লং লিভ দ্য কিং

তাঁকে সরানো হয়েছে নেতৃত্ব থেকে। বলাবলি হচ্ছিল, একটা ফরম্যাটই ছেড়ে দেওয়া উচিৎ বিরাট কোহলির। কেউ কেউ তো তাঁকে একেবারেই থেমে যেতে বলেছিলেন।

কিন্তু, তিনি থামেননি। ছাড়েননি কোনো কিছুই। তিনি ছুটেছেন আপন গতিতে। বিরাট কোহলির সেই গতি পথের নিষ্পলক দর্শক করেছেন সবাইকে। বারবার তিনি তাঁর ব্যাট দিয়ে বলতে চেয়েছেন, আধুনিক কালে ক্রিকেটটা এভাবেই খেলতে হয়।

এই পথেও কোহলির পথে অনেক বাঁধা এসেছে। কখনও ড্রেসিংরুমের ঘোলাটে পরিস্থিতির খবর রটেছে মিডিয়ায়। কখনও বা বিরাটের ব্যাট তাঁর কথা শোনেনি। কিংবা বিরাট নিজেও ক্লান্ত হয়েছেন কখনও।

কিন্তু, শেষ অবধি জয় বলুন কিংবা শ্রেষ্ঠত্ব বলুন – সবই হাসিল করে ফেলেছেন বিরাট। রাজা বলে তাঁকে বিরূপ চিত্র দেখতে হবে না, পারিপার্শ্বিকতার কাঠিন্য সামলাতে হবে না – সেই দিব্যি কেই বা দিয়েছে।

বিরাটও নিজেকে বদলেছেন। ব্যাটিং স্ট্যান্স, কখনও বা শট খেলার জায়গা – না হলে কি আর টানা চারটা বিশ্বকাপ দলের সেরা পারফরমারদের একজন হওয়া যায়। টিকে থাকতে বিরাটের এই লড়াইটা, এই প্যাশনটাই তো তাঁকে রাজা বানিয়েছে।

লম্বা সময় সেঞ্চুরি পাচ্ছিলেন না। সে নিয়ে শোরগোল হচ্ছিল, বলা হচ্ছিল – ‘দ্য কিং ইজ ফিনিশড’। আড়াল থেকে মুচকি হেসে বিরাট বারবারই জানিয়ে দিচ্ছিলেন – ‘লং লিভ দ্য কিং’।

সত্যি, রাজার সেই রাজাধিকারের কোনো শেষ নেই। সেঞ্চুরি পাচ্ছিলেন বলে যে সমালোচনা উঠেছিল – সেই বিরাটই দু:সময় কাটিয়ে সেঞ্চুরির বন্যা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন একটা সময়।

কেবল বিশ্বকাপের আগের সময় নয়, খোদ বিশ্বকাপেও কয়েকবার নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে ফিরেছেন। তাতে কি, দলের জয়ে যে রান কাজে লাগে সেটাই তো আসল রাজা। সেঞ্চুরির অচলায়তন ভেঙেছেন বিরাট, এবার কেবল বিশ্বকাপ জয়ের পালা।

বিশ্বকাপ জয়টাও বিরাটের জন্য নতুন কিছু নয়। ২০১১ সালে নিজের প্রথম বিশ্বকাপটাই নিজের করেছিলেন। এবার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। শেষটাও কি একটা বিশ্ব শিরোপা দিয়ে রাঙাতে পারবেন বিরাট? সময়ই এর যথার্থ উত্তর দেবে।

আপাতত শুধু সবার জন্য সময়টা উপভোগের। বিরাট ভক্ত কিংবা বিরাট-সমালোচক – সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছেন সাদা বলের ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা ব্যাটারকে। আর তিনি যত পুরনো হচ্ছেন, ততই মাদকতা বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

এই মাদকতার মধ্যে নিত্য নতুন রেকর্ডও গড়ে ফেলছেন। ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে এক বিশ্বকাপে সাতটি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেললেন। নাম লেখালেন ২০০৩ বিশ্বকাপের শচীন টেন্ডুলকার ও ২০১৯ বিশ্বকাপের সাকিব আল হাসানের পাশে।

২০০৩ সালে শচীনের সেই তাণ্ডব নৃত্যর পরও বিশ্বকাপ শিরোপা পায়নি ভারত। এবার কি সেই আক্ষেপটা কিছুটা কমিয়ে দিতে পারবেন? না পারলেও, বিরাট রাজার আপন দেশে তাঁর রাজত্ব আগেই অমরত্ব লাভ করেছে।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link