ভরা যৌবন অনন্ত হোক

লিটনের ব্যাটে যৌবন এখন, ভরা পূর্ণিমায় নদী যেমন হয়। সাদা পোশাক বলুন কিংবা রঙিন, চামড়ায় মোড়ানো ওই বলটার সাথে দারুণ ভাব জমেছে তাঁর ব্যাটের। বাইশ গজে নামলেই উইলোর আঁচরে তৈরি করেন নিদারুণ সব চিত্রকর্ম। ক্রিকেট বইয়ে যুক্ত হয় আরো একটি রঙিন পাতা। লিটন দাস বাইশ গজে একজন শিল্পী হয়ে উঠেন, লিটন একটা ফুল হয়ে ফোঁটেন।

টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই লিটন এখন অনবদ্য। যদিও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সময়টা ভালো যায়নি। তবে বিপিএলে আবারো ভরা পূর্ণিমার লিটন। গত এক বছরে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যানটার নাম লিটন। এই লিটন ব্যাট হাতে নামলে পুরো বিশ্বেরই সেরাদের একজন মনে হয় তাঁকে।

লিটনের উপর বাংলাদেশ দলের নির্ভরতাও বাড়ছে দিন দিন। হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটায় তাঁর ব্যর্থতা চাপে ফেলেছিল বাংলাদেশকে। এমনকি একটা ম্যাচ খারাপ খেলাতেই তাঁকে নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। লিটন এমন একজন ব্যাটসম্যান যিনি দুই ম্যাচ রান পেলেই দলে তাঁর জায়গা নিয়েও প্রশ্ন উঠে।

অথচ বাংলাদেশের শেষ ওয়ানডে সিরিজেও তাঁর সেঞ্চুরি আছে। হয়তো লিটনের থেকে প্রত্যাশাটা অনেক বেশি বলেই এমন হয়। তবে আজ সাগরিকায় সবার প্রত্যাশা মিটিয়েছেন এই ব্যাটসম্যান। বলগুলোকে আঁচড়ে ফেলেছেন গ্যালারির দুই তালায়। আজ আবার চেনা লিটন, সেই চেনা ব্যাটে, চেনা ঢঙে, চেনা নান্দনিকতায় অবিশ্বাস্য সৌন্দর্য। লিটনের এই একেকটা ইনিংস যেন ব্যাটসম্যানশিপের প্রতীক, ব্যাটসম্যানশিপের সংজ্ঞা।

চট্টগ্রামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেট আজ লিটনকে যেন আরো তাঁতিয়ে দিল। বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিন বোলিং আক্রমণকে রীতিমত বুড়ো আঙুল দেখালেন। রাশিদ খান, মুজিবুর রহমান, মোহাম্মদ নবির মত বোলারদের খেলেছেন ব্যাটের আলতো ছোঁয়ায়। তুলে নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি।

ইনিংসের ৪১ তম ওভার আর লিটনের ১০৭ তম বল। আফগান স্পিনার রাশিদ খানকে লং অফের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারলেন। আবারো চোখ জুড়ানো এক চারে, চোখের শান্তি দেয়া সেঞ্চুরি। আবারো লিটনের জবাব দেয়া, আবারো লিটন ক্লাসিক।

ওয়ানডেতে দ্রুত শুরু করতে মাঝেমাঝে উইকেট দিয়ে আসেন লিটন। তবে আজ সেই ভুল করেননি। আরেক ওপেনার তামিম ইকবাল আজও দ্রুত ফিরে গিয়েছেন। তবে লিটন শুরুতে সময় নিয়েছেন আজ। কোনরকম ভুল করেননি, আগফান বোলারদেরও কোন সুযোগ দেননি। নিজের ইনিংসটা ধীরে ধীরে গড়েছেন। হাফ সেঞ্চুরি করতে খেলেছিলেন ৬৫ বল। তবে এরপর সেঞ্চুরি ছুঁতে খরচ করেছেন মাত্র ৪২ বল।

সেঞ্চুরি পরে তাঁর ব্যাট যেন তরবারি হয়ে উঠে। চার-ছয়ে আফগান ব্যাটারদের দিশেহারা করে ফেলেন। শেষপর্যন্ত থামেন ১২৬ বলে ১৩৬ রানের ইনিংস খেলে। ১৬ টি চার ও ২ টি ছয়ে সাজিয়েছেন এই ইনিংস। ব্যাটিং করেছেন ১০৭.৯৩ স্ট্রাইকরেটে। এছাড়া মুশফিকের সাথে গড়েছেন ১৮৬ বলে ২০২ রানের বিশাল এক জুটি।

মজার ব্যাপার হচ্ছে লিটনে ইনিংস বড় করতে পারার ক্ষমতা। ওয়ানডে ফরম্যাটে লিটন হাফ সেঞ্চুরি করা মানেই যেন সেঞ্চুরি ছোবেন। এখন পর্যন্ত ৮ বার পঞ্চাশ উর্ধ্বো ইনিংস খেলেছেন। এর পাঁচটিকেই সেঞ্চুরিতে পরিণত করেছেন। আরেকটি ইনিংসে অপরাজিত ছিলেন ৯৪ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, বিশ্বকাপের মঞ্চে।

এছাড়া বাংলাদেশের হয়ে শেষ ১০ ইনিংসে তাঁর ব্যাটিং ছিল অবিশ্বাস্য। সেটা টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলেই। আজকের ইনিংসটি সহ গত ১০ আন্তর্জাতিক ইনিংসে লিটন করেছেন ৫৫৭ রান। ব্যাটিং করেছেন ৫৫.৭ গড়ে। তবুও লিটনকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, আর লিটনও প্রতিনিয়ত জবাব গুলো বাইশ গজে এসেই দিচ্ছেন। লিটনের এই জবাব দেয়া অব্যাহত থাকুক।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link