বিকেএসপির কঠিন উইকেট। দল বিপাকে। শুরুতেই লিটন, ফজলে রাব্বিদের উইকেট হারিয়ে নর্থ জোন তখন ধুকছে। সেই সময় দলের হাল ধরলেন শাহাদাত হোসেন দীপু। উইকেট, মোমেন্টাম, ম্যাচের পরিস্থিতি সবকিছুই ছিল তাঁর প্রতিকূলে। তবে ম্যাচ শেষে এই উদযাপনটা দীপু করতে পেরেছেন স্রোতের বিপরীতে লড়াই করেই।
নর্থ জোনের তারকায় ঠাসা ব্যাটিং লাইন আপ। লিটন দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের ভিড়ে তাঁকে নিয়ে আলোচনাটা খানিকটা কম। এছাড়া দুই বন্ধু আকবর আলী, শামীম হোসেনরাও আছেন এই দলেই। তবে সবাইকে ছাপিয়ে আলোটা কেড়ে নিলেন দীপুই। সেঞ্চুরির পর দীপুর এই হাসিটা, এই উদযাপনটাই বলে দেয় কাজটা কতটা কঠিন ছিল।
কঠিন কাজটা ভীষণ সহজ ভাবে করেছেন একবার সেট হয়ে যাবার পর। যে উইকেটে ব্যাটাররা ভুগছে সেই উইকেটেই দীপু হেসে খেলে রান করছেন। আরেকপ্রান্তে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সাথে দারুণ এক জুটি গড়ে তুলেছেন। ৪০ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলা নর্থ জোনের জয় নিশ্চিত করেছেন।
দিনশেষে দীপুর এই ব্যাটিং মন কেড়েছে দেশের সবচেয়ে স্টাইলিশ ব্যাটার লিটন দাসের। কেন লিটন জানেন এই উইকেটেও দীপুর ইনিংস চোখের জন্য কতটা আরামদায়ক ছিল। ছোট ভাইয়ের এমন ইনিংস দেখে ম্যাচ শেষে দীপুকে নিজের একটা ব্যাটও উপহার দেন লিটন দাস।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় ভারতের বিপক্ষে ইনিংসের পর লিটনকে ব্যাট উপহার দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। সেই লেগেসিটাই এবার বিসিএলে টেনে আনলেন লিটন দাস। ম্যাচ শেষে ড্রেসিং রুমে নিজের ব্যাট তুলে দেন দীপুর হাতে। সেই ব্যাট পেয়ে তাই ভীষণ উচ্ছ্বসিত দীপুও।
লিটনের কাছ থেকে ব্যাট পেয়ে খেলা ৭১ কে দীপু বলছিলেন, ‘উনাদের মত প্লেয়ারদের কাছ থেকে কিছু পেলে তো ভীষণ ভালো লাগে। লিটন ভাইয়ের কাছ থেকে ব্যাট পেয়েও খুব ভালো লাগছে। তাও আমার ব্যাটিং দেখে উনি আমাকে দিল।’
ব্যাটসম্যান দীপু লিটনকে মুগ্ধ করলেও, মুগ্ধ করতে পারেননি বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের। অবাক করা ব্যাপার হল গতকাল বিপিএলের ড্রাফট থেকে তাঁকে দলে ভেড়ায়নি কোন দলই। টেকনিক্যালি এত সুন্দর ও সম্ভাবনাময় এই ব্যাটার বিপিএলে দল না পাওয়াটা তাই হতাশাজনকই।
অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের এই ব্যাটার প্রতিনিয়তই নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। হাই পারফর্মেন্স ইউনিটে থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। এবছর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও রানের ফোয়ারা খুলে বসেছিলেন এই ব্যাটার। তারপর বাংলাদেশ ‘এ’ দলেও ডাক পান তিনি।
তবুও এবারের বিপিএলে তাঁকে দলে ভেড়ায়নি কোন দল। দল না পাওয়ায় একটু কী হতাশ তিনি? সেই হতাশাই থেকেই কী ব্যাট হাতে এমন জবাব দিলেন। এমন প্রশ্নে দীপু বলেন, ‘না, হতাশ কেন হব। যা হবার হবে। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে এটাই বিশ্বাস করি সবসময়।’
বিপিএলে দল না পেলেও দীপুর এমন ইনিংস গুলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আনন্দের। সম্ভাবনাময়, তরুণ এই ক্রিকেটাররা যখন নিজেদের প্রমাণ করেন তখন আসলে দেশের ক্রিকেটের পাইপলাইনটাই সমৃদ্ধ হয়। দীপুরাই তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যত। তখন নিশ্চয়ই বিপিএলের দলগুলো তাঁকে দলে ভেড়াতে লড়াই করবে।