আইপিএল, মিথ-সত্যি/মিথ্যা

প্রতি বছরের আইপিএলে অনেক ঘটনা ঘটে। তাঁর মধ্যে কিছু ঘটনা খবরের শিরোনাম হয়। শিরোনাম হওয়া কিছু ঘটনা আবার ক্রিকেট সমর্থকদের মনে গেথে আছে। এইসব কিছু ঘটনার সঠিকটা তো ক্রিকেটপ্রমীরা জানেনই না। বরঞ্চ তাঁরা সঠিকটা জানার পরিবর্তে ভুল তথ্য জেনে বসে আছেন।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এর যাত্রা ২০০৮ সালে। এরপর থেকে দিনের পর দিন আইপিএলের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। এর সাথে সাথে এই টুর্নামেন্ট সম্পর্কে বিভিন্ন ঘটনা কল্প কাহিনীর মত ভুল তথ্য হিসেবে ছড়িয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

প্রতি বছরের আইপিএলে অনেক ঘটনা ঘটে। তাঁর মধ্যে কিছু ঘটনা খবরের শিরোনাম হয়। শিরোনাম হওয়া কিছু ঘটনা আবার ক্রিকেট সমর্থকদের মনে গেথে আছে। এইসব কিছু ঘটনার সঠিকটা তো ক্রিকেটপ্রমীরা জানেনই না। বরঞ্চ তাঁরা সঠিকটা জানার পরিবর্তে ভুল তথ্য জেনে বসে আছেন।

আইপিএলে ভুল ভাবনার পরিমান নেহাৎ কম নয়। সমর্থক হিসেবে এই রকম অনেক ভুল হয়। আইপিএলের এই রকম অনেক কল্পকাহিনী আছে যা সমর্থকরা সঠিক ভেবে বসে আছেন। আর সেই সব কল্পকাহিনী নিয়ে আজকের এই আয়োজন।

  • চেন্নাই এবং রাজস্থান ম্যাচ ফিক্সিংয়ের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলো

২০১৩ সালকে ভুলে যেতে চাইবে চেন্নাই সুপার কিংস এবং রাজস্থান রয়্যালস সমর্থকরা। কারণ এই মৌসুমেই তাঁদের ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ঘটনা ঘটেছিলো। ২০১৫ সালে রাজস্থান এবং চেন্নাইকে দুই মৌসুমের জন্য আইপিএলে নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ ছিলো এই দুই দলের শীর্ষ কর্মকর্তা গুরুনাথ মায়াপ্পন এবং রাজ কুন্দ্র ২০১৩ সালে বেটিং এবং স্পট ফিক্সিংয়ের সাথে জড়িত ছিলো।

চেন্নাই এবং রাজস্থানের এই দুই কর্মকর্তাকে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) আয়োজিত সকল ধরনের ক্রিকেটীয় কার্যক্রম থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করে। এখনো সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে।

অনেকেই ভেবে থাকে চেন্নাই এবং রাজস্থান দুই দলই ম্যাচ ফিক্সিংয়ের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছে। এটা ভুল তথ্য। আসলে দল দুইটি নিষিদ্ধ হয়েছে বেটিং এবং স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য।

ম্যাচ ফিক্সিং এবং স্পট ফিক্সিংয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। ম্যাচ ফিক্সিং মানে হলো অনেক ব্যক্তিকে অর্থ দিয়ে ম্যাচের ফলাফল কি হবে সেটা আগে থেকেই ঠিক করে রাখা। আর স্পট ফিক্সিং হলো ম্যাচের কোনো নির্দিষ্ট অংশ বাজিকররা ক্রিকেটারদেরকে টাকা দিয়ে ঠিক করে।

  • আম্পায়ারের কারণে পাঁচটি শিরোপা জিতেছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স

আইপিএলের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল ফ্রাঞ্চাইজি হলো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। এখন পর্যন্ত আইপিএলের পাঁচটি শিরোপা ঘরে তুলেছে মুম্বাই। অনেকেই মনে করে আম্পায়াদের আনুগত্যের কারণে পাঁচটি শিরোপা জিততে পেরেছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।

এই অভিযোগ শুধু মিথ্যা নয়, হাস্যকরও বটে। আম্পায়ারের করা ভুল খেলার একটি অংশ। কারণ দিনশেষে আম্পায়ারাও মানুষ এবং তারাও ভুল করতে পারেন।

