বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারত-পাকিস্তান লড়াই মানেই একপেশে, সাদামাটা এক ম্যাচ। দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে ভারতের বিপক্ষে জয়ের দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও বিশ্বকাপের মঞ্চে বার বার ভারতের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে পাকিস্তান। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছাড়া বিশ্বকাপের মঞ্চে কোনো ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে জয়ের দেখা পায়নি পাকিস্তান। সেই ১৯৯২ থেকে শুরু এরপর বিশ্বমঞ্চে পাঁচ বারের দেখায় সবকটি ম্যাচেই হেরেছে পাকিস্তান।
ভক্ত-সমর্থকদের কাছে বরাবরই এক উত্তেজনাকর লড়াই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথটা ক্রিকেট ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে ভিন্ন মাত্রায়। দুই দেশের লড়াইটা ক্রিকেটের চেয়েও অনেক বেশি। তাই এই লড়াই নিয়ে আমেজটা অন্য ম্যাচের চেয়ে কয়েকগুন বেশি থাকে।
২০০৩ বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তানের লড়াইটা মনে আছে? সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে সেই বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারায় ভারত। পাকিস্তানের দেওয়া ২৭৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শচীন টেন্ডুলকারের ৯৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংসে ৬ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত।
মোহাম্মদ কাইফের সাথে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১০২ রান যোগ করেন শচীন। দু’জনের অনবদ্য জুটিতে জয়ের ভিত পায় ভারত। শেষদিকে, রাহুল দ্রাবিড় ও যুবরাজ সিং’য়ের ব্যাটে সহজ জয় তুলে নেয় সৌরভের দল।
ওই ম্যাচে শচীনকে আউট করার সুযোগ অবশ্য এসেছিল পাকিস্তানের। তবে ওয়াসিম আকরামের বলে মিড অফে ক্যাচ মিস করে সেই সুযোগ হাতছাড়া করেন আব্দুল রাজ্জাক। সেদিনের কথা মনে করে কাইফ জানালেন রাজ্জাক মিড অফে নয়, বোলারের খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলেন।
শোয়েব আখতারের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সাবেক ভারতীয় তারকা মোহাম্মদ কাইফ বলেন, ‘আসলে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ তো বাড়তি উত্তেজনা। এই ম্যাচ দেখার জন্য প্রচুর সমর্থক আসে। রাজ্জাক যদি মিড অফে শচীনের ক্যাচটা ধরতো তাহলে ম্যাচটা অনেক কঠিন হত। আমার মনে আছে ওয়াসিম আকরাম ওর উপর খুব রাগ হয়েছিল একটু দূরে দাঁড়ানোর কারণে। সে আসলে বোলারের কাছাকাছি ছিল, পুরোপুরি মিড অফে ছিল না।’
সেদিনের স্মৃতিচারণা করে কাইফ আরও বলেছেন, ‘শচীন খুব ভাল ব্যাটিং করছিল। আমার ভূমিকা ছিল তাঁকে সাপোর্ট দেওয়া, টিকে থাকা। আমাকে বলা হয়েছিল শচীনের সাথে একটা জুটি গড়তে। আর যদি সে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে তাহলে আমি যেন সেখানে আরেকপ্রান্তে টিকে থাকি। আমি আমার ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করেছি।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ৬০ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন কাইফ। ইনিংসের ২২তম ওভারে শহীদ আফ্রিদির বলে আউট হয়ে ফেরেন এই ভারতীয় তারকা।
সেদিন প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার সাঈদ আনোয়ারের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটে ২৭৩ রানেএ চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাঁড় করায় পাকিস্তান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শচীনের ৭৫ বলে ৯৮ রানের ঝড়ো ইনিংসের পর দ্রাবিড়ের অপরাজিত ৪৪ ও যুবরাজের ফিফটিতে ৬ উইকেট হাতে রেখেই জয় পায় ভারত।
সেমিফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে সেবার ফাইনালে পৌঁছে যায় ভারত। তবে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১২৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে শিরোপা জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয় ভারতের। অপরদিকে, বাজে পারফরম্যান্সে প্রথম পর্বেই বিদায় নেয় পাকিস্তান।