ফ্লাইং স্টার্ট, দুই যুগের পাপমোচন

ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ব্যাকফুটে ছিল বাংলাদেশই। মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে হাজির সাকিব আল হাসানের ইনজুরি। নিয়মিত অধিনায়ককে ছাড়াই বাংলাদেশ খেলতে নেমেছে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে। বাংলাদেশের বড্ড বেশি প্রয়োজন ছিল একটা ‘ফ্লাইং স্টার্ট’।

সেই দায়িত্বটা লিটন দাস আর তানজিদ হাসান তামিমকেই নিতে হতো। কেননা টসে জিতে আগে ব্যাটিং করবার সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশের সকল চাপ দূরে ঠেলে দেওয়ার কোন চিত্র অবশ্য দেখা মেলেনি লিটন-তামিম জুটির শুরুর দিকে।

একটু রয়েসয়ে খেলেছেন দুই ব্যাটারই। নিজেদেরকে পিচের সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন দু’জনে মিলে। দেখে শুনে খেলেছেন জাসপ্রিত বুমরাহ আর মোহাম্মদ সিরাজের করা এক একটি বল। তাইতো উদ্বোধনী জুটির প্রথম ৫ ওভারে ছিল মাত্র ১০ রান। তবে দৃশ্যপট বদলে যেতে সময় নেয়নি। মুহূর্তের মধ্যেই বাংলাদেশের চাপ গিয়ে ঘাটি গাড়ে ভারতীয় বোলারদের কাঁধে।

মোহাম্মদ সিরাজের তৃতীয় ওভারে লিটন দাস জোড়া বাউন্ডারি মেরে আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন। সেই ধারা অব্যাহত রাখেন তরুণ তানজিদ হাসান তামিম। তাতে পাওয়ার প্লে শেষ হতে হতে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৬৩ রান। প্রথম পাওয়ার প্লের শেষের পাঁচ ওভারে আসে ৫৩ রান। ওভারপ্রতি ১০ এর বেশি রান নিয়েছেন তামিম-লিটন।

পথিমধ্যে তানজিদ হাসান তামিম এগিয়ে যান বিশ্বকাপে নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দিকে। একটা সময় তরুণ এই ব্যাটার পেয়েও যান হাফ সেঞ্চুরির দেখা। তবে তখনও আসলে দায়িত্ব শেষ হয়না দুই উদ্বোধনী ব্যাটারের। তারা দু’জনে তাই সন্তুষ্টির ঢেঁকুর তোলেননি। নিজেদের ব্যাট চালিয়ে দলীয় সংগ্রহ বাড়িয়ে নিতে থাকে।

তাতে ২৪ বছর আগের রেকর্ড ভেঙে ফেলেন লিটন ও তামিম। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি থেকে এসেছিল সর্বোচ্চ ৬৯ রান। মেহরাব হোসেন ও শাহরিয়ার হোসেনের গড়া সেই জুটিই এতদিন অবধি ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। সেই ম্যাচ অবশ্য বাংলাদেশ জিতে নিয়েছিল ৬২ রানের ব্যবধানে।

সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ডই গড়ল তামিম-লিটন জুটি। কুলদ্বীপ যাদবের বলে যখন এলবিডব্লিউ আউট হন তানজিদ তখন উদ্বোধনী জুটি থেকে এসেছে ৯৩ রান। এটাই এখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটি। তাছাড়া এই বছর ওয়ানডে ক্রিকেটে এটি বাংলাদেশের ওপেনিং পার্টনারশীপ থেকে আসা তৃতীয় সর্বোচ্চ রান।

তামিম-লিটনের এই জুটিই আসলে বাংলাদেশকে ভরসা জুগিয়েছে। এখন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে অপরাজিত এক দলের বিপক্ষে লড়াই করবার সাহসটুকু অর্জন করা গেছে। এখান থেকে বাকি কাজগুলো দলের বাকি খেলোয়াড়দেরই করতে হবে। তবেই মিলবে বহুল আকাঙ্ক্ষিত জয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link