৯৪ বলে ১২২ রান – বিরাট কোহলির এই ইনিংস একটা ভিন্ন ধরনের মাস্টারক্লাস। ইনিংসের অধিকাংশ সময়ই তিনি টাইমিংয়ের জন্য স্ট্রাগল করেছেন। এক সময় বাধ্য হয়ে ফোর্সড শটও খেলতে চেয়েছেন। সেটিও কাজে আসে নি। একটা প্রশ্ন করি, বিরাট কোহলিকে কে কবে দেখেছে পায়ের আংগুলের উপরে ভর দিয়ে এক্সট্রা কাভার অঞ্চলে ড্রাইভ করতে? এদিন দেখা গিয়েছে।
৫৫ বলে ফিফটি করার পথে চার মেরেছেন ৪ টি, ছক্কা একটাও নেই। ৮৪ বলে যখন সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন, আরো দুটো চারের সাথে যোগ হয়েছে দুটো ছক্কা। অর্থাৎ প্রথম পঞ্চাশ পূর্ণ করতে বাউন্ডারি থেকে রান এসেছিলো ১৬। বাকি ৫১ বলে দৌড়ে নিয়েছিলেন ৩৪ রান। দ্বিতীয় ভাগের ৫০ করার ক্ষেত্রেও বাউন্ডারি থেকে এসেছে ২০ রান। কিন্তু এ যাত্রায় দৌড়ে রান তুলেছেন ২৫ বলে ৩০! অবিশ্বাস্য বললেও এটাকে কমই বলা হয়।
এই ইনিংস যে কোন ক্রিকেটারের জন্য একটা শিক্ষা হতে পারে। যে কোন দিনে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়েরও খারাপ দিন যেতে পারে। যেই দিনে টাইমিং ঠিক থাকবে না, প্লেসমেন্ট ঠিক থাকবে না, টাচও থাকবে না স্বাভাবিক। তারপরেও আপনাকে আপনার কাজটি করে যেতে হবে। উইকেটে থাকতে হবে, ইনিংস বিল্ড করতে হবে, রান তুলতে হবে এবং আধুনিক ক্রিকেটের চাহিদা মিটিয়ে দ্রুত তুলতে হবে। সব কিছুই এক ইনিংস দিয়ে কোহলি দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।
অর্থাৎ উইকেটে টিকে থেকে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে হবে। সেই আক্রমনাত্মক ক্রিকেট মানে বলে বলে চার-ছয় মারার চেষ্টা নয়। সিঙ্গেলকে ডাবলে পরিণত করার চেষ্টা করে ফিল্ডারের উপরে চাপ তৈরি, বোলারকে আক্রমণ করতে না দেয়া এবং বাজে বলে বাউন্ডারি পার করে বোলারের উপরে আক্রমণ চাপিয়ে দেয়াও আক্রমণাত্মক ক্রিকেট।
ইনিংস বিল্ডআপ মানে খোলসের মধ্যে ঢুকে যাওয়া নয়। রিস্ক না নিয়ে রান তুলেও ইনিংস বিল্ড আপ করা যায়। প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলা যায়। ক্যারিয়ারের ৭৭ তম সেঞ্চুরি এবং ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৩০০০ রান করার দিনে কোহলি এই শিক্ষাটাই দিয়ে গেলেন।
আর এই ইনিংসটা পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের মঞ্চে বলে তাঁর গুরুত্বও অনেক বেশি। কোহলি তো বরাবরই এমন। তিনি বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনি এক্স ফ্যাক্টর। গেল বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোহলির ৫৩ বলে অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংসের স্মৃতি এখানে আসবে।
আবার, ২০১২ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৩০ রানের টার্গেটে ২২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৪৮ বলে ১৮৩ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন কোহলি। এবারের ইনিংসটাও সেসব ইনিংসের মতই স্মরণীয়।