ইউনাইটেড একাডেমির সেরা গ্র্যাজুয়েট

১৯৫৮ সালের মিউনিখ বিমান দুর্ঘটনাতে মারা যাওয়া অনেকেই ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একাডেমি থেকে উঠে আসা খেলোওয়াড়। বাসবি বেবস থেকে ক্লাস অব ৯২, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নিজেদের একাডেমির খেলোওয়াড় দিয়ে কিভাবে বিশ্ব সেরা একাদশ গঠন করা যায় তা বহুবার দেখিয়েছে। স্যার ববি চার্লটন এবং রায়ান গিগসের মত কিংবদন্তিরা উঠে এসেছে রেড ডেভিলদের একাডেমি থেকে।

লিভারপুল কিংবদন্তি অ্যালেন হ্যানসেন ১৯৯৫ সালে টেলিভিশনের পর্দায় ফুটবল বিশ্লেষক হিসেবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সম্পর্কে বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে আপনি কিছু জিততে পারবেন না।’ তার এই উক্তি পরবর্তীতে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে তার কাছে যখন ক্লাস অব ৯২’র খেলোয়াড় দিয়ে গড়া দল একের পর এক শিরোপা জিততে থাকে।

১৯৫৮ সালের মিউনিখ বিমান দুর্ঘটনাতে মারা যাওয়া অনেকেই ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একাডেমি থেকে উঠে আসা খেলোওয়াড়। বাসবি বেবস থেকে ক্লাস অব ৯২, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নিজেদের একাডেমির খেলোওয়াড় দিয়ে কিভাবে বিশ্ব সেরা একাদশ গঠন করা যায় তা বহুবার দেখিয়েছে। স্যার ববি চার্লটন এবং রায়ান গিগসের মত কিংবদন্তিরা উঠে এসেছে রেড ডেভিলদের একাডেমি থেকে।

ক্লাস অব ৯২’র খেলোয়াড়েরা এখনো ফুটবল ক্লাবের মালিক, ম্যানেজার এবং ফুটবল বিশ্লেষক হিসেবে ফুটবল দুনিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। রেড ডেভিলদের একাদেমি থেকে উঠে আসা বাঘা বাঘা সব খেলোওয়াড়দের নিয়েই আজকের এই আলোচনা।

  • ডানকান এডওয়ার্ডস

সতীর্থ এবং প্রতিপক্ষ হিসেবে তাঁর সাথে যারাই খেলেছেন সবাই একটি ব্যাপারে একমত যে তিনি সর্বকালের সেরাদের একজন। মিউনিখ দুর্ঘটনায় প্রাপ্ত আঘাতের কারণে মারা যাওয়া এই শক্তিশালী খেলোয়াড় মাঠের যেকোনো জায়গায় খেলার ক্ষমতা রাখতেন।

  • স্যার ববি চার্লটন

ইউনাইটেডের হয়ে ১৯৬৮ সালে ইউরোপিয়ান কাপ জেতা এই খেলোয়াড় ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে জেতেন বিশ্বকাপ। ১৯৬৬ সালের ব্যালন ডি’অর টিও নিজের করে নেন ইংলিশ এই ফুটবলার। ইংল্যান্ডের হয়ে তারচেয়ে বেশি গোল আছে শুধুমাত্র হ্যারি কেন এবং ওয়েন রুনির।

  • নোবি স্টাইলস

খর্বাকৃতির শক্তিশালী ফুটবলার নোবি স্টাইলস ছিলেন ১৯৬৬’র বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যান্ড দলের সদস্য। বিশ্বকাপ এবং ১৯৬৮’র ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে পর্তুগাল কিংবদন্তি ইউসেবিওকে তিনি বোতল বন্দী করে রাখেন।

