‘ডাবল এম’ শো

সিঙ্গেল নেওয়ার সময় হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে শূন্যে লাফ দিলেন। দ্বিতীয় রান নেওয়ার সময় একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি করলেন আরো একবার। এরপর ডানা মেলে বাতাসে হাত ছুঁড়লেন। এর মাঝে মাঠে সিজদাও দিয়েছেন একবার। মেহেদী হাসান মিরাজের উৎযাপন যেনো শেষই হচ্ছিলো না।

মিরাজের এমন উৎযাপনের কারণ সুযোগ ও প্রত্যাশা থাকার পরেও আজ যেটা করতে পারেননি সাকিব-লিটন। গতকাল সাদমান-মুশফিকের ভুলে অপমৃত্যু হয়েছে যে সম্ভবনার। আজ আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সেটিই করে দেখিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিলো সাকিব লিটনের ব্যাটে ভর করে প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহ দাঁড় করানো। বাংলাদেশ বড় সংগ্রহ ঠিকই পেয়েছে তবে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি লিটন দাস। সাকিব হাফসেঞ্চুরি করার পর ইনিংস বড় করতে না পারলেও মিরাজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৪৩০ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ।

৫ উইকেটে ২৪২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নেমেছিলেন সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। প্রথম দিন শেষে সাকিব ৩৯ রানে ও লিটন ৩৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। তবে দ্বিতীয় দিনের শুরুতে আর মাত্র ৪ রান যোগ করে ফিরে যান লিটন দাস।

লিটনের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ; জুটি বাঁধেন সাকিবের সাথে। সাকিব-মিরাজের ৬৭ রানের জুটিতে সব কিছুই যখন বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে তখনই কর্নওয়ালের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে নিজের প্রিয় কাট শট খেলতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উইকেট উপহার দিয়ে ফিরে যান সাকিব। সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ১৫০ বলে ৬৮ রান।

সাকিবের বিদায়ের পর বাংলাদেশের ইনিংসে যা হয়েছে তা নিশ্চয় প্রত্যাশা করেননি মিরাজকে নিয়ে দারুণ আশাবাদী মানুষটিও। প্রথমে তাইজুল ইসলামকে নিয়ে গড়েন ৪৪ রানের জুটি। তাইজুল ১৮ রান করে ফিরে গেলে নাঈম হাসানকে নিয়ে নবম উইকেটে গড়েন ৫৭ রানের জুটি। মিরাজকে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া নাঈম ২৪ রান করে ফিরে গেলে মিরাজ শেষ উইকেটে মুস্তাফিজকে সাথে নিয়েও গড়েন মূল্যবান ১৪ রানের জুটি।

শেষ উইকেটে জুটির ১৪ রান মূল্যবান কারণ শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজুর রহমান যখন উইকেটে যান মিরাজ তখন অপরাজিত ছিলেন ৯২ রানে। মুস্তাফিজের যোগ্য সঙ্গতে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন এই অলরাউন্ডার। শেষ পর্যন্ত উড়িয়ে মারতে গিয়ে ১৬৮ বলে ১০৩ রান করা মিরাজ যখন সীমানায় ধরা পড়েন ততক্ষণে বাংলাদেশ পেয়ে গেছে প্রত্যাশার থেকেও বেশী কিছু।

আট নম্বরে ব্যাট করতে মিরাজের আগে ২০০৪ সালে বাংলাদেশের হয়ে সেঞ্চুরি করেছেন খালেদ মাসুদ, ২০১০ সালে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ২০১৩ সালে সেঞ্চুরি করেছেন সোহাগ গাজী। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে ওয়ারিক্যান চারটি, রাকিম কর্নওয়াল দু’টি, কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও বোনার একটি টি করে উইকেট শিকার করেন।

দিনের শেষ শেসনে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং তোপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলীয় ১১ রানে ক্যাম্পবেল (৩) ও দলীয় ২৪ রানে মসলে ফিরে যান ২ রান করে। দুটি উইকেটই শিকার করেন মুস্তাফিজুর রহমান। যতক্ষণ বোলিং করেছেন, রীতিমত ঝড় তুলেছেন মুস্তাফিজ। ইনস্যুইং, ইয়োর্কার আর কাটারের সাগরে ভেসেছেন তিনি।

তবে শেষ বিকালে বোনার ও অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েটের ৫১ রানের জুটিতে বিপর্যয় কাটিয়ে দিন শেষ করেছে ক্যারিবিয়ানরা। বোনার ১৭ ও ব্র্যাথওয়েট ৪৯ রানে অপরাজিত রয়েছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৩০/১০ (১৫০.২) সাদমান- ৫৯, তামিম- ৯, শান্ত- ২৫, মুমিনুল- ২৬, মুশফিক- ৩৮ , সাকিব- ৬৮, লিটন- ৩৮, মিরাজ- ১০৩, তাইজুল- ১৮, নাঈম- ২৪, মুস্তাফিজ- ৩; রোচ ২০-৫-৬০-১, গ্যাব্রিয়েল ২৬-৪-৬৯-১, কর্নওয়াল ৪২.২-৫-১১৪-২, মেয়ার্স ৭-২-১৬-০, ওয়ারিক্যান ৪৮-৮-১৩৩-৪, ব্র্যাথওয়েট ৪-০-১৩-০, বোনার ৩-০-১৬-১)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ৭৫/২ (২৯) ক্যাম্পবেল- ৩, মসলে- ২, ব্র্যাথওয়েট- ৪৯*, বোনার- ১৭*

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link