কোহলির কথাটাকে ‘সিরিয়াসলি’ নিয়েছেন ভারতের দর্শকরা

বিরাট কোহলি ইন্সটাগ্রামে যা লিখেছিলেন – সেটাকে সম্ভবত সিরিয়াসলিই নিয়ে ফেলেছিলেন ভারতের দর্শকরা। টিকেট না চেয়ে টেলিভিশন সেটের সামনে বসেই বিশ্বকাপ দেখার আহবান জানিয়েছিলেন কোহলি, সৌজন্য টিকেট দেওয়ার বিড়ম্বনা এড়ানোর জন্য। তবে, এমন দর্শকহীন আমেজহীন বিশ্বকাপ তিনি নিশ্চয়ই আশা করেননি।

গেল কয়েক বছরে ক্রিকেট পাড়ায় কান পাতলেই কানাঘুষো শোনা গিয়েছে, ৫০ ওভারের ক্রিকেট তাঁর রঙ হারিয়েছে, দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারছে না। ক্রিকেটের অনেক রথী-মহারথীরাও সময়ে-অসময়ে জানিয়েছেন, এই ফরম্যাট পরিবর্তন করা দরকার। এমনকি বিশ্বকাপ ব্যতীত ওয়ানডে ক্রিকেটকে জাদুঘরে তুলে রাখার পক্ষেও লোক রয়েছেন। তাদের এই মন্তব্যও কেবল ওডিআই ক্রিকেটকে ‘অজনপ্রিয়’ই করেছে।

ওয়ানডে ক্রিকেটের পুনর্জাগরণের মঞ্চ হতে পারতো ২০২৩ বিশ্বকাপ। হারানো জৌলুস ফিরে পেতে ‘উপমহাদেশ এবং বিশ্বকাপ’ – মিলনের এই মোহনার মত বড় আর কোনো বড় মঞ্চ নিশ্চয়ই হতে পারে না। তবে দর্শক শূন্য প্রথম ম্যাচ ওয়ানডে ক্রিকেটকে পুনর্জাগরণের পরিবর্তে শেষের দিকেই বেশি ঠেলে দিচ্ছে।

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ, আহমেদাবাদাবাদের নরেন্দ্র মোদী ক্রিকেট স্টেডিয়ামের লাখ খানেক দর্শক ধারণ ক্ষমতা এবং মুখোমুখি বিশ্ব ক্রিকেটের দুই হেভিওয়েট দল, গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড, সবকিছুই দুর্দান্ত কিছুরই আভাস দিয়েছে। কিন্তু খেলা শুরু করতেই আবিষ্কার করা গেলো, গ্যালারির সিঁকিভাগও দর্শক ভর্তি হয় নি। স্টেডিয়ামের প্রকান্ডতায় সেই সংখ্যাকে চোখে আরো নগন্য লাগে।

অথচ, ইংল্যান্ডের বেশ বড় সাপোর্টার গ্রুপ রয়েছে। ‘বার্মি আর্মি’রা নিজেদের দলকে সমর্থন করতে ঘুরে বেড়ান বিশ্বময়। নিউজিল্যান্ডের দর্শকপ্রিয়তাও কম নয়। তার উপরে ক্রিকেট পাগল ভারতীয় সমর্থক গোষ্ঠী, এসবের মিশেলেও ভরলো না গ্যালারির সিকিভাগ।

অবশ্য দর্শক শূন্য প্রথম ম্যাচের দায়ভার আইসিসি এবং বিসিসিআইও এড়াতে পারে না। এ বছরেই প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে খেলছে না স্বাগতিকরা। নতুন রীতি অনুযায়ী, গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট দুটি দল খেলছে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। দর্শক টানার উপলক্ষ্য হিসেবে আয়োজন করা হয় নি কোন অনুষ্ঠানের ও। ফলে, কর্মব্যস্ত দিনে ‘নিউট্রাল’ দুই দলের খেলা দেখতে মাঠে নামেনি দর্শকের ঢল।

কর্মব্যস্ত দিন কিংবা সাপ্তাহিক ছুটির দিন, যে কোন দিনেই ভারত, বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানের ম্যাচে গ্যালারিতে দর্শকের ঢল নামবে নিশ্চিতভাবেই। ফলে প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকরা খেলা, না খেলায় টুর্নামেন্টে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। আজ দর্শকপূর্ণ স্বাগতিকদের ম্যাচ হওয়ার পরে আগামীকাল এই ম্যাচ হলেও গ্যালারী তখন দর্শক শূন্যই থাকতো।

কেবলমাত্র উপমহাদেশের তিন দলের দর্শকপ্রিয়তা নিয়ে তো বৈশ্বিক পর্যায়ে একটা ফরম্যাটকে টিকিয়ে রাখা যায় না। ফলে সেই কানাঘুষোই ঘোর পাক খেতে থাকে, ওডিআই ক্রিকেট কি তবে ঠাই পাবে জাদুঘরে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link