টানা নয় ম্যাচ জয়শূন্য বাংলাদেশ। এই নয় ম্যাচের সাতটিতেই হেরেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা, বাকি একটিতে ড্র আর একটি ম্যাচে বৃষ্টির কারনে প্রায় অবধারিত পরাজয় থেকে রক্ষা পেয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে শুরু এরপর শ্রীলঙ্কা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ।
পুরো দলের যখন এমন দুরাবস্থা, হারতে হারতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে তখন আবারো উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
অবশ্য এবার টানা পরাজয়ের ধারা ভাঙ্গার আশা করছেন ভক্ত-সমর্থকরা। কারন ম্যাচটি হতে যাচ্ছে ওয়ানডে ফরম্যাটে, বাংলাদেশ দলের প্রিয় ফরম্যাট। তাছাড়া সর্বশেষ জয়টিও এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, এই ওয়ানডেতেই। তার উপর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ওয়ানডে সুপার লিগে বেশ শক্ত অবস্থানে আছে টিম টাইগার্স। আইসিসি র্যাংকিংয়েও ক্যারিবিয়ানদের চেয়ে নিরাপদ দূরত্বেই আছে বাংলাদেশ।
পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাট বলে প্রত্যাশাটা-ও বড়, তবে প্রত্যাশার আকাশে ঘনীভূত হয়েছে শঙ্কার কালো মেঘ। বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার, আর সেই মিডল অর্ডারের ভিত্তি মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। কিন্তু দলের এমন ভঙ্গুর অবস্থায় বাংলাদেশকে খেলতে নামতে হচ্ছে অন্যতম নির্ভরযোগ্য এই সেনানীকে ছাড়াই।
২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকেই বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটে পরাশক্তি হয়ে উঠেছে। আর এমন উন্নতির পিছনে যে কয়েকজন খেলোয়াড়ের প্রত্যক্ষ অবদান আছে তাদের তালিকায় উপরের সারিতে থাকবেন মুশফিক। অথচ অভিজ্ঞ এই ব্যাটারকে ছাড়াই এবার বাংলাদেশকে নামতে হচ্ছে স্বাগতিক উইন্ডিজের বিপক্ষে। দুশ্চিন্তার কারন শুধু মুশফিকের অনুপস্থিতি-ই নয়।
উইন্ডিজ সিরিজের ওয়ানডে ম্যাচগুলো সুপার লিগের অন্তর্ভূক্ত নয় আর তাই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও ছুটি নিয়েছেন। আসন্ন তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দেখা যাবে না এই তারকাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাকিবের গুরুত্ব আসলে সংখ্যায় কিংবা বর্ণে ফুটিয়ে তোলা যায় না। সাকিব থাকলে একজন পুরোদস্তুর টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে যেমন পাওয়া যায়, তেমনি মূল স্ট্রাইক বোলারের দায়িত্বও পালন করতে পারেন তিনি।
সাকিব আল হাসান দলে থাকলে তিন নম্বরেই ব্যাট করতেন। আর এই পজিশনে তার ব্যাটিং পরিসংখ্যান এমন – ৩৫ ইনিংসে ১৪৯৪ রান, গড় ৪৯.৮৭ আর স্ট্রাইক রেট ৮৬.৮৩। তিন নম্বর পজিশনে বাংলাদেশের অন্য যেকোনো ব্যাটসম্যানের চেয়ে সাকিবের পারফরম্যান্স অনেক বেশি ভাল।
অন্যদিকে মুশফিক তো চার নম্বরে বিশ্বসেরাদের একজন। এই পজিশনে এখন পর্যন্ত ১১০ ইনিংসে ৪১৯৩ রান করেছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ব্যাটিং গড় ৪৩.২৩ এবং স্ট্রাইক রেট ৮২.৩৯। অভিজ্ঞতা, ধারাবাহিকতা, টেকনিক সব দিক দিয়েই দেশসেরা ব্যাটার তিনি।
