সেরার লড়াইয়ে পেলে-মেসি!

কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম। মাস দুয়েক আগে এক ফুটবল মহামানবের শ্রেষ্ঠত্বের পদচিহ্ন অঙ্কিত হয়েছিল এই মাঠেই। মেক্সিকোর সেই অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামে একদিন কেউ একজন ফুটবল ঈশ্বরে পরিণত হয়েছিলেন ৷ এরপর তিন যুগের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে ফুটবল ঈশ্বরের উত্তরসূরি হওয়ার যাত্রায় অর্জনে, গর্জনে পূর্ণতা আসে লুসাইলে। 

কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম। মাস দুয়েক আগে এক ফুটবল মহামানবের শ্রেষ্ঠত্বের পদচিহ্ন অঙ্কিত হয়েছিল এই মাঠেই। মেক্সিকোর সেই অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামে একদিন কেউ একজন ফুটবল ঈশ্বরে পরিণত হয়েছিলেন ৷ এরপর তিন যুগের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে ফুটবল ঈশ্বরের উত্তরসূরি হওয়ার যাত্রায় অর্জনে, গর্জনে পূর্ণতা আসে লুসাইলে। 

অ্যাজটেকা থেকে লুসাইল। একই চিত্র। একই দলের বিশ্বজয়। বিশ্বকাপ হাতে দুই মহাতারকার উদযাপনও একই। যেন ওপার থেকে কেউ একজন পুরো চিত্রনাট্যটাই তৈরি করছেন। 

কিন্তু, দুই জন একে অপরের বিশ্বজয় হওয়াটা কেউই স্বচক্ষে দেখতে পারেননি। ডিয়েগো ম্যারাডোনা যখন বিশ্বকাপ হাতে আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপের স্বাদ দিয়েছেন, তখন পৃথিবীতে আলোর মুখই দেখেননি মেসি। আর মেসি যখন ২০২২ সালে লুসাইলে ফাইনাল জিতে আর্জেন্টিনার দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটালেন তখন ম্যারাডোনা আর পৃথিবীতে নেই, ওপারে আছেন। 

দুজন দুজনের শ্রেষ্ঠত্ব দেখেননি ৷ কিন্তু তারপরও অদ্ভুত মিল। কারণ আর্জেন্টিনার তিন যুগের ব্যবধানে প্রধান কাণ্ডারি তো এ দুজনই। তবে মেসির বিশ্বকাপ জেতার আকাঙ্ক্ষায় বারবারই একটা প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসতো, মেসি কি কখনও ম্যারাডোনা হতে পারবেন? 

এমন প্রশ্নের উদয় একজন বিশ্বকাপহীন মেসির কাছে। কিন্তু বিশ্বকাপজয়ী মেসির কাছে প্রশ্নটা এবার তা পাল্টে হয়ে গেল, মেসি কি তবে ম্যারাডোনাকে ছাপিয়ে গেলেন? 

আগের কিংবদন্তিদের ছাপিয়ে যাওয়া ব্যাপারটার সাথে ফুটবল ইতিহাস তেমন পরিচিত না। তেমন কিছুর যোগান ঘটলেও ইতিহাসবেত্তারা নতুন ইতিহাস সৃষ্টিকারীকে পরের কাতারেই রাখেন। কিন্তু মেসির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হল আলাদা। কেউ কেউ ম্যারাডোনার সমপর্যায়ে রাখছেন, আবার কেউ কেউ ম্যারাডোনাকে ছাপিয়ে যাওয়ার কথাও বলছেন অকপটে। 

তবে মেসির তো দ্বৈরথ ম্যারাডোনার সাথে নয়। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো তাকে দৌড়ের উপরে রেখেছেন। কে সেরা, এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে প্রচুর। কিন্তু বিশ্বকাপ জেতার পরে সেই বিতর্ক মেসি যেন নিজেই দূরে ঠেলে দিয়েছেন। 

কাতার বিশ্বকাপের ব্রাত্য রোনালদোর বিপরীতে মেসি পেয়েছেন চূড়ায় ওঠার মত সাফল্য। তাই ফুটবল বিশ্লেষকদের মত, মেসি-রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্বের মতে, মেসি অনেক খানি এগিয়ে গিয়েছেন। সেখান থেকে মেসিকে টপকানো রোনালদোর পক্ষে অসম্ভবই বটে।

তবে কি মেসিই সর্বকালের সেরা? এমন প্রশ্নে কিছুটা থামতেই হয়। ভাবনার গভীরে ডুব দিতে হয়। বিটি স্পোর্টসের এক অনুষ্ঠানেও এমন দশা হয়েছিল ফুটবল বিশ্লেষক সীমা জেসওয়ালের। তাঁর কাছে, রোনালদো-মেসি বিতর্ক আপাতত শেষ। তবে মেসির সাথে একজন ফুটবলাররেই তুলনা হতে পারে। 

তিনি ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে। ব্রাজিলের হয়ে তিন বিশ্বকাপজয়ী এ ফুটবলার অবশ্য মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখে যেতে পেরেছেন। নিজের অনেক সাক্ষাৎকারে মেসিকেই তিনি সময়ের সেরা ফুটবলার বলেছেন। তবে তুলনাটা যখন মেসির সাথে চলে আসে তখন অনেক গুলো মানদণ্ড হাজির হতে বাধ্য। 

পেলে তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন, মেসি একটি। কিন্তু পেলের কোনে কোপার শিরোপা নেই, মেসির রয়েছে। আর পেলে কখনও ইউরোতে খেলেননি। মেসি সেখানে ইউরোতে সর্বজয়ী ছিলেন। 

তুলনাটা দিন শেষে অবান্তর। কারণ দুই জনের সময়কালের বড় একটা ফারাক। তবে সীমা জেসওয়াল সর্বকালের সেরার লড়াইয়ে এ দুজনকেই রাখছেন। তাঁর মতে, রোনালদো, কিংবা রোনালদো নাজারিও, দুজনকেই মেসি টপকে গিয়েছেন বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে। মেসি এখন থাকবেন পেলের কাতারে। 

তিনি এ ব্যাপারে আরো যুক্ত করে বলেন, ‘বিতর্ক কখনও শেষ হয় না। আপনি চাইলেই এটি চালিয়ে যেতে পারেন। তবে এই বিশ্বকাপ মেসিকে পূর্ণতা দিয়েছে। সে এখন রোনালদোর উপরে। আপনাকে সেটা মানতেই হবে। তাঁর সাথে এই মুহূর্তে একজনকেই আপনি তর্কের খাতিরে আনতে পারেন। তিনি পেলে।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...