ভারত তথা ক্রিকেট বিশ্বের সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের কথা আসলে উপরের দিকেই থাকবেন সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পর ভারতের সেরা অধিনায়ক হিসেবেই তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরেই শিরোপা জয়, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা, টেস্টের এক নম্বরে তোলা- সব মিলিয়ে ভারতের সেরা অধিনায়কের জায়গাটা নিজের করে নেন ধোনি।
২০০৪ সালে প্রথম জাতীয় দলে জায়গা পান ধোনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছিলেন সাবেক এই তারকা। সেসময় ধোনির উইকেটকিপিং সামর্থ খুব যে দুর্দান্ত ছিলো এমন নয়! তবে তিনি ছিলেন ভবিষ্যত সম্ভাবনাময় এক তারকা। দীনেশ কার্তিক, পার্থিব প্যাটেলদের হটিয়ে পরের ২ বছরেই দলে নিজের জায়গাটা পাঁকা করে নেন ধোনি।
২০০৭ সালে ইংল্যান্ড সফরের পরই অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান রাহুল দ্রাবিড়। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় ধোনিকে! হরভজন সিং, বীরেন্দ্র সেওয়াগের মতো অভিজ্ঞ তারকা থাকতে ধোনিকে অধিনায়কত্ব দেওয়ায় অবাক হয়েছিলেন প্রায় সবাই! কিন্তু উদ্বোধনী আসরেই অধিনায়ক হিসেবে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে শিরোপা জেতান ধোনি। অধিনায়ক হিসেবে বেশ প্রশংসিতও হন তিনি।
অনিল কুম্বলের অবসরের পর তিন ফরম্যাটেই এই দায়িত্ব পান ধোনি। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম কয়েকটি হোম সিরিজে আধিপত্য বিস্তার করেই তাঁর অধীনে জয় পায় ভারত। ২০১১ বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের আশা নিয়েই ঘরের মাটিতে টুর্নামেন্টে অংশ নেয় ভারত।
যুবরাজ সিং, জহির খানদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ফাইনালেও পৌঁছে যায় দলটি। ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ২৭০ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২৫ ওভারে ১১০ রানে তখন ৩ উইকেট নেই স্বাগতিকদের। এরপর গৌতম গম্ভীরের সাথে দুর্দান্ত এক জুটির পথে ৯০ রানের অসাধারণ এক ইনিংসে দলকে জয় এনে দেন ধোনি! ২৮ বছর পর শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় ভারত।
ধোনি বনে যান ভারতের জাতীয় হিরো। সৌরভ গাঙ্গুলি, দ্রাবিড়দের টপকে বনে যান ভারতের সেরা অধিনায়ক হিসেবে। এরপরই ধোনির খারাপ সময়ের শুরু। বিশ্বকাপের পর বিদেশের মাটিতে দুই সিরিজেই হোয়াইটওয়াশ হয় ভারত। এরপর ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নকআউট পর্বে বাদ পড়ে দলটি! ধোনির অধিনায়কত্ব নিয়ে তখনই শুরু সমালোচনার!
প্রশ্নও ওঠে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো প্রতিভা কি ধোনির আছে নাকি ভাগ্য সাথে থাকায় তিনি এতোদূর ছুঁটছেন?
অনেকের মতেই সৌরভ গাঙ্গুলি ভারতের সেরা অধিনায়ক। কারণ বিপর্যস্ত একটা দলকে পুনরায় দাঁড় করেছিলেন সৌরভ। সেই দলে ছিলেন যুবরাজ, শচীন, দ্রাবিড়রা। আর সৌরভের হাতে গড়া দলেরই পরবর্তীতে দায়িত্ব পেয়েছিলেন ধোনি! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তখন ভারতীয় দলটাকে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবেই দাঁড় করিয়েছিলেন সৌরভ। কিন্তু টেস্ট ফরম্যাটে ধোনির অধিনায়কত্ব ছিলো একেবারেই ডিফেন্সিভ অ্যাপ্রোচ!
তবে, হ্যাঁ, বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত ধোনির অধিনায়ক হিসেবে ক্যারিয়ারকে একেবারেই পাল্টে দেয়।
- যোগিন্দর শর্মার শেষ ওভার
যোগিন্দর শর্মা বিশ্বকাপ ফাইনালের শেষ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করে ভারতকে জয় এনে দেন। এমনকি হরভজনকে না দিয়ে যোগিন্দরকে বোলিংয়ে আনায়ও অনেক সমালোচিত হয়েছিলেন ধোনি। মিসবাহ উল হক ক্রিজে থাকার পরেও যোগিন্দরের হাতে বল তুলে দেন ধোনি। আর শেষ ওভারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দলকে শিরোপা জেতান যোগিন্দর শর্মা।
- তিন নম্বরে উত্থান
২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে ২৭১ রান তাড়া করতে নেমে ১১৪ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত। নিজেকে তিনে উন্নীত করে ব্যাট করতে নামেন ধোনি। গৌতম গম্ভীরের সাথে দুর্দান্ত এক জুটির পথে দলকে শিরোপা জেতান ভারতীয় অধিনায়ক। তবে ধোনির বাজে ফর্ম যদি সেদিনও চলতো তাহলে হয়তো ম্যাচের ফলাফল ভিন্ন হতে পারতো!
এই দুইটি সাহসী সিদ্ধান্তই ধোনিকে এনে দিয়েছে দুই বিশ্বকাপ! কিন্তু এই দুই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণ হলেই হয়তো মুদ্রার উল্টো পিঠটা দেখতেন ধোনি। অবশ্যই জীবনে কিছু সময় ভাগ্যটা সাথে থাকে। ধোনির ভাগ্যটা একদম ঠিক সময়েই সাথে ছিলো তাঁর!
অনিল কুম্বলে, সৌরভ গাঙ্গুলি আক্রমণাত্মক মাইন্ডসেট নিয়েই দেশের বাইরে বেশ কয়েকটি সিরিজে জয় পায়। অপরদিকে, ফিল্ডিংয়ে ধোনির ডিফেন্সিভ মাইন্ডসেটের কারণে অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের মাটিতে বেশ কয়েক সিরিজে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আধিপত্য দেখাতে পারেনি ভারত।
অধিনায়ক হিসেবে ধোনি নিঃসন্দেহে সেরাদের একজন এবং ভাগ্যের সহায় হওয়ায় যে সব অর্জন এমনও নয়। তবে ক্যারিয়ারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভাগ্য সাথে থাকায় শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়তে পেরেছেন ভারতীয় এই অধিনায়ক। একই সাথে সবার মতে সঠিক সময়েই তিনি বিরাট কোহলিকে দায়িত্ব হস্তান্তরও করেছেন!