  • জর্জ বেস্ট

নিজের প্রজন্মের মধ্যে অন্যতম সেরা ফুটবলার ছিলেন তিনি। নায়কোচিত চেহারার অধিকারী বেস্ট প্রতিপক্ষ রক্ষণের জন্য ছিলেন এক আতঙ্কের নাম। উদ্দাম জীবনযাপন এবং অ্যালকোহল আসক্তির কারণে ফুটবল দুনিয়ার এই নক্ষত্র খুব দ্রুতই হারিয়ে যান। বিশ্বকাপ খেলতে পারলে হয়তো দিব্যি তাঁকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার মানাই যেত।

  • স্যামি ম্যাকিলরয়

৭০-এর দশকের এই খেলোয়াড় সমর্থকদের কাছে ছিলেন একজন কিংবদন্তি। নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে নিজের অভিষেক ম্যাচেই গোল করেন এই ফুটবলার। টমি ডকার্টির অধীনে ৭৫ সালে তৎকালীন দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠে আসা দলের সদস্য ছিলেন তিনি।

বাসবির দলে ভেড়ানো শেষ খেলোয়াড় ম্যাকিলরয় ১৯৭৭ সালে এফএ কাপ জিতেন যা শীর্ষ পর্যায়ে তার একমাত্র বড় শিরোপা।

  • নরমান হোয়াইটসাইড

প্রতিভাশালী এই ফুটবলার ১৯৮৫ সালে এভারটনের বিপক্ষে এফএ কাপে দুর্দান্ত এক গোল করেন। ৮২’র বিশ্বকাপ ফাইনালে ১৭ বছর ৪১ দিন বয়সে মাঠে নেমে পেলের সর্ব কনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের রেকর্ড ভেঙে দেন তিনি।

৮৩’র লিগ কাপ এবং এফএ কাপের ফাইনালে গোল করে ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এমন কীর্তি গড়েন। রেড ডেভিল সমর্থকরা ভেবেছিলেন, তাঁদের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় চলে এসেছেন। কিন্ত উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন এবং ইনজুরির কবলে পরে তার ওল্ড ট্রাফোর্ডে থাকার সময়তা সংকুচিত হয়ে আছে। ১৯৮৯ সাঁলে তাকে এভারটনের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

  • মার্ক হিউজ

৮৬ সালে ১৯ বছর বয়সী এই ফুটবলারকে কাতালান ক্লাবটি তৎকালীন ২.৭৫ ইউরোর বিনিময়ে দলে ভেড়ায়। ৮৮ সালে স্যার আলেক্স ফার্গুসন তাঁকে রেড ডেভিলদের দলে ভেড়ান এবং দ্রুতই সে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যে পরিণত হয়। বার্সেলোনা থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফেরার পর তাকে কিংবদন্তির তকমা দেওয়া হয়।

দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলোতে গোল করা এই খেলোওয়াড় দু’টি প্রিমিয়ার লিগ, তিনটি এফএ কাপ এবং একটি ইউরোপিয়ান সুপার কাপ জেতেন।

  • মার্ক রবিন্স

ওল্ড ট্রাফোর্ডে স্যার আলেক্স ফার্গুসনের অবস্থান যখন ভিষণ নড়বরে সেই সময় এফএ কাপের তৃতীয় রউন্ডে নটিংহাম ফরেস্টের বিপক্ষে তার গোলে জয় পায় রেড ডেভিলরা। ম্যাচটি হেরে গেলে চাকরি হারাতে হত স্যার আলেক্স ফারগুসনকে আর তাহলে আজকে আমরা যেই ইউনাইটেডকে চিনি তার ইতিহাস হত ভিন্ন।

দলে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে না পারলেও স্যার আলেক্স ফার্গুসন আমলের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিলেন খর্বাকৃতির এই আক্রমণভাগের এই ফুটবলার।

  • রায়ান গিগস

ইউনাইটেডের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে সবাই তাকেই চোখ বন্ধ করে ভোট দিবে। প্রিমিয়ার লিগ যুগে স্যার আলেক্স ফারগুসনের শিরোপা জয়ের ক্ষেত্রে তার ভুমিকা অনস্বীকার্য।

