বর্তমান টি টোয়েন্টির চার-ছক্কার ক্রিকেটের জোয়ারে লেগস্পিনারদের চাহিদা বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশ ব্যতীত প্রতিটি দলেই রয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ লেগি। কিন্তু তা সত্ত্বেও কখনোই তার নামডাক ছিল না। রশিদ খান, যুজভেন্দ্র চাহাল, অ্যাডাম জাম্পা, তাবরাইজ শামসি, ইশ সোধি কিংবা স্বদেশি আদিল রশিদের ভীড়ে তাকে আলাদা করে কেউ চিনতেন না।
ক্যারিয়ার এখনো পায়নি শক্ত ভীত, খেলেছেন মাত্র পাঁচটি একদিনের ম্যাচ। কিন্তু, দিন কয়েক আগে বাবর আজমকে বোল্ড করা ডেলিভারি কিংবা হালের ‘দ্য হান্ড্রেড’ এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ক্রিস কুকিকে যেভাবে বোল্ড করলেন তাতে এ মুহূর্তে তিনি ক্রিকেটবিশ্বের আলোচনার শীর্ষে।
বিশেষ করে কুককে বোল্ড করা ডেলিভারিতে তিনি যেভাবে লেগস্ট্যাম্পের বাইরে বল পিচ করিয়ে অফস্ট্যাম্প ভেঙে দিলেন সেটা স্মরণ করিয়ে দেয় তিন যুগে আগের শেন ওয়ার্নের সেই বল অব দ্য সেঞ্চুরিকে। আউট হবার আগে বলটি বাঁক নিয়েছে প্রায় ১১.২ ডিগ্রী যা কিনা ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এটাই সর্বকালের সেরা ডেলিভারি কিনা সেটা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যেও। সবাইকে চমকে দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসা এই লেগস্পিনারটি হলেন ম্যাট পার্কিনসন।
১৯৯৬ সালের ২৪ অক্টোবর বোল্টনের এক বাড়িতে জন্ম হয় দুই যমজ ভাইয়ের। একজন আরেকজনের চাইতে কেবল কয়েক মিনিটের বড়। একজনের নাম রাখা হল ম্যাথিউ উইলিয়াম পার্কিনসন অন্যজনের নাম ক্যালাম ফ্রান্সিস পার্কিনসন। ছোটবেলা থেকে দুজনেই মজে যান ক্রিকেটের প্রেমে। একজন খেলেন লিস্টারশায়ারের হয়ে, অন্যজন জড়িয়েছেন ল্যাংকারশায়ারের জার্সি। তবে আজকে আমাদের আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকবে পার্কিনসন ভাইদের বড়জন ম্যাট পার্কিনসনকে নিয়েই।
২০১৬ মৌসুমে ল্যাংকারশায়ারের হয়ে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে অভিষেক ঘটে পার্কিনসনের। অভিষেকেই বনে যান ল্যাংকারশায়ারের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে পাঁচ উইকেটধারী। সেদিন ৪৯ রান দিয়ে ফাইফার নেন তিনি। তবে সে মৌসুমের পুরোটা জুড়ে ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
কিন্তু, তার বোলিংয়ে বিশাল উন্নতি দেখা যায় অস্ট্রেলিয়াতে প্রশিক্ষণে ক্যাম্পে যাবার পর। সেখানে স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের সাথে নিবিড়ভাবে বোলিগ নিয়ে কাজ করেন তিনি। সে বছর তিনি গর্ডনের সাথে যৌথভাবে ইসিবির সেরা তরুণ ক্রিকেটার নির্বাচিত হন।
দারুণ খেলার সুবাদে অতি দ্রুতই তিনি ডাক পেয়ে যান ইংল্যান্ড লায়ন্সের হয়ে। এছাড়া বিগ ব্যাশের দল মেলবোর্ন স্টারর্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। আইপিএলের বেশ কয়েকটি দলও আগ্রহ দেখিয়েছিল তাকে দলে নেবার জন্য।
কিন্তু, এ সময় তিনি ইনজুরির কবলে পড়েন, অ্যাংকেলের ইনজুরিতে পড়ে দীর্ঘসময়ের জন্য ছিটকে পড়েন ক্রিকেট থেকে। অবশেষে ২০১৯ মৌসুমে টি টোয়েন্টি ব্লাস্টে ফিরে আসেন পূর্বের বিধ্বংসীরূপে। ২১ উইকেট নিয়ে নির্বাচিত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ফলশ্রুতিতে ডাক পান নিউজিল্যান্ডগামী ইংল্যান্ড দলে।
নিউজিল্যান্ড বিপক্ষে টি টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় পার্কিনসনের। সে সফরে মাত্র ছয় ওভার বল করলেও শিকার করেন পাঁচ উইকেট। যদিও এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তিনি তেমন ভালো করতে পারেননি। তা সত্ত্বেও তার সামনে সুযোগ এসেছিল ভারতের বিপক্ষে টেস্ট দলে জায়গা করে নেবার।
কিন্তু, বলে গতি কম এই অজুহাতে তার বদলে সেই সফরে দলে ডাকা হয় ডউম বেসকে। ২০২০-২১ মৌসুমে পুনরায় ঘরোয়া ক্রিকেটে তার দারুণ পারফরমেন্স এবং আদিল রশিদের অফফর্ম সবমিলিয়ে পুনরায় জাতীয় দলে সুযোগ পান তিনি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে একদিনের সিরিজে মইন আলি, আদিল রশিদদের অনুপস্থিতিতে অনভিজ্ঞ ইংরেজ স্পিন ডিপার্টমেন্টের নেতৃত্ব দেন তিনি। সেখানেও দারুণ সফল তিনি, তিন ম্যাচে নেন পাঁচ উইকেট। গত কয়েকমাস আগেও তিনি জাতীয় দলের আশেপাশেও ছিলেন না।
কিন্তু, গত কয়েকদিনের পারফরম্যান্সের সুবাদে হুমকিতে ফেলে দিয়েছেন জাতীয় দলে আদিল রশিদের জায়গা। এখন দেখার বিষয় আসন্ন টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অধিনায়ক মরগ্যান কার উপর ভরসা রাখেন দীর্ঘদিনের সেনানী রশিদ নাকি ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করা পার্কিনসন।