গত বছরের মার্চে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের সাথে সিরিজে সর্বশেষ হেসেছিল লিটন দাসের ব্যাট। তিন ম্যাচের ঐ সিরিজের প্রথম ও শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। এর মধ্যে একটা ছিল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। তখন থেকে তাঁর ওপর প্রত্যাশার চাপও বেড়ে যায়। এরপর থেকেই নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন লিটন। দীর্ঘ রান খরার পর অবশেষে সেই জিম্বাবুয়েকে পেয়েই নিজের ছন্দ খুঁজে পেলেন এই ওপেনার।
স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১১৪ বলে ১০২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন লিটন দাস। লিটনের অন্য যে কোন ইনিংসের থেকে এই ইনিংসটি আলাদা হয়েই থাকবে। আজকের আগের আট ম্যাচে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে এসেছিল মাত্র ১০১ রান। তাই নাঈম শেখের জায়গাতে তাকে একাদশে দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
তাই লিটন দাসের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান দিয়ে তাদের সিদ্বান্তানের যথার্থ প্রমাণ করার। হয়তো এই জন্যই শুরু থেকে সাবধানী ব্যাটিং করে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় লিটনের উপর বাড়তি একটা দায়িত্বও এসে যায়।
ইনিংসের প্রথম দুই ওভার টানা মেডেন যাওয়ার পর তৃতীয় ওভারে ফিরে যান তামিম ইকবাল। এরপর ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে না পেরে সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ মিঠুন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ফিরে গেলে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ। বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশের ভরসা হয়ে তখন উইকেটে ছিলেন লিটন।
দলের বিপর্যয়ে যেমন জুটি গড়া ছিল সময়ের দাবি তেমনি রানের চাকা সচল রাখাটাও ছিল জরুরি। এই দুই মেলাতে গিয়েই লিটন কখনো রানের জন্য সংগ্রাম করলেন আবার দলের প্রয়োজনেই নিজকে একদম গুটিয়ে নিলেন। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ৯৩ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে নেওয়ার পথে নিজেও তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।
৭৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি করার পরেই খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন এই ওপেনার। পরের ৫০ রান আসে মাত্র ৩২ বলে। তবে ক্যারিয়ারে চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর আর বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি লিটন দাস। রানের গতি বাড়াতে গিয়ে রিচার্ড এনগারাভাকে ছয় মারার চেষ্টায় সীমানায় ধরা পরে বিদায় নেন তিনি।
১১৪ বলে ১০২ রানের ইনিংসে কোন ছয় না থাকলেও ছিল আটটি চার। লিটন যখন ফিরে যান তখন ৪২ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০৯ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। লিটন ফিরে যাওয়ার পর আফিফ হোসেন ধ্রুব ৩৫ বলে ৪৫ ও মেহেদী হাসান মিরাজের ২৫ বলে ২৬ রানে ভর করে জিম্বাবুয়েকে ২৭৬ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ।
লিটন দাসের একাদশে ফিরেই সেঞ্চরি পাওয়াটা যেমন প্রশংসনীয় – তেমনি তাঁর একাদশে ফেরাটাও প্রশ্নবিদ্ধ। লিটনের অফ ফর্মের জের ধরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে একাদশে এসেছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। কিন্তু, এক ম্যাচের ব্যর্থতার পরই তিনি একাদশের বাইরে। কেন? এই প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। লিটন দাস সেঞ্চুরি করে ফেলায় প্রশ্নের উত্তরটা যে অজানাই থাকবে – সেটা বলে না দিলেও চলে।