দ্য ‘এলিয়েন মেসি’ শো

ইতালির রাইট ব্যাক লরেঞ্জোর সাথে বেশ কিছুক্ষণ লড়াই চলল। লিওনেল মেসি যেন হার মানতেই নারাজ। শারীরিক সক্ষমতার একটা পরীক্ষা আর কি। তবে মেসির পায়ে বল থাকা অবস্থায় নিশ্চয়ই তার থেকে শক্তিশালী তাবত দুনিয়ায় আর কেও নেই। সেটাই হল। মেসি শারীরিক লড়াই চালিয়ে ঢুকে পড়লেন ডি-বক্সে। স্কোয়ার পাস করলেন। সেখানে নিজের ফর্মে তুঙ্গে থাকা লাউতারো মার্টিনেজ ছিলেন তীর্থের কাক হয়ে।

ইতালির রাইট ব্যাক লরেঞ্জোর সাথে বেশ কিছুক্ষণ লড়াই চলল। লিওনেল মেসি যেন হার মানতেই নারাজ। শারীরিক সক্ষমতার একটা পরীক্ষা আর কি। তবে মেসির পায়ে বল থাকা অবস্থায় নিশ্চয়ই তার থেকে শক্তিশালী তাবত দুনিয়ায় আর কেও নেই। সেটাই হল। মেসি শারীরিক লড়াই চালিয়ে ঢুকে পড়লেন ডি-বক্সে। স্কোয়ার পাস করলেন। সেখানে নিজের ফর্মে তুঙ্গে থাকা লাউতারো মার্টিনেজ ছিলেন তীর্থের কাক হয়ে।

বল আসা মাত্রই তিনি আলোতো ‘ফ্লিকে’ বল জালে জড়ান। আর গোটা ওয়েবলে স্টেডিয়াম যেন আনন্দে আত্মহারা হওয়ার উপক্রম। সেটাই যে ছিল শুরু আরও একটি শিরোপা ঘরে তুলবার। প্রায় ২৯ বছর পর আবার মাঠের গড়ালো ‘ফিনালিসিমা’। শেষবার শিরোপা উঠেছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাতে এবার তা উঠল মেসির হাতে। এক বছরে দ্বিতীয় শিরোপা আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে।

অথচ গেল বছর জুনের আগে মেসির এক বড্ড বড় আক্ষেপের জায়গা ছিল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্জেন্টিনাকে কোন শিরোপা এনে দিতে না পারা। ২০২১ এর জুলাইয়ে সে আক্ষেপ মোচন হয় ভিনগ্রহের প্রাণী লিওনেল মেসির। প্রথম কোন শিরোপা তিনি যেতেন আর্জেন্টিনার হয়ে। সে আনন্দ সীমা হারায়। চিরপ্রতিদ্বন্দী ব্রাজিলকে হারিয়ে তো সেবার শিরোপা ঘরে তুলেছিল আলবেসেলেস্তারা।

কোপা আমেরিকার শিরোপা জয়ের যেমন মেসির অবদান ছিল অনেকটাই, ঠিক তেমনি ফিনালিসিমা জয়েও তিনি রেখেছেন সামনে থেকে ভূমিকা। তিনি যেন ছিলেন মাঠের সর্বত্র। রক্ষণ, আক্রমণে কোন ভেদাভেদ নাই। আকাশী নীল জার্সিতে যেন সবসময় অন্য এক মানুষ লিওনেল মেসি। স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনা ছেড়ে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের পাড়ি দেওয়ার পর নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন লিও।

সবাই হয়ত ভাবতে বসেছিল মেসি নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। কেননা পিএসজির হয়ে খুব একটা চোখে পড়ার মত পারফরমেন্স তিনি করতে পারেনি সদ্য সমাপ্ত হওয়া ক্লাব ফুটবলের মৌসুমে। তবে মেসি তো একজনই। তিনি তো দুর্বার, তাকে কি আর এত সহজেই দমিয়ে রাখা যায়? তিনি কি আর অতি দ্রুতই হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র? নিশ্চয়ই না। তিনি অদম্য। আবারও ফুটবলের সবুজ ঘাসে সেটাই প্রমাণ করলেন লিওনেল মেসি।

তিনি ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটা বাগিয়ে দিয়ে যেন সতর্ক করে দিলেন আসন্ন বিশ্বকাপ ফুটবলের সব দলের কোচদেরকে। ম্যাচের শুরুতেই দূর্দান্ত এক অ্যাসিস্ট আবার ম্যাচের শেষের দিকে আরেক। টানা নব্বই মিনিট খেলেও যেন ক্লান্তির বিন্দুমাত্র ছাপ নেই। ৩৫ বছর বয়সেও সমানতালে খেলে যেতে পারেন পুরো নব্বই মিনিট। তিনি বোধহয় আসলেই ‘এলিয়েন’।

ম্যাচের প্রতি মুহূর্ত যেন তিনি ম্যাচের শোভা বাড়িয়েছেন। তার চোখ ধাঁধানো পাস, নান্দনিক সব ড্রিবলিং এককথায় মুগ্ধ করেছে সকল আর্জেন্টিনা তো বটেই ফুটবল সমর্থকদেরও। তার এমন ফুটবলীয় কারুকার্যই তো দেখতে চায় সবাই। আর দেখতে চায় স্বর্ণালী ট্রফি হাতে তার বুনো উল্লাস। বছরের শেষভাগে এই মেসির কাঁধে ভর করেই তো নিজের তৃতীয় বিশ্বশিরোপা ঘরে তুলতে চাইবে আলবেসেলেস্তারা।

মেসির এমন অসাধারণ ফর্ম জানান দিচ্ছে আরও একবার স্বপ্নে বুক বাঁধতে। মেসির দিনে তিনি যেকোন প্রতিপক্ষে মনের ত্রাস তাই যেন আবারও প্রমাণ হল। ইতালি বস রবার্তো মানচিনি বহু চেষ্টা করেও মেসিকে আটকে রাখার ছক কষতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই ৩-০ গোলের হার সয়ে নিতে হয়েছে। বিশ্বকাপে খেলতে না পারার ক্ষতে যেন খানিক নুনের ছিটা।

ফর্মের তুঙ্গে থাকা মেসি ঠিক এমন নিষ্ঠুর। প্রতিপক্ষে জন্যে তিনি ত্রাস, তিনি আতংক, তিনি প্রলয়। এখন অপেক্ষা ধারাবাহিকতার। তবেই হয়ত ৩৬ বছর বাদে আবার সেই স্বর্ণালী ট্রফিটা নিজেদের করে পাবে আর্জেন্টিনা। অপেক্ষার হয়ত আর দীর্ঘায়িত হতে দেবেন না ‘এলিয়েন মেসি’।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...