অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকিয়ে যায় – বহুল প্রচলিত এই প্রবাদের অভাগা যদি হন মুশফিকুর রহিম, তবে সাগর রূপে দেখা মিলবে টুর্নামেন্টের ফাইনাল। যতবারই, যেভাবেই কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছেন মুশফিক, ততবারই যেন ভাগ্যদেবী পরাজয়ের ঢালা সাজিয়ে বরণ করে নিয়েছেন তাঁকে। মনে হয় যেন বারংবার মুশির বেদনাময় মুখখানা দেখে সুখ পান ক্রিকেটবিধাতা।
জোবার্গ বাফেলোর হয়ে টি-টেন লিগে খেলতে যাওয়া মুশফিকুর রহিম পুরো টুর্নামেন্টে খেলেছেন দুর্দান্ত। অতিমানবীয় কিছু না করলেও সময় উপযোগী ইনিংস খেলেছেন প্রায় সব ম্যাচেই; কিন্তু ফাইনালে তাঁকে একাদশে রাখেনি টিম ম্যানেজম্যান্ট। তাতেও অবশ্য ভাগ্য বদলায় নি, ম্যাচ শেষে ঠিকই মাথা নিচু করে হেঁটে যেতে হয়েছে শিরোপার পাশ দিয়ে। অথচ চিত্রনাট্য আরেকটু অন্যরকম হলে শিরোপা হাতে উৎসব করতে পারতেন তিনি।
শুধু এবারই নয়, বাংলাদেশের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগেও একাধিকবার হতাশা এসে কড়া নেড়েছিল মুশফিকুর রহিমের দরজায়। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের কথাই ভাবা যাক – মাশরাফি মর্তুজার সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে মুশফিক কি দারুণ খেলেছিলেন ফাইনালে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বোলারদের শাসন করে মাত্র ৪৮ বলে করেছিলেন ৭৪ রান।
তাতেও মন ভরেনি ভাগ্যলেখকের; ঠিকই শিরোপা থেকে দূরে রেখেছেন বাংলাদেশের মি. ডিপেন্ডেবলকে। জনসন চার্লসের অতিমানবীয় ব্যাটিং আর রুবেল হোসেনের ডেথ ওভারে হতশ্রী পারফরম্যান্সে হেরে গিয়েছিলো মুশির সিলেট। আগের চার ফাইনালে চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া ম্যাশও পারেননি এই ব্যাটারকে ট্রফির কাছে নিতে।
এর আগে ২০১৯/২০ বিপিএল আসরে খুলনা টাইগার্সকে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। অধিনায়ক হয়েই সেবার ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষপর্যন্ত বৃথা গিয়েছে সব-ই; খুলনাকে হারিয়ে লিটন, আফিফদের রাজশাহী সেবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
শুধু লিগেই নয়, বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সিতেও দুর্ভাগা মুশফিকুর রহিম। ২০১২ এশিয়া কাপ, ২০১৬ এশিয়া কাপ, বিখ্যাত সেই নিদাহাস ট্রফি, ২০১৮ এশিয়া কাপ – প্রতিবারই বাংলাদেশের বেদনাদায়ক পরাজয় কাছ থেকে দেখতে হয়েছিল তাঁকে। ২০১২ সালের কান্নারত ছবি কিংবা শ্রীলঙ্কার মাটিতে দানবীয় রূপ – মুশফিকের এসব মুহুর্ত ভোলা যায়নি আজও।
এসব টুর্নামেন্টের সব কয়টিতে মুশফিকুর রহিম ছিলেন দলের সেরা পারফর্মারদের একজন। কখনো অধিনায়ক হয়ে, কখনো বা সাধারণ ক্রিকেটার হয়েই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ট্রফির দিকে। কিন্তু প্রতিবারই শেষ মুহুর্তের ঝড়ে এলেমেলো হয়ে গিয়েছে সবকিছু। নিঃস্ব নাবিকের মত শূণ্য হাতে ফিরতে হয়েছে দেশসেরা ব্যাটসম্যানকে।
এখনো অবশ্য ফুরিয়ে যায়নি সবকিছু; সবকিছু ঠিক থাকলে বাংলাদেশের হয়ে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপের আসরে খেলবেন তিনি। বিপিএলেও আরো কয়েক মৌসুম তাঁকে দেখতে পাওয়া যাবে। তাই তো ক্যারিয়ার শেষের আগে ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় কোন শিরোপা জেতার সুযোগ আছে মুশফিকের সামনে। আর সেই লক্ষ্যে নিজের সেরাটা দিতে নিশ্চয়ই ছাড় দিবেন না তিনি।