ম্যাচ অ্যাওয়ারনেস ও অন্যান্য

ব্যাপারটা হলো ‘ম্যাচ অ্যাওয়ারনেস’ এখানে বরাবরই আমাদের ঘাটতি। কখন কোন শট খেলব, কোন বোলারকে খেলব, কোন উইকেটে কোন শট খেলা উচিত বা উচিত নয়, কোন পরিস্থিতিতে কার বলে কেমন খেলব, কোনটি খেলব না, কিভাবে রান তাড়ায় এগিয়ে যাব, কিভাবে খেলা শেষ করব।

ব্যাপারটা হল – ‘ম্যাচ অ্যাওয়ারনেস’ এখানে বরাবরই আমাদের ঘাটতি। কখন কোন শট খেলব, কোন বোলারকে খেলব, কোন উইকেটে কোন শট খেলা উচিত বা উচিত নয়, কোন পরিস্থিতিতে কার বলে কেমন খেলব, কোনটি খেলব না, কিভাবে রান তাড়ায় এগিয়ে যাব, কিভাবে খেলা শেষ করব।

মুশফিকের স্কুপ বলুন বা লিটনের খোলসে আটকে থাকা, ম্যাচ শেষ পর্যন্ত টেনে নেওয়ার ঝুঁকি নেওয়া, শেষ ওভারে বাজে বল পেয়েও রিয়াদের চার-ছক্কা মারতে না পারা (যেটিতে লাইফ পেলেন), ম্যাচ শেষ বল পর্যন্ত টেনে নেওয়া। সবই ম্যাচ সচেতনতার অভাব।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রিভার্স সুইপ, স্কুপ এসব খেলতেই হবে। বিশেষ করে আমাদের দেশের ব্যাটসম্যানের, যাদের হাতে পাওয়ার কম। এসব স্কিল হিটিংয়েই রান বাড়াতে হবে। তবে শটটা কখন খেলব, সেটা বোঝা জরুরি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেট ছিল। এখানে স্কুপ খেলা খুব ঝুঁকির। ওভারের প্রথম বলে কাট শটে চার পেয়েছি। এরপর স্কুপ খেলার মতো এত ঝুঁকির পথে কেন হাঁটব? কেন!

২৪ বলে ৩৩ রান লাগে, হাতে ৬ উইকেট। পিচ যে রকমই হোক, এই ম্যাচ শেষ বল পর্যন্ত কেন গড়াবে! এসবই ম্যাচ অ্যাওয়ারনেসের ঘাটতি… আগেও অসংখ্যবার দেখেছি। আজকেও দেখলাম।

মুস্তাফিজের জন্য উইকেট ছিল আদর্শ। সেখানে তিনি চরম হতাশ করলেন। তার পরও – এত ক্যাচ মিস, শেষ দিকের বাজে ফিল্ডিংয়ের পরও টার্গেট ছিল ১৪৩ রান, মোটেও ১৬৩ নয়।

১৪৩ রান তাড়া করাও এই উইকেটে কঠিন। মন্থর, নিচু বাউন্স, বল ব্যাটে আসে না। শট খেলা কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশ তো এসব উইকেটেই খেলে, খুব ভালোরকম অভ্যস্ত – বাংলাদেশের তো ১৪৩ তাড়া করা উচিত, ১৬৩ তো আর নয়!

তার ওপর, রাসেল-ব্রাভোরা সত্যি বলতে, নিজেদের সেরা বোলিং করতে পারেননি। আকিলের মতো বাঁহাতি স্পিনার আমাদের ব্যাটসম্যানরা জীবনভর খেলে আসছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডিংও আজকে ভালো হয়নি, ক্যাচ মিস করা ছাড়াও আলগা ফিল্ডিংয়ে অনেক রান দিয়েছে। হারার সব আয়োজনই ওরা করেছে, তার পরও আমরা হেরেছি – এটা কোনো কথা!

বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ টি-টোয়েন্টি দল, অথচ মাঠের ক্রিকেটে যাচ্ছেতাই অবস্থা, প্রয়োজনের সময় কাজে না লাগলে কী হবে এই অভিজ্ঞতা দিয়ে!

