মোহাম্মদ শামি এবং আপাত বঞ্চনার গল্প

একটা ক্রিকেট দলে এগারো জন কীভাবে নির্বাচিত হয়? ভারতের ক্ষেত্রে আলাদা কিছু হয়?

আসলে টিম ম্যানেজমেন্টই হোক বা অধিনায়ক-ম্যানেজার। দল গঠন করার আগে কিছু কিছু পরিকল্পনা করে। যেই প্রথম চারজন ব্যাটার ঠিক হয়ে গেল, তখনই পরের তিনজন অর্থাৎ রাহুল, হার্দিক আর জাদেজাকে নিয়ে একটা অলরাউন্ডার ইউনিট।

এখন সমস্যা হচ্ছিল ভারতের ক্ষেত্রে যে চার নম্বরে শ্রেয়াস সুস্থ ছিল না, ফলে দুম করে আউট হয়ে গেলে নিচের উপর চাপ পড়ছিল। তখন লেজ লম্বা না করার চিন্তা হয়েছিল। এখন এখানে তিনজন চলবে। এক শার্দূল, দুই দীপক চাহর আর তিন ওয়াশিংটন সুন্দর। কেউ কেউ শিবম দুবের কথা বলবে, কিন্তু বোলিং তার ৪-৫ ওভার করার মতো নয়। দীপকের চোট হবার ফলে শার্দূলই প্রথম চয়েস হয়ে গেছিলেন, কারণ দুটি। এক ভারত বোলিং লাইন আপে একজন স্পিনিং অলরাউন্ডার নয় সিম আপ বোলার চাইছিল। যিনি বিশেষ করে মিডল ওভারগুলো করে দিতে পারবেন।

প্রয়োজনে ডেথ ওভার। শার্দূলকে এইজন্যই ভাবা হয়েছিল। এবং অক্ষরের চোট হতে সুন্দরের জায়গায় অশ্বিনকে ভাবা হয়েছে ম্যাচ বাই ম্যাচ হিসাবে। এখন তিরিশ ওভারে ৭ উইকেট পড়ে গেছে, এই পরিস্থিতিতে শার্দূল খান পনেরো ওভার এস্ট্যাবলিসড ব্যাটারের সঙ্গে খেলে দেবে এটা আশা করা যায়। শামিকে যায় না। চিন্তা করে দেখ ইংল্যন্ড ম্যাচটা।

শামি বল মিস করেছে, উইকেট কিপারের কাছে বল, এই অবস্থায় শামির উইকেটের ভিতরে থাকা উচিত ছিল, যাতে উইকেটে বল লাগলেও আউট না হয়, ততক্ষণে জাদেজা পৌঁছে যাবে আর শামি নন স্ট্রাইকিং এন্ডে ছুটবে যাতে জাদেজা একটা বল বেশি পায়। সেটা শামি করতে পারেনি, রান আউট হয়ে যায়। এখানেই সামান্য ব্যাটিং সেন্সওলা ব্যাটারের দরকার পড়ে। এটা টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনা ছিল।

এবারে শামি। শামি কেন তৃতীয় চয়েস! বুমরাহ-র কথা বলারই প্রয়োজন নেই, কিন্তু সিরাজ ভার্সাটাইল বোলার। সে সিম আপ বোলিং যেমন করতে পারে তেমনই ওয়াবল সিম বা ক্রস সিমও করতে পারে। শুরুতে উইকেট তুলবে, মাঝে তুলবে এবং শেষেও।

শামির ক্ষেত্রে সিম পজিশন দুর্দান্ত রেখে বল করবে স্যুইং করবে সিম করবে। অভিজ্ঞতা বেশি কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত ফর্ম। সিরাজের ফর্ম টেস্ট বা এক দিনের, উভয় ক্ষেত্রেই দুর্দান্ত ছিল। শামির ঠিকঠাক ছিল। উইকেট পাচ্ছিলেন, কিন্তু রানও দিচ্ছিলেন। এই অবস্থায় সিরাজকেই ধরা হয়েছে। এটাও টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনা ছিল।

সিরাজকে শুরুর দিকে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছিল উইকেটের জন্য যাবার। স্যুইং না হলেও চেষ্টা চলছিল, বল সামনের পায়ে খেলানোর চেষ্টা চলছিল। তারপর দ্বিতীয় তৃতীয় স্পেল থেকে তার ওয়াবল সিম বা ক্রস সিম। পিচ অনুযায়ী বল করা, বাকিদের জন্য বল তৈরি করা।

এখন শামিকে তৈরি রাখা হচ্ছিল। মামব্রে নিয়মিত কাজ করছিলেন তাঁর সঙ্গে। এটা কাল শামির পাঁচ উইকেট পাবার পর টাক দেখানো থেকেই বোঝা গেছে কতটা কৃতজ্ঞ। শামির রিদম সবসময় এ ওয়ান থেকেছে এই কারণেই।

কী হয়, কোনও টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা একেবারে খেটে গেছে ১০০য় ১০০টা এটা হয় না। একটা প্রাথমিক পরিকল্পনা থাকে, তারপর তার বিকল্প থাকে। হার্দিকের চোট হতে, বিকল্পটিই প্রাথমিক হয়ে যায়। এবং হার্দিক দলের বাইরে যাবার সঙ্গে সঙ্গে অশ্বিন এবং শার্দূলের অপশনও শেষ হয়ে যায়। আর প্রস্তুত শামি ঘোড়ার মতো ছুটছেন। টিম ম্যানেজমেন্টের কাজ এটাই। খেলবে ১১, কিন্তু তৈরি থাকবে ১৫।

এবারে ভাবুন ঈশান কিষান, একদিনের ম্যাচে ২০০ করা একটা ব্যাটার। বসে আছে, সেও কান্নাকাটি করুক! অশ্বিনও করুক! আসলে এভাবে তো হয় না। একটা পরিকল্পনা নিয়ে, কিছু চান্স নিয়েই একটা খেলা হয়। কাজ করে কখনও, কখনও করে না। তাতে কনস্পিরেসি থিওরি খুঁজতে গেলে অবশ্য অন্য কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link