বোঝাই যাচ্ছে, এমন দুই টপ ক্লাস পারফর্মারদের অনুপস্থিতি বাংলাদেশের মিডল অর্ডারে বড় ধরনের ঘাটতি সৃষ্টি করবে। আর এই ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশের প্রথম পছন্দ ছিলেন ইয়াসির আলী রাব্বি। অনেকদিন দলের সাথে থাকার পর চলতি বছরেই অভিষেক হয়েছিল তার। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুন এক হাফসেঞ্চুরি করে সামর্থ্যের প্রমান দিয়েছিলেন।
সাকিব-মুশফিকের অবর্তমানে যখন এগিয়ে আসার কথা ছিল রাব্বির, তখনই ভাগ্যের পরিহাসে আঘাত হেনেছে ইনজুরি। পিঠের ইনজুরিতে পড়ে ইতোমধ্যে দেশে ফিরে যেতে হয়েছে চট্টগ্রামের এই ব্যাটসম্যানকে। এই মুহূর্তে তরুনদের মাঝে মিডল অর্ডারে সবচেয়ে সেরা পছন্দ ছিলেন তিনি। সবমিলিয়ে এখন সাকিব, মুশফিক আর রাব্বি না থাকায় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ বড় ধরনের সংকটেই পড়েছে।
আপাতত সংকট উত্তরণের জন্য দুইটি পথ খোলা আছে নির্বাচকদের। প্রথমত মাহমুদউল্লাহকে উপরে উঠিয়ে আনা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তাকে চার বা পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করতে হতে পারে। একই কাজ করা যেতে পারে আফিফের ক্ষেত্রেও।
সাত নম্বরের ফিনিশিং রোল ছেড়ে তাকে হয়তো মিডল অর্ডারের দায়িত্ব দিবে নির্বাচকরা। এমনটা হলে দলের ছয়, সাত নম্বরে দেখা যেতে পারে নুরুল হাসান সোহান আর মোসাদ্দেক সৈকতকে। মোসাদ্দেক নিজেও অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেটে মিডল অর্ডারেই ব্যাটিং করেন। তাই তার উপর ভরসা করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
অন্য আরেকটি উপায় হতে পারে ২০১৯ বিশ্বকাপের মত লিটন দাসকে মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে পাঠানো। যদিও সেই বিশ্বকাপে পাঁচ নম্বরেই বেশি ব্যাট করেছেন তিনি, এবার হয়তো মুশফিকের রেখে যাওয়া চার নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে আসবেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। এমনটা হলে তিন নম্বরে আরেকবার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
তামিম ইকবাল এবং এনামুল হকের ওপেনিং জুটির উপরই হয়তো ভরসা করতে হতে পারে বাংলাদেশকে। তবে ইনফর্ম লিটনকে ওপেনিং পিজিশন থেকে সরানো ঠিক হবে কিনা সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। এখন এই দুইটি উপায়ের মাঝে কোনটি গ্রহন করা হবে সেটি নির্ভর করছে মোসাদ্দেক নাকি শান্ত কার উপর ভরসা করবে টিম ম্যানেজম্যান্ট। এক্ষেত্রে সাকিব না থাকায় দলে বাড়তি বোলিং অপশন বিবেচনায় অবশ্য এগিয়ে থাকবেন মোসাদ্দেক সৈকত।
দল নির্বাচন যেমনই হোক, আপাতত মুশফিক কিংবা সাকিবের অভাব পূরণ করার মত কেউ কোচের হাতে নেই। আর তাই অভিজ্ঞ এই দুইজনকে বাদ দিয়ে তরুনদের নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে রাসেল ডোমিঙ্গোকে।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যে কাউকে হারাতে পারে – সেই হিসেবে উইন্ডিজকে হারানো উচিতই বটে। টি-টোয়েন্টি কিংবা টেস্টে ছন্নছাড়া টাইগাররা অন্তত নিজদের প্রিয় ফরম্যাটে স্বরূপে ফিরবেন এমনটা আশা করাই যায়।