তবুও অদিতি পেরেছেন

আমার মতো গল্‌ফ না বোঝা একজনকে বা আমার মত অসংখ্য ক্রিকেটপাগল ভারতীয়কে ভোর রাত থেকে জাগিয়ে রাখতে পেরেছিল অদিতি। আমার কাছে এটাই তার সবচেয়ে বড় সাফল্য। মেডেল পাওয়া না-পাওয়া, ঠিক ভুলের বিচার কিংবা সৌভাগ্য দুর্ভাগ্যের মতো বিষয়গুলোকে আপাতত দূরে সরিয়ে রেখে আমাদের দেশে তুলনামূলক অপ্রচলিত খেলায় পদকের আকাঙ্খা, আবেগকেই প্রাধান্য দিতে চাই। অদিতির বা ভারতের অলিম্পিক পদক জয়ের সম্ভাবনা এখানেই শেষ নয়, টোকিও অলিম্পিক থেকে অখ্যাত বা অল্প চর্চিত ইভেন্টে ভারতের পদকের স্বপ্ন দেখা শুরু হল।

গতকাল অবধি টোকিওর গলফের কোর্সে রুপোর পদকটা অদিতির একরকম নিশ্চিত ছিল। চোখে মুখে খেলা করছিল রুপোলি ছায়া। অব্যক্ত একটা প্রত্যয়। ব্যাপারটা অপ্রত্যাশিত হলেও দিবাস্বপ্ন নয়, সত্যি ছিল। আজকে সকালে হঠাৎ বৃষ্টি নামল, কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ রইল। আর এই বৃষ্টিতেই যেন ধুয়ে গেল ভারতের রুপালি স্বপ্ন।

শেষ হোলে বলটা ঠেলে দিতেই হোলের কানা ছুঁয়ে গড়িয়ে গেল। গর্তে পড়ল না। লক্ষ্যভ্রষ্ট হল ২৩ বছরের ভারতীয় মহিলা গল্ফার। মুখে ফুটে উঠল শুকনো হাসি। হতাশা আড়াল করার চেষ্টা। গতকাল অব্দি অদিতি রুপো জেতার জায়গায় ছিল। মাত্র একটা শর্টের জন্যে পদক পদক ফসকে গেল, চতুর্থ রাউন্ডের শেষে চার নম্বরে অদিতি। স্কোর ১৫ আন্ডার।

এতক্ষণ যে রুপোলি ছায়াটা অদিতির সমস্ত শরীরে খেলা করছিল, সেটা কেমন যেন আবছা হতে হতে একটা সময় মিলিয়ে গেল। ভাগ্যের কী করুণ পরিহাস। অদিতির আগে প্রতিদ্বন্দ্বী সোনা জয়ী আমেরিকান কোরদার ১৭ আন্ডার, রুপো জয়ী জাপানের ইনামির ১৬ আন্ডার এবং ব্রোঞ্জ জয়ী নিউ জিল্যান্ডের লিডিয়া ১৬ আন্ডার। মাত্র একটা বার্ডির‌ ফারাক থেকে গেল ভারতের।

গণিতের হিসেবে মাত্র এক অঙ্কের পার্থক্য হলেও পদকের থেকে অদিতির ফারাক হয়ে গেল অনেকটাই। ভারতের পদক তালিকায় আরেকটা পদক যোগ হলো না। না হলে টোকিও অলিম্পিকে ভারতের মোট পদকের সংখ্যাটা হতো আট এবং সেই পদকটার রঙ হতো রুপালি।

মা মহেশ্বরী-কে ক্যাডি করে এবার শুরুটা চমকপ্রদ হলেও শনিবারের বেলাটা কালবেলা হয়ে গেল ভারতীয় গলফারের জন্যে। রুপোটা অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়ে গেল, ভাবলে খুব আফসোস হচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্রোঞ্জটাও চলে গেল ভারতের নাগালের বাইরে। আরেক ভারতীয় গল্‌ফার অদিতির সতীর্থ দীক্ষা দাগর পদকের লড়াইয়ের ধারেকাছেও ছিলেন না।

তবে গর্বের বিষয় চতুর্থ হয়ে লাড়াই শেষ করল অদিতি অশোক। অলিম্পিকে এই প্রথম ভারতীয় কোনো গল্ফা‌র এমন নজির গড়লেন। সেই সঙ্গে অদিতির নাম লেখা হয়ে গেল অলম্পিকে ব্যক্তিগত ইভেন্টে চতুর্থ স্থানে থাকা রণবীর সিন্ধেস, পিটি ঊষা, মিলখা সিং, গুরুচরণ সিং, জয়দীপ কর্মকার, অভিনব বিন্দ্রার মতো তাবড় তাবড় নামের তালিকায়। প্রথম ভারতীয় মহিলা গল্‌ফ খেলোয়াড় হিসেবে গত রিও অলিম্পিকে আত্মপ্রকাশ ঘটে অদিতির। কিন্তু ৪১ তম স্থানে তার গত অলিম্পিক সফর শেষ হয়ে যায়।

অদিতির এই চমকপ্রদ লড়াইকে কুর্নিশ জানাই। গল্‌ফ না বুঝলেও অদ্ভুত এক টানে চোখ আটকে গেছল টিভির পর্দায় সবুজ গল্‌ফ কোর্সে। মনের ভিতর ঘনাচ্ছিল একটা আশা, সম্পূর্ণ নতুন সে আশা। যার খেলোয়াড়ি নাম গল্‌ফ এবং ব্যক্তিগত নাম অদিতি অশোক। টোকিও অলিম্পিকে ভারতের নারী গল্‌ফার। অসংখ্য ভারতীয় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল গল্‌ফে ভারতের ঐতিহাসিক পদক জয়ের।

বিগত তিনদিন তিনটে রাউন্ডের ফলাফল দেখে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তালিকায় দু’নম্বরে লেখা আদিতি আশোকের নাম পাশে ভারতের পতাকা। পয়েন্ট টেবিল দেখে স্বভাবতই অবাক হচ্ছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিল তবে কি শেষের আগের দিনেই আরেকটা রুপোর পদক জুটবে আমাদের পোড়া কপালে? অবিশ্বাস্য হলেও কিন্তু এটা ঘটনা।

আমার মতো গল্‌ফ না বোঝা একজনকে বা আমার মত অসংখ্য ক্রিকেটপাগল ভারতীয়কে ভোর রাত থেকে জাগিয়ে রাখতে পেরেছিল অদিতি। আমার কাছে এটাই তার সবচেয়ে বড় সাফল্য। মেডেল পাওয়া না-পাওয়া, ঠিক ভুলের বিচার কিংবা সৌভাগ্য দুর্ভাগ্যের মতো বিষয়গুলোকে আপাতত দূরে সরিয়ে রেখে আমাদের দেশে তুলনামূলক অপ্রচলিত খেলায় পদকের আকাঙ্খা, আবেগকেই প্রাধান্য দিতে চাই। অদিতির বা ভারতের অলিম্পিক পদক জয়ের সম্ভাবনা এখানেই শেষ নয়, টোকিও অলিম্পিক থেকে অখ্যাত বা অল্প চর্চিত ইভেন্টে ভারতের পদকের স্বপ্ন দেখা শুরু হল।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...