পারফেকশনিস্টের পারফেক্ট ইনিংস

মাঝে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন ‍মুশফিককে। তবে, ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর এসে বাকি দু’জনকে টপকে আবারও শীর্ষে ফেরেন মুশফিক। টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির মাধ্যমে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফিটনেস পারফেকশনিস্ট, মি: ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম।

ক্রিকেটীয় প্রবাদ অনুসারে রেকর্ড নাকি তৈরি হয় ভাঙার জন্য। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৩ সালে গল টেস্ট খেলতে নামা মুশফিক কি জানতেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটের অতি অধরা ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁতে পারার রেকর্ডও নিজেই ম্লান করে দিবেন বছর কয়েক ঘুরতেই।

মাঝে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন ‍মুশফিককে। তবে, ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর এসে বাকি দু’জনকে টপকে আবারও শীর্ষে ফেরেন মুশফিক। টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির মাধ্যমে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফিটনেস পারফেকশনিস্ট, মি: ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম।

২০১৮ বছরটা টেস্ট ক্রিকেট অঙ্গনে যেন ঠিক সুবিধের ঠেকছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হাতে গোনা মাত্র কয়েক বছর টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির খরা দেখতে পেয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেই বিশ্লেষণে ১০ মাসের দীর্ঘ পিপাসার পর মুশফিকের অপরাজিত ২১৯ যেন স্বস্তি এনে দিয়েছিল পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই। এক ঝাঁক রেকর্ড তৈরির ইনিংসের শুরুটা কিন্তু হয়েছিল ভাগাড়ের তলা থেকেই।

নানা অবিচার ও বৈষম্যে ভগ্নপ্রায় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের যখন নিজেদের খেলাটাকে ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ, হোমগ্রাউন্ডে কমফোর্টেবল বাংলাদেশ দল শোচনীয় ভরাডুবি দেখাল প্রথম টেস্টেই। তাই রিয়াদ বাহিনীর কাছে শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া দ্বিতীয় টেস্টটা ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর। টসে জিতে আগে ব্যাটিং এ নেমেও শনির দশা পিছু ছাড়লো না।

স্কোরবোর্ডে ২৬ আর ঘড়ির কাঁটায় ঘন্টা দুই পেরোনোর আগেই সাজঘরে দুই ওপেনার সহ মোহাম্মদ মিথুন। ক্রিজের অপর প্রান্তে থাকা মুমিনুলকে সঙ্গ দিতে এলেন মুশফিকুর রহিম। টার্নিং উইকেটে শুরুর দিকে জার্ভিস আর তিরিপানোর বল বুঝে শুনে খেললেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে আত্মবিশ্বাস উঁকি দিল কভার ড্রাইভ থেকে স্লগ সুইপে।

দলীয় ৪৫ ওভারের মাথায় নিজের ফিফটি সহ মুমিনুলকে নিয়ে করলে ১০০ রানের পার্টনারশিপ। লাঞ্চের পর দুজন মিলে ক্রিজের দুপ্রান্ত ধরে রাখলেন সমান তালে। মুমিনুলের আগ্রাসী ব্যাটিং এর বিপরীতে মুশফিক ছিলেন ধীরস্থির ও দৃঢ়চিত্ত। দিনের শেষভাগে এসে ১৮৭ বলে নিজের ব্যাক্তিগত সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর দেখালেন বুনো উদযাপন; নিজেও হয়তো জানতেন না ইনিংসের ব্যাপ্তি যেতে পারে কতদূর।

দ্বিতীয় দিনের শুরুটা মোটেও সহজ করে তোলেনি জিম্বাবুইয়ান পেসাররা। আগের দিনই শেষভাগে মুমিনুল ফেরার পর একা মুশির জন্য কাজটা ছিল আরও কঠিন। প্রথম এক ঘন্টায় মাত্র ৪ রান করে নিজের ধৈর্য্য আর একাগ্রতার প্রমাণ রেখে যাচ্ছিলেন ক্রমাগত। মূলত ১৫০ রানের কোটা পেরোনোর পর মুশফিককে আবারও ফিরতে দেখা যায় নিজের ছন্দে।

নার্ভাস ১৯০ এর ঘরে ভক্তদের জন্য রাখলেন দীর্ঘ অপেক্ষা। ১৯৯ ছোবার পর সিকান্দার রাজার শর্ট বল হালকা পুল শটে স্কয়ার লেগের দিকে খেলেই দিলেন ভোঁ দৌড়; তুলে নিলেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি অর্জনের সম্মান।

দলীয় ৫২২/৭ এ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ইনিংস ঘোষণা করার আগে পছন্দের সব শটে ১৮ চার আর ১ ছক্কার সমন্বয়ে সাজানো ইনিংসে মুশফিক যোগ করলেন নতুন সব রেকর্ডের ঝুড়ি। টেস্টে সাকিবের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২১৭ রেকর্ড মুছে নিজের নামের পাশে বসালেন ২১৯ অপরাজিত।

ইতিহাসে প্রথম উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে দু’টি ডাবল সেঞ্চুরি প্রাপ্তির মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে নিজের নিকনেমের জাত চেনালেন তিনি। আর ২০২০ সালের শুরুতেই ডাবল সেঞ্চুরির সংখ্যাটা তিনে নিয়ে যান মুশফিক।

এছাড়া ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে বল ও সময়ের হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে আগের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন করে নিজের মাত্রা যোগ করেন। সর্বোচ্চ ৪২১ বলে খেলা এই কাব্যিক ইনিংসটি এখন সময়ের হিসেবেও (৫৬৪ মিনিট) বাংলাদেশ টেস্টের সবচেয়ে দীর্ঘতম ইনিংস। প্রতিকূল পরিস্থিতি সাপেক্ষে পুরোপুরি কার্যকরী এই ধৈর্যশীল নক নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিকট একটি টেক্সটবুক ইনিংস হয়ে চিরস্মরণীয় থাকবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...