২০১৯ আইপিএলের ফাইনালে মহেন্দ্র সিং ধোনির রান আউট কিংবা ২০১৭ সালের ফাইনামে স্টিভ স্মিথের লেগ সাইডে ওয়াইডের মত কিছু সিদ্ধান্ত যেকোনো কিছু হতে পারতো। এই সিদ্ধান্তগুলো ছিলো পঞ্চাশ-পঞ্চাশ। এখানে বেনিফিট অফ ডাউটের সুবিধা পেয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। তা না হলে হয়তো ফলাফল অন্য হতে পারতো।

এই অভিযোগগুলো মাধ্যমে মুম্বাইয়ের সাফল্যকে ছোট করে দেখা হয়। তাঁরা যোগ্যতম দল হিসেবেই সাফল্য পেয়েছে সেটা মানতেই হবে।

  • সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ এবং ডেকান চার্জার্স একই দল

হায়দ্রাবাদ শহর থেকে আইপিএলের প্রথম দল হলো ডেকান চার্জার্স। তাঁরা আইপিলের প্রথম পাঁচ মৌসুমে আইপিএলে অংশগ্রহণ করেছিলো। এছাড়াও ২০০৯ সালের আইপিলের দ্বিতীয় আসরের চ্যাম্পিয়নও তাঁরা।

লোকজন ভাবে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ এবং ডেকান চার্জার্স একই দল। না এই দুই দল একই দল নয়, তবে একই শহরের দল। ২০১২ সালের আইপিএলের পর ডেকান চার্জার্সের পরিবর্তে আইপিএলে আসে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ এবং ২০১৩ আইপিএলে তাঁদের অভিষেক।

অর্থনৈতিক কারণে ডেকান চার্জার্স দেউলিয়া হয়ে যাবার পর সান টিভি নেটওয়ার্ক প্রতি বছরের জন্য ১২ মিলিয়ন ইউএস ডলারের বিনিময়ে পাঁচ বছরের জন্য কিনে নেয়। এর ফলে ডেকান চার্জার্সে থাকা বেশিরভাগ ক্রিকেটার হয়ে যায় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের ক্রিকেটার। এরপর থেকে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর থেকে তাঁরা আইপিএলে নিয়মিত পারফর্ম করে যাচ্ছে এবং ২০১৬ সালে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় তাঁরা।

  • ক্রিস মরিস আইপিএলের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া ক্রিকেটার

এটা নিশ্চিত করে বলা যায় আইপিএলে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অলরাউন্ডার হলেন ক্রিস মরিস। লোকজন ভেবে থাকে আইপিএলে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাচ্ছেন ক্রিস মরিস।

কিন্তু এই তথ্যটি ভুল। এবারের আইপিএলে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া ক্রিকেটার হলেন বিরাট কোহলি। তিনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু থেকে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন ১৭ কোটি রুপি।

বিরাট কোহলি একমাত্র ক্রিকেটার যিনি শুরু থেকে একটি মাত্র ফ্রাঞ্চাইজিতে খেলে যাচ্ছেন। আগামী বছর ব্যাঙ্গালুরুর সাথে এই ১৭ কোটি রুপির চুক্তি শেষ হবে। আগামী আইপিএলের আগে হওয়া মেগা নিলামের সময় ব্যাঙ্গালুরুক বিরাট কোহলিকে ছাড়বে বলে মনে হচ্ছে না।

  • আইপিএলের ম্যাচগুলো সব ফিক্সড

আইপিএলের সম্পর্কে সবচেয়ে কল্পকাহিনী হলো, আইপিএলের সব ম্যাচ ফিক্সড। আইপিএল কোনো ভাবে ফিক্সড হবার কোনো উপায় নাই। কারণ বিসিসিআই এই বিষয়ে বেশ সতর্ক।

আইপিএলের প্রতিটি দল এবং সব ক্রিকেটার ও টিম ম্যানেজমেন্টের সকল সদস্যদের উপর কঠোর নজরদারীতে রাখে।

আইপিএলে সব ক্রিকেটাররা মাঠে পারফর্ম করার জন্য মুখিয়ে থাকে। কারণ আইপিএলে ভালো খেললেই জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া এবং সহজেই সারা বিশ্বের নজর কাড়তে পারেন ক্রিকেটাররা।

এছাড়াও আইপিএলের প্রত্যেকটি দলের কাছে দুর্নীতি বিরোধী আইন সম্পর্কে জানানো আছে। এর নিয়ম ভঙ্গ করলে তাঁর শাস্তি সম্পর্কে জানানো আছে সবগুলো ফ্রাঞ্চাইজিকে।

তাই আইপিএলের ম্যাচগুলো আগে থেকেই ফিক্সড করা থাকে এটা ভাবাটা শিশুসুলভ একটি ভাবনা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...