২১ বছর আগে ন্যাপকিনে চুক্তি স্বাক্ষর করে বার্সায় আগমন হয়েছিল এক বিস্ময়বালকের। তারপর জল গড়িয়েছে বহুদূর, তার পায়ের জাদুতে বার্সা জিতেছে সবকিছু। ক্লাব ফুটবলে এমন কোনো ট্রফি নেই যেটা যোগ করেনই বার্সার ট্রফি ক্যাবিনেটে। বার্সা আর মেসি দুজন যেন ছিলেন একে অন্যের পরিপূরক।
দুই যুগ পর ন্যাপকিনে চোখ মুছেই বার্সা ছাড়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করলেন মেসি। এদিন উপস্থিত ছিলেন মেসির সাবেক এবং বর্তমান সতীর্থ জাভি, পুয়োল, জেরার্ড পিকে, জর্ডি আলবা, সার্জিও আগুয়েরো। নিচে সংবাদ সম্মেলনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো আমাদের পাঠকদের জন্য।
- কোথায় থামবেন মেসি?
এটা আমার শরীরের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করছে। আমার সতীর্থরা প্রায়ই বলেন নিজেকে প্রতিনিয়ত সুস্থ রাখা বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়। আমরা একটি রুটিনে অভ্যস্ত তবে এটা বেশ কষ্টসাধ্য। যতদিন আমি প্রতিযোগিতার মানসিকতা রাখছি ততদিন আমি লড়ে যাবো।
- পিএসজি খেলবেন সাথে ইবিজায় ছবি প্রসঙ্গে
এটা নেহাতই একটা মজার ঘটনা ছিলো। নেইমার আমাকে ফোন দিয়েছিলো এবং আমরা ডি মারিয়া ও পারেদেসের সাথে একত্রিত হই, সাথে ভেরাত্তিও ছিলো। তারা নেহাতই হাসিঠাট্টা করে বলেছিলো আমি প্যারিসে (পিএসজি) আসছি। এটা একটা কাকতালীয় বিষয় ছিলো এবং ছবিটি দর্শকদের মাঝে অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। এটা বন্ধুদের সাথে ছুটির দিনের ছবি মাত্র, আর কিছুই নয়।
এখানে কখনো কোনো মিথ্যা আশা ছিলো না। আমরা আশ্বস্ত ছিলাম আমি বার্সায় থাকছি। বিষয়টা সম্পূর্ণ ঠিক ছিলো, কোনো সমস্যা ছিলো না। আমি মনে করি আমি সবসময় সকলের সাথে সৎ ছিলাম। যেমনটা আমি বলেছি, আমার পূর্ব উল্লেখিত কোনো ঘটনার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নয়। আমরা ৫০% বেতন কমানোর সিদ্ধান্তে সম্মত হয়েছিলাম এবং তারা ( বার্সা কতৃপক্ষ) আর কিছু উল্লেখ করে নি। এটি বাদে বাকি সকল তথ্য মিথ্যা। আমাদের আয়ত্বে থাকা সকলকিছু দিয়েই আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু শেষপর্যন্ত সম্ভব হয়ে উঠে নি। অনেক বিষয়ে কথা ছড়িয়েছে যা সত্য নয়।
এটি আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। আমি বিভিন্ন মুহূর্ত, পরাজয়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। কিন্তু পরের দিন তুমি ট্রেনিংয়ে ফিরবে এবং তোমার হাতে হারটিকে জয়ে রূপান্তর করার আরেকটি সুযোগ থাকবে। এইক্ষেত্রে এমনটা সম্ভব নয়, এটাই শেষ। এখন নতুন অধ্যায়ের শুরু।
গতবছর আমি বার্সা ছাড়তে চেয়েছিলাম কিন্তু এবার ব্যাপারটা বিপরীত, আমি থাকতে চেয়েছিলাম। বার্সাকে সকল কিছুর উর্ধ্বে রেখেছি কিন্তু এখন আমার ভালোবাসার ক্লাবকে ছাড়তে হচ্ছে।
- গন্তব্য কি পিএসজি?
এটি একটি সম্ভাবনা তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত নয়। এখনো কারো সাথে এই বিষয় নিয়ে কোনো কতৃপক্ষের সাথেই আমি আলোচনায় বসি নি। বার্সা থেকে ঘোষণাটির পর আমি অনেক ফোন কল পেয়েছি, অনেক ক্লাব আগ্রহী ছিলো। কোনো কিছুই এখনো নিশ্চিত নয় তবে আমাদের যোগাযোগ চলছে।
- বার্সায় মেসির সেরা মুহূর্ত?
সবকিছুর শুরু ছিল সেদিন, আমার স্বপ্ন পূরণ হওয়ার দিন।
আমি বার্সায় থাকার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। লাপোর্তাও চেষ্টা করেছেন অথচ অনেকেই ভাবছে আমি নাকি থাকতে চাই নি। আমি সবসময়ই বার্সায় থাকতে চেয়েছি কিন্তু লা লিগার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।
এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মেসি। উপস্থিত থাকা গণমাধ্যম কর্মীদের চোখেও পানি দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর মেসি ধাতস্থ হলে পুনরায় শুরু হয় সংবাদ সম্মেলন।
আমি কখনো কল্পনাও করিনি আমাকে বিদায় বলতে হবে কারণ আমি কখনো চিন্তাই করতে পারিনি কখনো আমাকে বার্সা ছেড়ে চলে যেতে হবে। গতবছর ফ্যানদের ছাড়ায় খেলেছি। এখন বিদায়ের সময়েও তাদের চিৎকার শুনতে পাচ্ছি না ন্যু ক্যাম্পে। খুব কষ্ট হচ্ছে।
বার্সায় অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি আমরা। কিছু খারাপ সময়ও কাটিয়েছি তবে সেটা আমাকে উন্নতি করতে এবং আজকের মেসিতে পরিণত হতে সাহায্য করেছে। আমি থাকতে রাজি হয়েছিলাম যেটা সবাই চেয়েছিল। কিন্তু আজকে আমাকে বিদায় বলতে হচ্ছে।
এই বছরটা আমার জন্য অনেক কঠিন। ক্যারিয়ারের এত কঠিন কোনো মুহূর্ত আমার জীবনে আসেনি। গত বছর আমি ক্লাব ত্যাগের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। এজন্য ব্যুরোফ্যাক্সও পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এ বছরের জন্য কক্ষনো না। এটা আমাদের বাড়ি এবং বার্সাকে আমরা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। ২১ বছর পর আমি আমার স্ত্রী এবং তিন আর্জেন্টাইন-কাতালান নিয়ে চলে যাচ্ছি। আমরা ফিরে আসব, এটাই আমাদের বাড়ি এবং আমি আমার বাচ্চাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করছি।
এরপর মেসি তাঁর পরিবার, সতীর্থ, ক্লাব কর্তাদের সাথে ব্যক্তিগত ছবি তোলে অশ্রুসজল চোখে সংবাদ সম্মেলনের কক্ষ ত্যাগ করেন।