নতুন ভ্যান ডাইকের খোঁজে লিভারপুল

এবারের মৌসুমে সময়টা মোটেই ভালো কাটছে না ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুলের। লিগে সাত নম্বরে থাকার পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও একপ্রকার বিদায়ঘন্টা বেজে গেছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৫-২ গোলে হারার পর ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখছেন না পাঁড় লিভারপুল ভক্তও। লিভারপুলের দুর্দশার মূলে থাকা রক্ষণভাগ মেরামতের উদ্দেশ্যেই কিনা নতুন ভ্যান ডাইকের খোঁজে আছে লিভারপুল ম্যানেজমেন্ট। 

মৌসুম শুরুর আগে লিভারপুলকে ভাবা হচ্ছিল এবারের প্রিমিয়ার লিগে শিরোপার অন্যতম দাবিদার। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, লিভারপুলের শিরোপার স্বপ্ন তত ফিকে হয়েছে। মিডফিল্ডে দুর্বলতা থাকলেও অলরেডদের ডুবিয়েছে তাঁদের রক্ষণভাগ।

দুই সেন্টারব্যাক জো গোমেজ এবং জোয়েল মাতিপ কখনোই ভরসার পাত্র হয়ে উঠতে পারেননি। অন্যদিকে, ভ্যান ডাইকের ফর্মও এই মৌসুমে উঠানামা করেছে নিয়মিত। বহু আশা নিয়ে আরবি লাইপজিগ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল ইব্রাহিম কোনাটেকে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই ইনজুরিতে পড়ে তিনি ছিটকে গেছেন গোটা মৌসুমের জন্য। 

গত মৌসুমের সাথে তুলনা করলেই লিভারপুল রক্ষণের নাজুক পরিস্থিতি টের পাওয়া যায়। গতবার যেখানে গোটা মৌসুমে ২৮ গোল হজম করেছিল অলরেডরা, সেখানে এবার ২৩ ম্যাচেই ২৮ গোল হজম করেছে দলটি। আট ম্যাচে হজম করতে হয়েছে তিন বা ততোধিক গোল।

লিগে ক্লিনশিট রাখতে পেরেছে মাত্র আট ম্যাচে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোতে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৫-২ গোলে হারের জন্যও দায়ী রক্ষণভাগের দুর্বলতা। ম্যাচের শুরুতে ২-০ গোলে এগিয়ে গেলেও সেন্টারব্যাক এবং গোলরক্ষকের হাস্যকর সব ভুলে হজম করতে হয়েছে পাঁচ গোল। 

লিভারপুলের দুই সেন্টারব্যাক জো গোমেজ এবং জোয়েল মাতিপের সমস্যাটা খানিকটা একই ধরনের। দুজনেই নিজেদের দিনে বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার। কিন্তু তাঁদের খেলায় ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট, এক ম্যাচে ভালো খেলেন তো পরের পাঁচ ম্যাচে খুঁজেই পাওয়া যায় না। ফরাসি সেন্টারব্যাক ইব্রাহিম কোনাটের পরিস্থিতি আবার খানিকটা আলাদা।

তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন না উঠলেও, ফিটনেসজনিত সমস্যায় তিনি মাঠে নামতে পারছেন কই! এবারের মৌসুমে একাদশে ছিলেন মাত্র চার ম্যাচে। হ্যামস্ট্রিং আর হাঁটুর ইনজুরিতে তাঁকে হাসপাতালেই কাটাতে হয়েছে বেশিরভাগ সময়। অন্যদিকে, ক্লপের দলের তারকা ডিফেন্ডার ভ্যান ডাইকের সময়টাও ভালো যাচ্ছে না এবারের মৌসুমে। অনেক ম্যাচেই প্রতিপক্ষের আক্রমণের সামনে অসহায় লেগেছে ডাচ এই ডিফেন্ডারকে। 

২০১৮ সালে ভ্যান ডাইককে দলে ভেড়ানোর পরেই বদলে গিয়েছিল লিভারপুল রক্ষণের চেহারা। লিগ শিরোপা তো বটেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাও তাঁরা জিতে নিয়েছিল এই সেন্টারব্যাকে ভর করে। আগামী মৌসুমে তাই রক্ষণে নতুন মুখ আনতে মরিয়া টিম ম্যানেজমেন্ট। তাঁদের পছন্দের তালিকার শুরুতেই আছেন দুই পর্তুগিজ তরুণ প্রতিভা – বেনফিকার আন্তোনিও সিলভা এবং স্পোর্টিং সিপির গনসালো ইনাসিও। দুজনেরই বয়স কম, বল পায়ে সাবলীল এবং শারিরিকভাবে বেশ শক্তিশালী গড়নের। দুজনেরই আগামী দলবদলে ক্লাব ছাড়ার জোর গুঞ্জন রয়েছে। 

এছাড়া চেলসি থেকে ব্রাইটনে লোনে থাকা ২০ বছর বয়সী লেভি কলওয়েলের উপরও নজর রাখছে চেলসি বোর্ড। ব্লুজদের হয়ে আগামী মৌসুমে নিয়মিত মাঠে নামার নিশ্চয়তা না পেলে ক্লাব ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন ইংলিশ এই সেন্টারব্যাক। এছাড়া বিশ্বকাপে আলো ছড়ানো মরক্কো জাতীয় দলের সেন্টারব্যাক নগুয়েফ আগুয়ার্ডের প্রতিও আগ্রহ আছে অলরেডদের।

তবে লিভারপুল ফ্যানরা খুব করে চাইবেন আরবি লাইপজিগের ক্রোয়েশিয়ান সেন্টারব্যাক জসকো গিভার্দিওলকে দলে ভেড়াতে। ২১ বছর বয়সী এই সেন্টারব্যাক বর্তমানে বিশ্বের সেরাদের একজন। যদিও তাঁকে দলে ভেড়ানো মোটেই সহজ হবে না তাঁদের জন্য। গিভার্দিওলের প্রতি নজর আছে রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি, পিএসজির মতো দলগুলোর। 

লিভারপুল ম্যানেজমেন্ট জানে রক্ষণে একটিমাত্র সাইনিং বদলে দিতে পারে গোটা দলের চেহারা। সে কারণেই কিনা নতুন ভ্যান ডাইকের খোঁজে মরিয়া হয়ে উঠেছে অলরেডরা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link