টাইগার জিন্দা হ্যায়

বয়সটা চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটেও নিয়মিত নন। অথচ বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে তাঁর বোলিং দেখে সেটা বুঝতে পারা দায়। বলা হচ্ছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার কথা, সিলেটের হয়ে প্রথম ম্যাচেই যিনি পুরনো ঝলক দেখিয়েছেন। সিলেটের ভাগ্য বদলানোর মিশনটা তাই শুরু হয়েছে সহজ জয় দিয়েই। 

মাশরাফি ক্রিকেটে নিয়মিত নন – বেশ পুরনো খবর। দিন পনেরো আগেও ব্যস্ত ছিলেন নড়াইলের উপজেলাগুলোতে নানা কর্মসূচি নিয়ে। ফিটনেস, ইনজুরি শংকা নিয়ে খেলতে পারবেন কিনা মাশরাফি তা নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ছিল নানা চাপা উৎকণ্ঠা। সিলেট স্ট্রাইকার্স অবশ্য অতশত ভাবেনি, দলে মুশফিকুর রহিম থাকা সত্ত্বেও নেতৃত্বের ব্যাটনটা ঠিকই তুলে দিয়েছে ম্যাশের হাতে। হতাশ করেননি বিপিএলের সফলতম কাপ্তানও, প্রথম ম্যাচেই বুঝিয়ে দিয়েছেন এখনো একা হাতেই ম্যাচে জেতানোর সামর্থ্য রাখেন তিনি।

মিরপুরের পিচে পেসাররা সহায়তা পান না এমন অভিযোগ বেশ পুরনো। সেই পিচেই নতুন বলে কি দারুণ বোলিং-ই না করলেন নিজের সেরা সময় ফেলে আসা মাশরাফি। প্রথম ওভারেই মেহেদি মারুফকে খাবি খাইয়েছেন মাপা লেংথ আর সুইংয়ে। পাওয়ার প্লেতে নিজের প্রথম স্পেলে দুই ওভারে দিয়েছেন মোটে এগারো রান। 

এরপর আবারো বোলিংয়ে ফিরেছেন মাঝের ওভারে। শুরুর ধাক্কা সামলে তখন ইনিংস মেরামতের চেষ্টা চালাচ্ছে চট্টগ্রাম। অভিজ্ঞ মাশরাফি সেটা হতে দিলেন কই! প্রথমে উন্মুক্ত চাঁদকে টানা ডট বলে চাপে ফেললেন। এরপর নিজের শেষ ওভারে তুলে নিলেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির উইকেট। দীর্ঘদিন পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরার ম্যাচে মাশরাফির সংগ্রহ চার ওভারে ১৮ রানের বিনিময়ে এক উইকেট। টি টোয়েন্টিতে যেকোনো প্রতিপক্ষের বিচারে দারুণ পারফরম্যান্সই বটে।

শুরুতে মাশরাফির এনে দেয়া ছন্দটা ধরে রেখেছেন সিলেটের বাকি পেসাররাও। বিদেশি মোহাম্মদ আমির আর তরুণ রেজাউর রাজা সমানতালে বল করেছেন মাশরাফির সাথে। তাতেই কুপোকাত চট্টগ্রাম, মাত্র ৯০ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাঁরা দিতে পেরেছিল সিলেটকে। নাজমুল শান্ত আর জাকির হাসানের ব্যাটে ভর করে সিলেট সেটা পেরিয়ে গেছে হেসেখেলেই।

বিপিএলে সিলেটের ভাগ্যটা বরাবরই মন্দ, সবমিলিয়ে মোটে একবারই সেমিতে খেলেছে তাঁরা। সেই রেকর্ড বদলাতেই কিনা এবার মাশরাফিকে দলে ভেড়ানো। নিজের সেই অ্যাসাইনমেন্টে প্রথম ম্যাচে দারুণ সফল এই পেসার। শুরুর এই ছন্দটা টুর্নামেন্ট জুড়ে ধরে রাখতে পারলে টুর্নামেন্টের বাকি দলগুলোর জন্য সেটা হবে ভয়ের কারণ। 

অথচ সেই ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিকে বিদায় জানিয়েছেন মাশরাফি। লাল বলের ক্রিকেট তো একপ্রকার নিষিদ্ধই তাঁর জন্য, এক যুগের বেশি সময় আগে আন্তর্জাতিক টেস্ট খেলেছেন। ওডিয়াই দলেও নেই বছর তিনেক হতে চললো। ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিয়মিত নন, সবেধন নীলমণি বিপিএল এবং ডিপিএল। যদিও ইনজুরি বাঁধায় এই দুই টুর্নামেন্টেও পুরোটা খেলতে পারেন খুব কমই। 

গত এপ্রিলে ডিপিএলের পর আর কোনো ম্যাচ খেলেননি। বিপিএলেও দলের সাথে অনুশীলন করেছেন মাত্র দুই সেশন। যত দিন গড়াচ্ছে, তাঁর বোলিংয়ের ধার যেন বাড়ছে। তরুণ পেসারদের সাথে পাল্লা দিয়ে পারফর্ম করছেন। বুঝিয়ে দিচ্ছেন অভিজ্ঞতার মূল্য। এখন দেখার বিষয় শুরুর ছন্দটা পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে ধরে রাখতে পারেন কিনা অভিজ্ঞ এই পেসার।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link