চলছে অ্যাশেজে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মহারণ। সম্মানের এই লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত এগিয়ে অজিরাই। আগে ইংলিশদের কপালে চিন্তার রেখা কাটতো স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নাররা। তবে সেই তালিকায় নতুন যোগ হয়েছেন মার্নাশ লাবুশেন। অভিষেকের পর থেকেই আছেন উড়ন্ত ফর্মে। তাকে নিয়েই যেনো বিশেষ পরিকল্পনা থাকে প্রতিপক্ষের। তবে সবার প্ল্যান ভেস্তে দিয়ে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে চলেছেন এই অজি ব্যাটার।
গ্যাবায় সিরিজের প্রথম টেস্টেই খেলেছেন ৭৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। সেঞ্চুরির আক্ষেপটা তো ছিলোই! তবে সেই আক্ষেপ ঘুচালেন পরের টেস্টেই। অ্যাডিলেডে ডে নাইট টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন লাবুশেন। অবশ্য এই সেঞ্চুরি পেতে ভাগ্য কম সহায় হয়নি তাঁর। শুরু থেকেই সলিড ডিফেন্স করে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন উইকেটে। ব্রড, অ্যান্ডারসন, রবিনসনদের সব অস্ত্রই যেনো বিকল লাবুশেনের সামনে।
দিনের শেষভাগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে। অবশ্য এর জন্য ক্রেডিটটা দিতে হয় ইংলিশ উইকেটকিপার জশ বাটলারকে। লাবুশেনের ব্যক্তিগত ২১ রানেই উইকেটের পিছনে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন বাটলার। সেখান থেকে ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির কাছে পৌঁছে যান লাবুশেন। দিনের একদম শেষ সময়ে জেমস অ্যান্ডারসনের বলে এজ হয়ে আবারো সুযোগ হয়ে লাবুশেনের উইকেট নেওয়ার। এবারও উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ ফেলে দিলেন বাটলার!
অবশ্য দিনের শুরুতে মার্কাস হ্যারিসের দুর্দান্ত এক ক্যাচ লুফে নিয়ে পেয়েছিলেন সুপারম্যানের আখ্যা। আর তারপরই লাবুশেনের দুই ক্যাচ ফেলে রাতারাতি বনে গেলেন ভিলেন! বাটলার কৃপাতেই কি’না শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ৯৫ রানে অপরাজিত থেকে দিনশেষ করে লাবুশেন। দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই তুলে নেন ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি। এরপর ১০২ রানে ওলি রবিনসনের বলে বাটলারকে ক্যাচ দিয়ে আউট লাবুশেন। কিন্তু না! এবারও ভাগ্য সহায় হলো না ইংলিশদের! আম্পায়ার রিভিউতে দেখা গেলো নো বল!
তিনবার সুযোগ পাওয়া লাবুশেন ফিরলেন ১০৩ রানে রবিনসনের হাতেই! ব্যক্তিগত ১০৩ রানে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে ফিরেন লাবুশেন। রিভিউ নিলেও এবার শেষ রক্ষা হয়নি এই অজি ব্যাটারের। আগের দিন সেঞ্চুরি থেকে ৫ রানের আক্ষেপ নিয়ে ৯৫ রানে ওয়ার্নার ফিরলেও সেঞ্চুরি তুলে নেন লাবুশেন।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নজরকাঁড়া ব্যাটিংয়ে বনে গেছেন টপ অর্ডারে অজিদের নির্ভরযোগ্য ব্যাটার। উঠে এসেছেন টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের দুইয়ে। এই ফর্ম ধরে রাখলে সম্ভাবনা আছে অ্যাশেজ শেষে প্রথমবারের মতো উঠে আসবেন র্যাঙ্কিংয়ের একে! ১০ বছর বয়সে আফ্রিকা থেকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে অজিদের ডেরায় আসা ইংরেজি না জানা ছোট্ট বালকটি এখন টেস্টে অজিদের অন্যতম ভরসা। পরিশ্রম, ধৈর্য্য আর সাধনা যে নিজের অবস্থানকে সময়ের ব্যবধানে পালটে দিতে পারে ক্রিকেট বইতে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ লাবুশেন!