তিনের শূন্যগল্প

টেস্ট ক্রিকেটে নানন্দনিক ব্যাটারদের কদর সেই আদিকাল থেকেই। বহু ব্যাটাররা তাঁদের অসাধারণ সব ব্যাটিং শৈলীতে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন বিশ্ব ক্রিকেটকে এবং অবশ্যই ক্রিকেটের ভক্ত-সমর্থকদের। তবে মুদ্রার দুইটি দিকের মতোই পৃথিবী নন্দিত ব্যাটারদের বেশকিছু এমন রেকর্ড রয়েছে যার অংশ হয়ত তাঁরা হতে চাননি তাঁদের খেলোয়াড়ি জীবনে। এই যেমন ধরুন, শূন্য রানে প্যাভিলনে ফেরা।

তাছাড়া টেস্ট কিংবা যেকোন ফরম্যাটে নম্বর তিন ব্যাটিং পজিশনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার নিতে অনেক নান্দনিক ও নন্দিত ব্যাটাররাও বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হয়ে নিজের রানের খাতা না খুলেই পাড়ি জমিয়েছিলেন সাঁজঘরের দিকে। টেস্টে এমন নেতিবাচক রেকর্ডে নিজেদের নাম লেখানো ব্যাটারদের নিয়েই আজ চর্চা হবে।

  • চেতেশ্বর পুজারা (ভারত)

বর্তমানে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন ভারতীয় টেস্ট দলের ব্যাটিং স্তম্ভ চেতেশ্বর পুজারা। গেলো বেশকিছু টেস্টে রান খরায় ভুগছেন তিনি। তবে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজের ধারাবাহিক পারফর্মেন্সে ভারতের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের তিন নম্বর পজিশনে নিজেকে থিতু করে রেখেছিলেন। এই পজিশনে দায়িত্ব নেওয়া ইনিংস খেলার পাশাপাশি সাফল্যেরও দেখা পেয়েছেন বহুবার। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে শূন্য রানে আউট হয়ে যাওয়ার ঘটনার সাক্ষীও হয়েছেন তিনি বহুবার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়ন টেস্টের প্রথম ইনিংসের শূন্য রানে আউট হওয়া মিলিয়ে পুজারার ক্যারিয়ারের নম্বর তিন পজিশনে ব্যাটিং করতে নেমে ডাক মারার সংখ্যা নয়টি। যৌথভাবে তিনি রয়েছেন আজকের তালিকার পঞ্চমস্থানে।

  • রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক কিংবা ব্যাটার যেকোন বিশেষণে বিশেষায়িত করা যাবে রিকি পন্টিং-কে। ক্যারিয়ারে ১০০টি টেস্ট জয়ের সাক্ষী হয়ে রয়েছেন রিকি পন্টিং। তাছাড়া অধিনায়ক হিসেবেও সাফল্যের কমতি নেই তাঁর। টেস্টে ১৩০০০ রানের মাইলফলক পাড় করেছেন ৪১টি শতকে। অজিদের বনেদি ক্রিকেট ইতিহাসের সাদা পোষাকে রান সংগ্রাহকদের তালিকার শীর্ষে থাকা পন্টিং রয়েছেন আজকের একটু ভিন্নমুখি আলোচনার পঞ্চমস্থানে। তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে পন্টিং ম্যাচ খেলেছেন ১৬৮টি। এই ১৬৮টি টেস্টের বেশিরভাগ সময়ই তিনি খেলেছেন নম্বর তিন পজিশনে। গুরুত্বপূর্ণ এই পজিশনে নয় বার তিনি কোন রান না করেই ফিরেছিলেন ড্রেসিংরুমে।

  • কুমার সাঙ্গাকারা (শ্রীলঙ্কা)

শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটার কুমার সাঙ্গাকারা এ বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। তাছাড়া লঙ্কানদের মধ্যে অন্যতম সফল ব্যাটার হিসেবেও তাঁকে বিবেচনায় নেওয়া যায়। বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেটকে ব্যাট হাতে শাসন করা ব্যাটারদের মধ্যে বর্তমানে তাঁর অবস্থান ছয় নম্বরে। প্রায় ১২৪০০ রান করেছেন তিনি তাঁর দীর্ঘ টেস্ট ক্যারিয়ারে। সাঙ্গাকারা ১৩৪টি টেস্ট ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন লঙ্কানদের হয়ে। মূলত নম্বর তিনেই ব্যাট করতে তিনি অত্যন্ত স্বাছন্দ্য বোধ করতেন। কিন্তু নিজের এই পছন্দের পজিশনেও দশ বার ডাক মেরেছিলেন ক্রিকেটের কিংবদন্তি এই লঙ্কান ব্যাটার কুমার সাঙ্গাকারা। তাই তিনি থাকছেন চতুর্থ স্থানে।

  • ডেভিড বুন (অস্ট্রেলিয়া)

আশির দশক থেকে নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে অস্ট্রেলিয়া দলের আস্থার প্রতীক ছিলেন ডেভিড বুন। টেস্টে ছিলেন নিয়মিত মুখ। ডান-হাতে ব্যাটিং এর পাশপাশি তিনি অফ স্পিন বোলিং টাও বেশ ভালই করতে জানতেন। নিজের ক্যারিয়ারে ১০৭টি ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন অজিদের হয়ে। প্রায় ৪৩.৬৫ গড়ে ৭৪২২ রান রয়েছে তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে। মুদ্রার ভিন্ন দিকের মতো তাঁর ক্যারিয়ারে ডাক মারার ঘটনাও ঘটেছে ১১ বার। তিনে ব্যাটিং করতে নামা ব্যাটারদের মধ্যে তাই আজকে তাঁর অবস্থান তিন নম্বরেই।

  • হাশিম আমলা (দক্ষিণ আফ্রিকা)

নিজের কব্জিটা ব্যবহার করে দারুণ সব গ্যাপশট খেলতে ওস্তাদ ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার হাশিম আমলা। তাঁর ব্যাটিং দক্ষতার জন্যে তিনি বেশ নন্দিত ও প্রশংসনিত হয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারে। প্রোটিয়া টেস্ট দলে ভরসার আরেক নাম ছিলেন হাশিম আমলা। লাল বলের ক্রিকেটে হাশিমের ব্যাট হেসেছে বহুবার। চারটি দ্বিশতকের সাথে ২৮টি শতক হাঁকিয়েছেন তিনি। নয় হাজার রানের ঘরও পার করেছেন হাশিম আমলা। পক্ষান্তরে ১২৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ১১ বার তিনি ফিরেছিলেন শূন্যরানে।  উত্থান-পতন নিয়েই মানুষের জীবন। 

  • আজহার আলী (পাকিস্তান)

প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দিবা-রাত্রি টেস্টে একাধারে শতক, দ্বিশতক ও ত্রিশতক হাঁকানোর রেকর্ড নিজের দখলে রেখেছে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আজহার আলী। ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩০২ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলে এমন কীর্তি গড়েন আজহার আলী। পাকিস্তানের এই অভিজ্ঞ ব্যাটার এখন মূলত পুরোদস্তুর একজন টেস্ট খেলোয়াড়। এখন অবধি তিনি খেলেছেন ৯১টি টেস্ট ম্যাচ। ৬৭২১ রানের ক্যারিয়ারে যে রেকর্ডটির অংশ তিনি নিঃসন্দেহে হতে চাননি তা হচ্ছে সর্বাধিকবার টেস্ট ক্রিকেটে শূন্যরানে ফেরার রেকর্ড। কিন্তু আফসোস তিনি রয়েছেন সেই তালিকার শীর্ষে ১৪টি ডাক নিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link