সত্যিকারের এক সব্যসাচী

প্রায় ২০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ববি মুর, জর্জ বেস্টদের সময় থেকে শুরু করে খেলেছেন লুইস ফিগোদের সময় পর্যন্ত। তবে শুধু এই সময়সীমা দিয়ে আপনি তাঁর বিশালত্বটা ঠিক বুঝতে পারবেন না। তিনি ছিলেন সর্বকালের সেরা বক্স টু বক্স মিডফিল্ডারদের একজন। মাঠে দলকে নেতৃত্ব দেয়া, প্রতিপক্ষের পরিকল্পিত আক্রমণ রুখে দেয়া আবার সুযোগ বুঝে আক্রমণ করে বিপক্ষের রক্ষণদুর্গ ভেঙে দেয়া সবই করতেন তিনি একা।

একজন ফুটবলার তাঁর দেশের হয়ে খেলেছেন পাঁচটি বিশ্বকাপ। তাঁর মধ্যে একটিতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে করেছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।

প্রায় ২০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ববি মুর, জর্জ বেস্টদের সময় থেকে শুরু করে খেলেছেন লুইস ফিগোদের সময় পর্যন্ত। তবে শুধু এই সময়সীমা দিয়ে আপনি তাঁর বিশালত্বটা ঠিক বুঝতে পারবেন না। তিনি ছিলেন সর্বকালের সেরা বক্স টু বক্স মিডফিল্ডারদের একজন। মাঠে দলকে নেতৃত্ব দেয়া, প্রতিপক্ষের পরিকল্পিত আক্রমণ রুখে দেয়া আবার সুযোগ বুঝে আক্রমণ করে বিপক্ষের রক্ষণদুর্গ ভেঙে দেয়া সবই করতেন তিনি একা। পুরো মাঠে তাঁর অবাধ বিচরণ তাঁকে নিয়ে গেছে সর্বকালের সেরাদের কাতারে।

তিনি জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক, যিনি ডিফেন্সে থাকলে দিয়াগো মারাডোনারও পাঁ কাপতো, তিনিই লোথার ম্যাথিউস।

গল্পের শুরুটা হয়েছিল ব্যাভারিয়ার একটি ছোট্ট শহর থেকে। যেখানে ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহন করেন তিনি। তবে তাঁর ফুটবল যাত্রা শুরু হয় সেখান থেকে ১৫ কি.মি. দূরের শহর হার্জোগিনাওরাচ থেকে। সেখানে ম্যাথিউসের বাবা পুমার একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। তবে ম্যাজিকটা ঠিক তখন হয় যখন বুরোশিয়া মুনশেনগ্লাডবাখ ১৮ বছরের একটি অচেনা ছেলেকে প্রথমবারের মত তাঁদের দলে নিয়ে আসে। ১৯৭৯ সালে সেই ১৮ বছর বয়সেই পেশাদার ফুটবলে পাঁ দেন এই কিংবদন্তি। তারপর যত দিন গেছে লুথার ম্যাথিউস নিজেকে জার্মানির সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

১৯৮০ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই ডাক পান জার্মান দলে। তাঁর প্রথম ক্লাব গ্লাডবাখে চার সিজন কাটানোর পর ১৯৮৪ সালে তিনি পাড়ি জমান বায়ার্ন মিউনিথে। ততদিনে জার্মান দলেরও মধ্যমাঠের প্রাণ তিনি। জার্মানির এই নাম্বার টেন সবমিলিয়ে ছিলেন একজন কমপ্লিট ফুটবলার। দুই পায়েই সমানভাবে গোল করতে পারার ক্ষমতা,গতি ও ট্যাকনিক্যাল এবিলিটি সবই খুঁজে পাওয়া যাবে তাঁর মাঝে। সবমিলিয়ে ৮০ ও ৯০ এর পুরো দুই দশকে তিনি ছিলেন ধরা ছোঁয়ার বাইরের একজন। এমনকি দিয়াগো মারাডোনা তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছেন, ‘মাঠে আমার প্রতিদ্বন্দী হিসেবে ম্যাথিউসের মত কখনো কেউ ছিল না।’

তাঁর বিশ বছরের ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৫টি বিশ্বকাপ। যার মধ্যে তিনটিতে ফাইনাল খেলেছে জার্মানি।

১৯৮৬ সালে ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে রানার্স আপ হয় জার্মানরা। সেই জার্মানিই ১৯৯০ সালে লোথার ম্যাথিউসের নেতৃত্বে আগের আসরের প্রতিশোধ নেয়। ফাইনালে এবার আর্জেন্টিনাকে হারিয়েই হয়েছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়ান। তিনিই একমাত্র ফুটবলার যিনি ফিফা বিশ্বকাপে মোট ২৫টি ম্যাচ খেলেছেন।

ক্লাব ফুটবলেও তিনি ছিলেন অনন্য। ক্যারিয়ারে মোট ৭ বার হয়েছেন বুন্দেসলীগা চ্যাম্পিয়ন। ১৯৯৬ সালে হয়েছেন উয়েফা কাপ চ্যাম্পিয়নও। ১৯৯০ সালে ব্যালন ডি’অর পান এই ফুটবলার। তাছাড়া দুইবার জার্মানির ফুটবলার অব দ্যা ইয়্যার হন। ১৯৯১ সালে হন ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার।

ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হয়েও প্রায়শই তাঁকে প্রতিপক্ষের রক্ষনদুর্গ ভেঙে গোল করতে দেখা যেত। জার্মানির হয়ে করেছেন ২৩ টি গোল এবং ১৫০ এসিস্ট। ক্লাব ফুটবলে এই কিংবদন্তির নেটে বল জড়িয়েছেন ২০৪ বার।

তবে এইসবকিছু দিয়েও আসলে তাঁকে ঠিক পরিমাপ করা যায় না। একজন মিডফিল্ডার কী ভাবে প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দিতেন আবার তিনিই কী করে প্রতিপক্ষে নেটে বল জড়িয়ে দিতেন তা এক ইতিহাস। যে ইতিহাসের সাক্ষী ওই বিশ বছরের কোটি কোটি ফুটবল প্রেমী। যিনি এখনো জার্মান ফুটবলের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...