পিএসজি রসায়নে মেসি অদ্রবণীয়

১-১ এর সমতা। ম্যাচের ৭৬ মিনিট, কোচের নির্দেশে মাঠ ছাড়তে হলো বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসিকে। কিছুটা মনক্ষুন্ন, কিছুটা বিরক্তি নিয়ে মাঠ ছাড়লেন মেসি। বিরক্তির ছাপ যেন  স্পষ্ট মেসির চোখে মুখে। সমর্থকদের কাঠগড়ায় প্যারিস সেইন্ট জার্মেই কোচ মাউরিসিও পচেত্তিনো।

গতকাল রাতে ফান্স লিগ ওয়ানের ম্যাচে ঘরের মাঠ পার্ক দে প্রিন্সেসে ওলেম্পিক লিঁও-র মুখোমুখি হয় পিএসজি। ম্যাচের ৫৪ মিনিটে লিঁও তারকা লুকাস পাকুয়েতার গোলে এগিয়ে যায় অতিথী দল। ম্যাচের ৬৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা ফেরান পিএসজির আরেক প্রাণ ভোমরা নেইমার।

মেসি যে খুব বেশি অনুজ্জ্বল ছিলেন এ  ম্যাচে তেমটা নয়। মেসি চেষ্টা করেছেন তাঁর সর্বোচ্চটা দেবার, ভাগ্যই যেন সহায় নয় মেসির। ম্যাচের ৩৭ মিনিটে মেসির করা দুর্দান্ত ফ্রি-কিক গোলবারে লেগে প্রতিহত হওয়া তাঁর দুর্ভাগ্যই যেন প্রমাণ করে। পরে অবশ্য মাউরো ইকার্দির হেডারে বল জালে জড়ালে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে প্যারিসের ক্লাবটি।

কিন্তু ম্যাচের ৭৬ মিনিটে মেসির বদলিতে আঙুল উঠেছে কোচ পচেত্তিনোর উপর। তিনি কি তাহলে ভরসা করতে পারছেন না তাঁর দলে থাকা অন্যতম সেরা খেলোয়াড়কে? এমন প্রশ্নের প্রতিউত্তরে পচেত্তিনো জানান যে কাওকে বদলি করানো খেলার অংশ, পরিকল্পনার অংশ।

তাঁর ভাষ্যমতে পিএসজির রয়েছে ৩৫ জন খেলোয়াড় সংবলিত এক বিশাল দল। দল কিংবা পরিস্থিতির প্রয়োজনে যে কোন বিষয়ে সিধান্ত নেওয়াটাই একজন কোচ তথা ম্যানেজারের কাজ। তাঁর আর মেসির মধ্যে কোন সমস্যা নেই কিংবা তিনি যে মেসিতেই আস্থা রাখতে চান এ বিষয়েও খোলাসা করেছেন আর্জেন্টাইন কোচ পচেত্তিনো।

কিন্তু কোথাও একটা গড়মিল যে রয়ছে তা স্পষ্ট পরিলিক্ষিত হচ্ছে মেসির গোল খড়ায়। ২০২১ গ্রীষ্মকালীন দলবদলের সবচেয়ে বড় দুই চমক মেসি-রোনালদোর দল বদল। রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে এই মৌসুমে তিন ম্যাচে গোল করেছেন চারটি। অভিষেক ম্যাচেই করেছেন দুই গোল। অপরদিকে মেসির পিএসজি যাত্রা এখন পর্যন্ত অমলিন। এখন পর্যন্ত দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে ব্যর্থ মেসি।

সমস্যার এক বিরাট জায়গা জুড়ে থাকতে পারে পিএসজি এবং বার্সালোনার ট্যাক্টিকাল তফাৎ। মেসি তাঁর ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় জুড়ে ছিলেন কাতালান শিবিরে। যেখানে মেসি ছিলেন দলের মধ্যমনি। তাঁকে ঘিরেই অধিকাংশ পরিকল্পনা সাজাতেন বার্সা কোচরা।

এমন পরিকল্পনার ছক আঁকার হয়ত ইচ্ছে নেই পিএসজি কোচ পচেত্তিনোর। তিনি হয়ত চাননা মেসি কেন্দ্রিক ট্যাক্টিসে দলকে খেলাতে, যাতে করে তাঁর অবর্তমানে দলকে বেগ পোহাতে না হয়। যেমনটা এখন ঘটছে বার্সেলোনার সাথে। শক্তিশালী দলগুলোরে বিপক্ষের খাবি খাচ্ছে কাতালানরা। হন্যে হয়ে খুঁজছে  গোলের ঠিকানা।

কোচ পচেত্তিনোর পরিকল্পনা যদি এমনটাই হয়ে থাকে তবে তা যুগোপযোগী এবং সত্যিকার অর্থেই প্রশংশনীয়। তবে মেসির সেরাটা বের করে নিয়ে আনতে সচেষ্ট তাঁরই স্বদেশি কোচ পচেত্তিনো। তাইতো গত ম্যাচে ৪-২-৩-১ ফরমেশনের খেলিয়েছেন দলকে, যেখানে মেসিকে দেওয়া হয়েছিল প্লে-মেকারের দায়িত্ব।

যেখানে মধ্য মাঠের বেশ জায়গা ছিল মেসির জন্যে, তাঁর স্বভাবচারিত খেলা খেলতে পারার সুযোগ করে দিতেই হয়ত কোচের এমন পরিকল্পনা। এর আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে ৪-৩-৩ ফরমেশনে মেসিকে খেলিয়েছিলেন রাইট উইঙ্গ পজিশনে। চেষ্টার কমতি নেই পচেত্তিনোর। হয়ত ভিন্ন পরিকল্পনা থেকেই গতকাল মেসিকে মাঠ থেকে তুলে নেন তিনি। মেসিকে তুলে নিয়ে যে পচেত্তিনো ব্যর্থ হয়েছেন তা কিন্তু নয়। দল কিন্তু জয় পেয়েছেন। প্রতিযোগিতামূলক খেলায় জয়টাই মুখ্য।

এছাড়া মেসির মলিন পার্ফরমেন্সের পেছনে অন্যতম কারণ হতে পারে ফিলোসফিকাল ভিন্নতা। বার্সা পিএসজি দুটো ভিন্ন দল তাদের দর্শন, খেলার ধরণে পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। সেই তারতম্যে নিজেকে ঠিক এখনো খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না মেসি। তার পাশাপাশি নতুন সতীর্থ যেন খাপ খাইয়ে নেবার কাজটাকে আরেকটু কষ্টসাধ্য করে তুলছে। পিএসজির ক্লাব রসায়নে নিজেকে ঠিক দ্রবীভূত করতে পারছেন না মেসি।

কিন্তু এখনই নিরাশ হবার কিছু নেই মেসি সমর্থকদের। ছয়বার ব্যালন ডি’অর জেতা মেসি নিঃসন্দেহে জ্বলে উঠবেন এবং তা অতি দ্রুতই। অপেক্ষা করতে হবে, সময় দিতে হবে। চাইলেই তো ঘর ছেড়ে পরদেশে মানিয়ে নেওয়া যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link