৪০ বছর বয়সে বুট জোড়া তুলে রাখার আগ পর্যন্ত রেড ডেভিলদের শিরোপা উৎসবের অন্যতম কারণ ছিলেন ওয়েলশ এই ফুটবলার। ১৯৯১ সালে অভিষেকের পর থেকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে তিনি যেসব রেকর্ড গড়েছেন তা ছাপিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নেই কারো।

  • ডেভিড বেকহ্যাম

ফুটবল খেলা যারা কখনো দেখেওনি তাঁদের কাছেও ডেভিড বেকহ্যাম অপরিচিত নন। ফুটবল দুনিয়া ছাপিয়ে বিশ্বের কাছে নিজেকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করান কিংবদন্তি এই ফুটবলার।

১৯৯৬ সালে উইম্বলডনের বিপক্ষে নিজ অর্ধ থেকে করা গোল, ২০০২ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে গ্রীসের বিপক্ষে ফ্রি কিক থেকে শেষ মুহূর্তে করা গোল যা ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করে এমন বহু রোমাঞ্চকর মুহূর্ত তিনি উপহার দিয়েছেন ফুটবল দর্শকদের।

নায়কোচিত চেহারা এবং বিখ্যাত ব্যান্ড স্পাইস গার্লসের সদস্য তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়ার কারণে গণমাধ্যমের আলোচনায় ছিলেন তিনি সবসময়। বর্তমানে মেজর লিগ সকার দল ইন্টার মায়ামির মালিক হিসেবে ফুটবল জগতে আজও নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন।

  • পল স্কোলস

পেপ গার্দিওলা তাঁকে মধ্যমাঠে তাঁর প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে আখ্যায়িত করেন। জিনেদিন জিদান তাঁকে স্পর্শাতীত বলে ঘোষণা দেন এবং বার্সার মাঝ মাঠের কাণ্ডারি জাভি তার সম্পর্কে বলেন বলেন তিনি হলেন পরিপূর্ণ মাঝ মাঠের খেলোয়াড়।

বাঘা বাঘা সব খেলোয়াড়েরা যার জন্য প্রসংশার ফুলঝুরি ঝরাচ্ছেন তিনি হলেন পল স্কোলস। নির্ভুলভাবে প্রতিপক্ষকে ফাকি দিয়ে সতীর্থের পায়ে বল চালান করতে পারতেন বলে তাকে ‘স্যাট ন্যাভ’ ডাক নাম দেওয়া হয়। রেড ডেভিলদের হয়ে লম্বা ক্যারিয়ারে ১১টি লিগ শিরোপা এবং একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা সহ আরো শিরোপা জেতেন তিনি।

  • গ্যারি নেভিল

ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে ৬০২ ম্যাচ খেলা রক্ষণভাগের এই খেলোওয়াড় ক্যারিয়ারে ১৭ টি ম্যাজর শিরোপা জিতেছেন। ক্লাস অফ ৯২’র অংশ এই ফুটবলারকে কোচরা উদাহরণ হিসেবে ব্যাবহার করেন তরুণ ফুটবলারদের অনুপ্রাণিত করতে।

প্রতিভার দিক দিয়ে দলের অন্য সদস্যদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকলেও কথোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের শত ভাগ কিভাবে দিতে হয় তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন।

  • ওয়েস ব্রাউন

ক্লাস অব ৯২’র পরবর্তী সময় একাডেমির থেকে উঠে আসা প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের সংখ্যা কমতে থাকে।কিন্তু ওয়েস ব্রাউনকে সবাই প্রথম থেকেই ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে চিহ্নিত করে। নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে না পারা রক্ষণভাগের এই খেলোয়াড় রেড ডেভিলদের ২০০৮ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

  • ড্যারেন ফ্লেচার

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একাডেমি থেকে উঠে আসা মাঝ মাঠের এই ফুটবলারের খেলার ধরনে অন্যান্যদের তুলনায় গ্ল্যামার কিছুটা কম থাকলেও তা ছিল বেশ কার্যকর। নিরবে নিভৃতে মাঠে নিজের দায়িত্ব পালন করতেন এই স্কটিশ ফুটবলার। ২০০৯ সালের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে লাল কার্ডের কারণে খেলতে পারেননি তিনি, যা রেড রেভিলদের পরাজয়ের অন্যতম কারণ মনে করা হয়।

