অন্তিম লগ্নের কিংবদন্তি

ডেথ ওভারে এখনও যে মুস্তাফিজুর রহমানই সেরা। সেই প্রমাণই তিনি রাখলেন নেপিয়ারে। নিভু নিভু করে জ্বলতে থাকা প্রতিভার আগুন যে আগ্নেয়গিরি হওয়ার সামর্থ্য রাখে। স্রেফ আরেকটু ধারাবাহিকতাই হচ্ছে বাঁধা। তবুও ম্যাচের ১৯ তম ওভারে এক রান দেওয়া মুস্তাফিজ সেই মৃদু প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখছেন যতটা সম্ভব।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। টসে জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ। শুরুটা হয় দুর্দান্ত। শেখ মেহেদী হাসান ও শরিফুল ইসলামের বোলিং দাপটে ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। বোর্ডে তখন স্রেফ ২০ রান। সেই চাপটাকে পাশ কাটিয়ে বড় রানের লক্ষ্যে ছুটতেই পারেনি ব্ল্যাকক্যাপসরা। তার বড় কারণ মুস্তাফিজুর রহমান।

বল খানিকটা পুরনো হওয়ার পরই আক্রমণে আসেন ফিজ। বোলিং ইনিংসের অষ্টম ওভারে বল হাতে এসে চাপটাকে ঘনীভূত করেন মুস্তাফিজুর রহমান। সেই ওভারে মাত্র তিন রান খরচ করেছেন ‘দ্য কাটার মাস্টার’। জেমি নিশামের উইকেটও পেয়ে যেতে পারতেন। তবে ইনসাইড এডজ হয়ে তা বাঁচিয়ে দেয় নিশামকে।

এরপর শেষের আট ওভারের তিনটিই করেন মুস্তাফিজুর রহমান। যেন কৃপণতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হবেন বলেই ব্রত নিয়েছিলেন তিনি। ১৩ তম ওভারে করেছেনও তাই। সেই ওভারেও দিয়েছেন মাত্র তিন রান। দুই ওভারে কেবল ছয় রান দিয়ে নিউজিল্যান্ডকে অস্বস্তিতেই রেখেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান।

নিজের বোলিংয়ের বৈচিত্র্য ব্যবহার করে দারুণ বিপাকেই রেখেছিলেন কিউই ব্যাটারদের। ১৭ তম ওভারে তিনি এলেন বোলিং প্রান্তে। এই ওভারে তুলে নেন উইকেট। খানিকটা ছন্দপতন অবশ্য হয়েছিল তার। প্রথম দুই বলেই হজম করেন সাত রান। জেমি নিশাম মুস্তাফিজের দ্বিতীয় বলটিতে ডিপ স্কোয়ার দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা মারেন। পরের বলেই প্রতিশোধ নিয়ে নেন ফিজ।

যদিও বলটায় তেমন ধার ছিল না। ওয়াইড ইয়োর্কার করতে চেয়েও জুসি ফুলটস বল করে ফেলেন ফিজ। সজোরে চালান নিশাম। তবে তিনি যেন খানিকটা অবাকই হলেন নিজের উপর। কেননা ডিপ কাভার অঞ্চলে সেটি যে তালুবন্দী করেন আফিফ হোসেন। তাতে করে ৪৮ রান করা নিশামকে ফিরতে হয়েছে প্যাভিলিয়নে।

ছক্কা খেয়েও সেই ওভারে মুস্তাফিজের খরচ কেবলই আট রান। নিজের চমকটা দেখান মুস্তাফিজ তার শেষ ওভারে। টেল এন্ডার ব্যাটারদের স্লটে বল দেওয়া মানেই যেন বিপদ। তাইতো লাইন আর লেন্থের তারতম্য সেই সাথে কাটারের মিশ্রণ। এসবে ভরকে দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের টেলএন্ডারদের। চাপ বাড়িয়ে স্কোয়ার লেগে টিম সাউদিকে আটকে ফেলেন মুস্তাফিজুর রহমান।

এরপর স্রেফ এক রান দিয়েছেন তিনি ওভারের শেষ বলে। চার ওভার বোলিং করে মাত্র ১৫ রান খরচ করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ডেথ ওভারে মুস্তাফিজ স্রেফ ৯ রান দিয়েছেন। পাশাপাশি আগ্রসী ব্যাটিং করা নিশাম ও সাউদিকে নিজের উইকেটে পরিণত করেছেন। সেটাই বরং মুস্তাফিজের সামর্থ্যের উদাহরণ।

ইনিংসের শেষের দিকে ব্যাটারদের রান তোলার প্রবণতা বেশি থাকে। সেই প্রবণতাকে বাক্সবন্দী করেন মুস্তাফিজ। সেই কাজটা তিনি বরং ধারাবাহিকভাবেই করতে পারেন। ঠিক সে কারণেই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে তার কদর কমে না। ঠিক এই কারণেই মুস্তাফিজ ‘ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link