আর ফিল্ডিংয়ের কথা কী বলব! প্রথমত, সেদিন লিটনের দুই ক্যাচ, আজকে মেহেদী-আফিফদের যে মিস, এইসব ক্যাচ নিতে ফিল্ডিং কোচ লাগে না। বেসিকেরও বেসিক ক্যাচ – কোনো অজুহাত চলে না, দায় তাঁদের এবং তাঁদেরই।

দ্বিতীয়ত, যখন একই ঘটনা ম্যাচের পর ম্যাচ, দিনের পর দিন ঘটতে থাকবে, তখন দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই হবে। এই সাধারণ ক্যাচগুলো নিয়মিত মিস হয়ে আসছে। গত দুই-আড়াই বছর ধরে নিয়মিত দৃশ্য এটি। নিশ্চয়ই কোথাও গড়বড় হচ্ছে! ফিল্ডিং কোচের দায় এখানে অবশ্যই দিতে হবে।

শুধু ক্যাচিং কেন, গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়েরও বাজে অবস্থা। শেষ কবে বাংলাদেশের দুর্দান্ত গ্রাউন্ড ফিল্ডিং দেখেছেন? গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে শরীরী ভাষা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। দলের অবস্থা, পারিপার্শ্বিকতা, দল কতটা উজ্জীবিত, এসব ফিল্ডিংয়ে প্রভাব ফেলে। এখন যা খুব বাজে অবস্থায়। তবে টেকনিক, মনোযোগ, তাড়নার ব্যাপারও তো আছে। ফিল্ডিং কোচের দায় এখানেই।

হতে পারে তার ট্রেনিং পদ্ধতিতে ঝামেলা আছে বা এটা কার্যকর হচ্ছে না। হতে পারে, তিনি যা করতে চাচ্ছেন, তা হচ্ছে না। হতে পারে তার ট্রেনিং দল নিতে পারছে না। হতে পারে, তিনি আসলে একটা আন্তর্জাতিক দলের দায়িত্ব পালনের মতো যথেষ্ট যোগ্য নন (বাংলাদেশের দায়িত্ব পাওয়ার আগে স্রেফ একটা একাডেমির কোচ ছিলেন)। কিংবা হতে পারে, তিনি খুব ভালো কোচ, কিন্তু এখানে কোনো কারণে কার্যকর হচ্ছেন না। যেটাই হোক, কাঠগড়ায় তাকে তুলতেই হবে।

ফিল্ডিং কোচ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা সময়ে। বোর্ড সভাপতি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে উত্তর দেন। তাকে এখনও রেখে দেওয়ার পেছনে কারণ তাই স্পষ্ট জানি না। কিছু ধারণা করতে পারি। হতে পারে, তার বেতন থেকে কমিশন পান বোর্ডের উচ্চপদস্থ কেউ।

হতে পারে, কোচ বাদ দিলেই নতুন আরেকজন খুঁজতে হবে, এটা বিরাট ঝামেলা (ডমিঙ্গোকে নিয়ে বোর্ডের মানসিক বাধা যেখানে)। নতুন ফিল্ডিং কোচ খোঁজার প্রক্রিয়া করতে হবে, মিডিয়া প্রশ্ন করবে যে কোচ কবে আসবে, এসব ঝামেলায় বোর্ড যেতে চায় না। কিংবা এটাও হতে পারে, ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুককে আগলে রেখেছেন প্রধান কোচ ডমিঙ্গো, দক্ষিণ আফ্রিকা সিন্ডিকেটের কারণে।

কোনোটাই নিশ্চিত নই অবশ্যই। স্রেফ ধারণা, আপাতত আর কারণ ভেবে পাই না – শুধু জানি, দুই-তিন বছর ধরে টানা ফিল্ডিং খারাপ হওয়ার পরও বিশ্বের কোনো দলেই সেই কোচের দায়িত্বে থাকার কথা নয়।

অবশ্য ব্যর্থতার কথা বললে তো সবার আগে টান পড়বে মাথায়। উনার কথা আর কত বলব! লিখতে লিখতে ক্লান্ত। ৯ বছর দায়িত্বে থেকেও দেশের ক্রিকেটের ভিত শক্ত করতে পারলেন না, অবকাঠামো দাঁড় করাতে পারলেন না, পাইপলাইনে বিকল্প নেই, দল বাছাইয়ে দেখতে হয় ‘কে কম খারাপ’ এসবই চলছে। বড় কর্তার আছে স্রেফ গলার জোর। ভালো কিছু হলে, ‘আমিই করেছি’ – আর ভালো না হলে, ‘আমি তো কিছুই বুঝলাম না!’

– ফেসবুক থেকে

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...