  • জেরার্ড পিকে

২০০৪ সালে লা মাসিয়া থেকে জেরার্ড পিকেকে নিজেদের একাডেমিতে ভেড়ায় রেড ডেভিলরা। কিন্তু ২০০৮ এ কাতালানিয়ার ক্লাবটিতে ফেরত যান রক্ষণ ভাগের এই খেলোয়াড়।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, বার্সেলোনা এবং স্প্যানিশ জাতীয় দলের হয়ে ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপ, ইউরো, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লিগ শিরোপা সহ ২৬ টি মেজর ট্রফি জিতেন তিনি।

  • পল পগবা

একাডেমিতে থাকাকালীন সময় থেকেই সমর্থকদের নয়নের মণি ছিলেন প্রতিভাবান এই ফুটবলার কিন্তু স্যার আলেক্স ফার্গুসনকে ক্ষুব্ধ করে রেড ডেভিলদের ছেড়ে ইউভেন্তাসে যোগ দেন পগবা।

২০১৬ সালে আবার ওল্ড ট্রাফোর্ডে রেকর্ড ফি এর বিনিময়ে ফিরে আসেন। দু-একটা ঝলক ছাড়া বেশির ভাগ সময় সমর্থকদের হতাশ করেন পগবা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে এই গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বাজারে আবার ইউভেন্তাসে ফিরে গেছেন ফরাসী এই খেলোয়াড়।

  • রাভেল মরিসন

একাডেমিতে থাকাকালীন সময় তাকে তার প্রজমের সেরা খেলোয়াড় মনে করা হত তাকে। খোদ স্যার আলেক্স ফারগুসন বলেছিলেন তাঁর মত প্রতিভাবান খেলোয়াড় তিনি আগে দেখেননি। রেড ডেভিল সমর্থকরা প্রস্তুত ছিলেন রাভেল মরিসনের বিশ্ব মঞ্চে পদার্পণ এবং তা নিজের করে নেওয়ার জন্য।

কিন্তু হায়! একসময় পরবর্তী ইউনাইটেড সুপারস্টার তকমা পাওয়া এই মাঝ মাঠের খেলোওয়াড় ২৯ বছর বয়সে এখন খেলছেন এম এল এসের ডি সি ইউনাইটেডের হয়ে! ক্যারিয়ার জুড়ে নানান সমস্যায় জড়িয়ে নিজের প্রতিভার ছিটে ফোটাও দেখাতে পারেননি এই ইংলিশ ফুটবলার। রাভেল মরিসন তাই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং ইংল্যান্ড দলের সমর্থকদের কাছে এক হতাশার নাম হয়েই থাকবেন।

  • মার্কাস রাশফোর্ড

লুই ভ্যান গাল আমলে তার ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল একদম ভিডিও গেমসের মত।ইনজুরি জর্জরিত রেড ডেভিলদের আক্রমণভাগ সামলানোর দায়িত্ব পেয়ে প্রথম দুই ম্যাচে চার গোল করেন তিনি। সমর্থকদের মাঝে আলোড়নের সৃষ্টি হয়, একই বছর ইংল্যান্ড জাতীয় দলেই হয়ে অভিষেক ম্যাচেই গোলের খাতা খুলেন এই ফুটবলার।

ধাবমান গতিতে ক্যারিয়ার শুরু করা আক্রমণভাগের এই ফুটবলার শেষ কয়েক মৌসুম ধরেই যেন ঝিমিয়ে পরেছেন। ২৪ বছর বয়সী এই অমিত প্রতিভাধর ফুটবলারের সামনে এখনো সময় এবং সুযোগ দুটোই আছে নিজের প্রতিভাকে মেলে ধরবার জন্য।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...