পর্দা নেমেছে দশম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের। রাতের ঢাকার আকাশ আলোকিত করে জানান দেওয়া হয়েছে বিদায়ের। আনন্দমুখর পরিবেশে সে বিদায় উদাযাপন করেছে ফরচুন বরিশাল। চারিদকে তাই তামিম, মুশফিক, রিয়াদদের জয়জয়কার। তবে এসবের মাঝে আড়ালেই থেকে যাচ্ছে দূর্দান্ত আম্পায়ারিংয়ের সফল আসর।
ক্রিকেটীয় কোন আয়োজনে আম্পায়ারিং ইস্যুতে বিতর্ক হবে না বাংলাদেশে- তা যেন ভাবাই যায় না। খেলোয়াড়দের অভিযোগ থাকে সর্বদাই। ঘরোয়া ক্রিকেটে তো হরহামেশাই নিন্দার বিষাক্ত বাণে আহত হতে হয় আম্পায়ারদের। তবে দশম বিপিএলে ঘটেনি তেমন কিছুই। একটি বারের জন্যেও প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়নি আম্পায়ারদের। সেটাই যে সফলতা। মাসুদুর রহমান মুকুল তাই বেশ উচ্ছ্বসিত।
তিনি তো রীতিমত বলেই ফেলেছেন, তার ক্যারিয়ারে এই প্রথম যেন বিতর্ক মুক্ত থাকতে পারলেন। তার সহকর্মীদের দারুণ পারফরমেন্সেও তিনি বেশ গর্বিত। তিনি বলেন, ‘আমার ক্রিকেটিং ক্যারিয়ার ও আম্পারিং ক্যারিয়ারে এই প্রথম আমি কোন বিতর্কমুক্ত আম্পারিং পেলাম, পেলাম না, আমরা বিতর্কমুক্তভাবে আম্পায়ারিং করতে পারলাম।’
শুধু যে বিতর্কমুক্ত থাকতে পেরেছেন দেশীয় আম্পায়াররা তা কিন্তু নয়। এবারের বিপিএলে শুরু থেকেই ছিল ডিআরএস। তাতে করে আম্পায়ারদের কোন সিদ্ধান্তের বিপক্ষে পুনঃরায় আবেদন করবার সুযোগ ছিল খেলোয়াড়দের। সেখানেও অধিকাংশ সময়ে আম্পায়ারদের পক্ষেই এসেছে ফলাফল। প্রায় শতভাগ সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়নি আম্পায়ারদের।
এ বিষয়ে মুকুল বলেন, ‘আমার ধারণা ৯৭ শতাংশ সময়ে আম্পায়াররা সফল ছিলেন, খেলোয়াড়রা সফল ছিল ৪৩-৪৪ শতাংশ সময়ে। সুতরাং এখন আপনাকে বুঝতে হবে আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে যেসব বিতর্ক হয়, ওখানেও আপনাদের আসলে দেখা দরকার আসলেও কি তা বিতর্কিত কি-না।’
তবে এত সফলতার মাঝেও শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতের সাথে ঘটে গেছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে তার দিকে তেড়ে গিয়েছিলেন লিটন কুমার দাস। সে ঘটনায় দু:খপ্রকাশ করেছেন মাসুদুর রহমান মুকুল। তিনি বলেন, ‘তাঁর (সৈকত) সাথে এমন কোন ঘটনা আমরা কাম্য করিনি। তবে হ্যা, অনেক বিতর্ক না হয়ে যে একটা বিতর্ক হয়েছে আমরা বিশ্বাস করি এটাও আর থাকবে না।’
এই ধরণের ছোটখাটো বিষয় এড়িয়ে একেবারে নির্ভেজাল এক টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রধান নিয়ামক সম্মান। খেলোয়াড় ও আম্পায়ারদের মধ্যে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধই এই ধরণের তুচ্ছ ঘটনার অবতারণাও ঠেকাতে পারে বলে মনে করেন মুকুল।
মুকুল বলেন, ‘আসলে সবদিক থেকেই সম্মান থাকতে হবে। সাকিব, তামিম, মুশফিক আমাদের বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক উপরে নিয়ে গেছে। সৈকত (শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত) ঠিক সেভাবেই আমাদের আম্পায়ারিংটাকে উপরে নিয়ে যাচ্ছে। খেলোয়াড়দের প্রতি আম্পায়ারদের শ্রদ্ধা, আম্পায়ারদের প্রতি খেলোয়াড়দের শ্রদ্ধা দিন দিন বাড়বে।’
তাছাড়া এবারের গোটা বিপিএল আয়োজনকেই অন্যতম সেরা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মাসুদুর রহমান মুকুল। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় শেষ দশটা বিপিএলে হয়েছে তার মধ্যে এটা সেরা বিপিএল ছিল।’
তাতেই প্রমাণিত হয়, ঠিক কতটা সফল এবারের বিপিএল আয়োজন।