেন ফিল্ডার নড়বার সুযোগ পেতেন না। পাশাপাশি তার মিডিয়াম পেস বোলিং ছিল সমান কার্যকর। টানা এক লাইনে বল করে ব্যাটসম্যানকে ভুল শট খেলতে বাধ্য করতেন তিনি।

১৯২৬ সালে নির্বাচিত হন অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে। টেস্টে টানা ছয় ইনিংসে ফিফটি করার রেকর্ড আছে তার। তার অধীনে খেলা পাঁচ টেস্টের সবকয়টিতে অপরাজিত ছিল অস্ট্রেলিয়া। এক জয়ের পাশাপাশি ড্র হয় বাকি চারটি টেস্ট।

১৯৩০ সালে নির্বাচকদের সাথে মতবিরোধ হওয়ায় টেস্ট থেকে অবসর নেন তিনি। অজিদের হয়ে ২০ টেস্টে তিন শতক এবং নয় অর্ধশতকে তিনি ১,৩৯৪ রান করেন। পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেন ১৭ উইকেট। তবে অবসর নেবার পরও তিনি ভিক্টোরিয়ার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট চালিয়ে যান। ১৯৩৫/৩৬ সালে পাতিয়ালার মহারাজার আমন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়া দল ভারতে বেসরকারি টেস্ট খেলতে আসে।

৪৬ বছর বয়সে সেই দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন তিনি। ততদিনে টেস্ট ও প্রথম শ্রেণির খেলা দুটোই ছেড়ে দিয়েছেন। অথচ তাও প্রথম বেসরকারি টেস্টে সেঞ্চুরি করেন, গোটা সফরে প্রথম শ্রেণির খেলায় ২টি শতরান সহ ৮৪৩ রান করেন  ও ৮ উইকেট নেন । সবধরণের খেলা মিলিয়ে সফরে ১১২১ রান করেন ৪টি সেঞ্চুরি সহ ও ১২ উইকেট নেন।

অবসরের পর অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন টানা ২৩ বছর। ১৯৭৭ সালে টেস্ট ক্রিকেটের শতবার্ষিকী পালনের সময় পালনের সময় তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি বয়সী ক্রিকেটার। তবে এই সপ্তাহদুয়েক পরে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান রাইডার। ২০১৫ সালে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার হল অফ ফেমে যুক্ত করা হয় জ্যাক রাইডারকে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...