মেসির ফ্রি-কিক সাফল্যের রহস্য

মেসির ড্রিবলিং জাদু নিয়ে মুগ্ধতায় ডুব দেন অনেকেই। তবে মেসির ফ্রি কিকও যে আরেকটি মুগ্ধতার নাম, তা মেসির সার্বিক সাফল্যের আড়ালেই থেকে যায়। মেসির এমন  ফ্রি-কিক ম্যাজিকের আসলে রহস্যটা কী?

ম্যাচ শেষ হওয়ার তখন আর কয়েক মিনিট বাকি। এমন মুহূর্তে ৪-৩ গোলে এগিয়ে থাকা ডালাস এফসি সে সময় জয়ের প্রস্তুতিই নিচ্ছিল। ডালাসের গ্যালারিও তখন মেতে উঠেছিল জয়োৎসবে। 

মেসির মায়ামি লিগস কাপ থেকে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে— এমনটা বোধহয় স্বয়ং মেসিকেও তাতিয়ে দিয়েছিল। আর তার বিস্ফোরণ ঘটলো ম্যাচের ৮৫ মিনিটে। ফ্রি-কিক থেকে দারুণ এক গোলে ইন্টার মায়ামিকে ম্যাচে ফেরালেন বিশ্বকাপ জয়ী এ তারকা। আর তাতেই শেষ ষোল থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা থেকে ইন্টার মায়ামি উঠে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে। 

মেসির ঐ ফ্রি-কিকে ৪-৪ গোলের সমতায় শেষ হয় ম্যাচ। এরপর টাইব্রেকারে ডালাকে ৫-৩ গোলে হারায় মায়ামি। 

শেষ কয়েক বছরে ফ্রি-কিকে রীতিমত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন লিওনেল মেসি। মেসির ড্রিবলিং জাদু নিয়ে মুগ্ধতায় ডুব দেন অনেকেই। তবে মেসির ফ্রি কিকও যে আরেকটি মুগ্ধতার নাম, তা মেসির সার্বিক সাফল্যের আড়ালেই থেকে যায়। মেসির এমন  ফ্রি-কিক ম্যাজিকের আসলে রহস্যটা কী?

কিছুটা বিস্ময়েই ভাসতে হয়ে, বার্সেলোনার হয়ে অভিষেকের প্রথম চার বছরে ফ্রি-কিকে কোনো গোলই পাননি মেসি। অবশ্য মেসির তো তখন কেবল ক্যারিয়ারের শুরু। 

ফ্রি-কিকে বার্সার হয়ে মেসি প্রথম গোল  করেছিলেন ২০০৮-০৯ মৌসুমে। ১৫ বছর আগে সেই যে শুরু, এরপর প্রতি মৌসুমেই ফ্রি-কিকে গোল করে আসছেন মেসি ।

বার্সেলোনা থেকে পিএসজি, এরপর ইন্টার মায়ামি— মেসির ফ্রি-কিকের মায়াবী ছোঁয়ায় উল্লসিত, উচ্ছ্বসিত হয়েছে সবাই। ফ্রি-কিক থেকে পাওয়া গোলের পর মেসি যেমন উড়েছেন, উন্মত্ততায় মেতেছে তাঁর দলও। 

মজার ব্যাপার হলো, ফ্রি কিকে মেসির এমন সাফল্যের নেপথ্যের নায়ক নাকি ডিয়েগো ম্যারাডোনা! ২০১০ বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন ম্যারাডোনা। সে সময়ই ফ্রি-কিক নিয়ে মেসিকে টিপস দিয়েছিলেন তিনি।

ফার্নান্দো সিগনোরিনি তখনকার সময়ের আর্জেন্টিনার ফিটনেস কোচ। মূলত তাঁর সামনেই ফ্রি-কিক নিয়ে আলাপ হয়েছিল এ দুই কিংবদন্তির। 

তো তাঁর ভাষ্যমতে, অনুশীলনে, মেসি ফ্রি-কিক প্র্যাক্টিস করতেন নিয়মিতই। কিন্তু একদিন তিনবার কিক মারলেও একটাও টার্গেটে ছিল না। এতে সে বেশ হতাশ হয়ে পড়ে। আর এ সময়ই ম্যারাডোনা উপস্থিত হন মুশকিল আসান হিসেবে।

ম্যারাডোনা মেসিকে, ফ্রি-কিক মারার সময় বল থেকে পা-টা দ্রুত সরিয়ে না নেওয়ার পরামর্শ দেন। আর এরপর থেকেই ফ্রি-কিকে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে শুরু করেন মেসি। একই সাথে, গোলরক্ষকদের মাথাব্যথারও কারণ হয়ে ওঠেন তিনি। 

এরপর থেকে মেসি নিজেও তাঁর ফ্রি-কিক নেওয়ার ধরন নিয়ে বেশ কিছু এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে নিজের ডান পায়েই সব ভর দিতেন তিনি। এখন সেই ভরটা ডান পা থেকে কমে গিয়ে বেশি হচ্ছে বাঁ পায়ে।

এছাড়া আগে ফ্রি-কিক নেওয়ার সময় ও পরে মেসির শরীরের উপরিভাগ বেঁকে যেত। যার ফলে কিক নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকতো না। কিন্তু এখন তিনি ফ্রি-কিক নেওয়ার সময় সোজা অবস্থায় থাকেন। আর এতেই মেসি পেয়েছেন ফ্রি-কিকে সাফল্য। 

ডালাসের বিপক্ষে ফ্রি-কিক থেকে পাওয়া গোলে এখন মেসির ফ্রি-কিক গোলসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ৬৩ তে। আর এতেই ফ্রি-কিক নিয়ে দীক্ষা পাওয়া ম্যারাডোনাকে ছাপিয়ে গেলেন তিনি। এই মুহূর্তে ফুটবল ইতিহাসে ফ্রি-কিক গোলের দিক দিয়ে মেসির অবস্থান ৬-এ। 

৭৭ গোল নিয়ে সবার উপরে রয়েছেন ব্রাজিলের জুনিনহো। তবে মেসি যেভাবে ফ্রি-কিক গোলকে আপন ভুবন বানিয়ে নিচ্ছেন, তাতে জুনিননহোকে ছাপিয়ে যাওয়া এখন তাঁর জন্য সময়ের ব্যাপারই মাত্র। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...