রিজওয়ান, দ্য রান মেশিন

সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস আর নিজের পরিশ্রম - এই দুইয়ে ভর করে তিনি এগিয়েছেন। ধীরে ধীরে পারফরম্যান্স  দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করেছেন, সুযোগ পেয়েছেন পাকিস্তানের হয়ে ওপেন করার।

অথচ ক্যারিয়ারের শুরুটা তাঁর একদমই এতটা ঝলমলে ছিল না। বেশিরভাগে ম্যাচেই নামতে হতো লেট মিডল অর্ডারে। সেখান থেকে আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে কম ধকল পোহাতে হয়নি মোহাম্মদ রিজওয়ানকে। বহু দুর্গম গিরি, কান্তার মরু পেরিয়েই বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিশেষ করে টি টোয়েন্টিতে তিনি যেন অপ্রতিরোধ্য। ২০২১ সালের পর থেকে অবিশ্বাস্য ৬৯.৭৯ গড়ে রান করেছেন দুই হাজারের বেশি।

পাকিস্তান দলে যখন আবির্ভাব মোহাম্মদ রিজওয়ানের, তখন জাতীয় দলের অধিনায়ক এবং উইকেটরক্ষক হিসেবে আছেন সরফরাজ আহমেদ। ফলে বেশিরভাগ ম্যাচেই বেঞ্চে কাটাতে হতো রিজওয়ানকে। একাদশে থাকলেও ব্যাট করার সুযোগ পেতেন না খুব একটা, নামতে হতো শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে। প্রথম ২৬ ম্যাচে কোনো ফিফটি করতে পারেননি, গড় ছিল মাত্র ১৭।

কিন্তু, কখনো হাল ছাড়েননি তিনি। লিখেছেন ফিরে আসার এক অদম্য গল্প। সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস আর নিজের পরিশ্রম – এই দুইয়ে ভর করে তিনি এগিয়েছেন। ধীরে ধীরে পারফরম্যান্স  দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করেছেন, সুযোগ পেয়েছেন পাকিস্তানের হয়ে ওপেন করার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। 

গত কয়েক সিরিজে পাকিস্তানের জয়ের ম্যাচগুলোতে একটা দৃশ্য খুব নিয়মিত দেখা যাচ্ছে। হয় বাবর নয়তো রিজওয়ান, দুই ওপেনারের একজন খেলা শেষ করে আসছেন। আর যেদিন ব্যর্থ হচ্ছেন এই দুজন সেদিন পরাজয়ই ভাগ্যে মিলছে পাকিস্তানি ভক্ত সমর্থকদের।

তবে ২০২১ সালের পর থেকেই যেন জীবনের চূড়ান্ত ফর্মে আছেন রিজওয়ান। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত তাঁর চেয়ে বেশি রান করতে পারেননি কেউই। মাঠ নামলেই রান করাটাকে রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন। কিছুটা ধীরগতিতে শুরু করলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে বেরিয়ে আসেন খোলস ছেড়ে। স্ট্রাইকরেটটাও তাই মন্দ নয়, ১৩০ ছুঁই ছুঁই। বড় ইনিংস খেলতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।

সর্বশেষ ১৫ ইনিংসের মাঝে পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস খেলেছেন ৮ বার। পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখাও, লাহোরে দক্ষিন আফ্রিকা পেসারদের সামলে খেলেছিলেন অপরাজিত ১০৪ রানের ইনিংস। ২০২১ সালে আইসিসির সেরা টি টোয়েন্টি ক্রিকেটারের খেতাব জেতেন এই ব্যাটসম্যান।

এই সময়টাতে তাঁর সাথে পাল্লা দিয়ে রান করতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যানই। এমনকি ধারেকাছেও নেই কোনো ব্যাটার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তাঁরই ওপেনিং পার্টনার এবং পাকিস্তান জাতীয় দলের অধিনায়ক বাবর আজমের সাথে তাঁর ব্যবধান প্রায় ৭০০ রানের। অন্যদিকে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মার চাইতে প্রায় দ্বিগুণের বেশি রান করেছেন এই সময়টাতে।

এতেই স্পষ্ট কতোটা ধারাবাহিকভাবে ব্যাট করেছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। কেবল পাকিস্তানে নয়, নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও রান করেছেন সমান গতিতে। পেস এবং স্পিন দুই ধরনের বোলিংয়ের বিরুদ্ধেই সমান সাবলীল তিনি। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছেন ৭৮ রানের দারুণ এক ইনিংস। 

২০০৯ সালে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বলার মতো সাফল্য নেই পাকিস্তানের। বিগত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বাদ পড়তে হয়েছে সেমিফাইনাল থেকে। সেদিন অবশ্য রিজওয়ান ভালো ব্যাটিং করলেও ম্যাচ হার‍তে হয়েছিল ম্যাথু ওয়েড নামের এক অতিমানবের কাছে। বছর পেরিয়ে দরজাও কড়া নাড়ছে আরেকটি টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

রিজওয়ান এখন আরো ধারাবাহিক, আরো অভিজ্ঞ। এই বিশ্বকাপে ২০০৯ সালের পুনরাবৃত্তি করতে চাইলে ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে রিজওয়ানকে, অন্যথায় আরও একবার স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পুড়তে হবে পাকিস্তানকে।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...