সেই বহুল প্রচলিত বাগাধারাটি রূপক অর্থে বসিয়ে দেওয়া যায় নাঈম শেখের ক্ষেত্রেও। বাঁ-হাতি এ ওপেনারের ব্যাটের দৌড়ও যেন ঐ ২০ রান অবধিই।
৪৬ বলে ২১ রান। নাঈম শেখের এমন ইনিংসের চিত্রই বলে দেয়, লঙ্কান বোলারদের সামনে কতটা অস্বস্তিতে ভুগছিলেন তিনি। অবশ্য এখন অবধি ৭ ইনিংসের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে একটি বারের জন্যও তো ব্যাট হাতে রূদ্রমূর্তি ধারণ করতে পারেননি এ ব্যাটার। তাই তাঁকে নিয়ে অসীম প্রত্যাশায় ডুব দেওয়াটা বোকামিই বটে।
নাঈম শেখ সেই সীমিত প্রত্যাশার বিপরীতে গিয়ে সবাইকে বিস্ময়ে ভাসাতে পারেননি। দলে নিজের অবস্থান পাঁকাপোক্ত করার মতোও কিছু করেননি। উল্টো তাঁর ব্যাটিং সামর্থ্য এখন উঠে আসছে প্রশ্নের কাঠগঠায়।
ইনজুরির কারণে এবারের এশিয়া কাপ থেকে আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। তাছাড়া গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোতে ছিলেন না আরেক ওপেনার লিটন দাসও। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে নিজেকে নিশ্চিত ও দলে নিজের জায়গা সমুন্নত করতে মোক্ষম এক সুযোগ পেয়েছিলেন নাঈম শেখ।
বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টও তাঁকে এবারের এশিয়া কাপে সুযোগ দিয়ে আসছে দ’হাত ভরে। কিন্তু আস্থার প্রতিদান তো দিতে পারলেনই না। উল্টো চূড়ান্ত হতাশায় ডুবিয়েছেন দলকে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে করেছিলেন ১৬ রান। পরের ম্যাচে দেখা মিলেছিল কিছুটা আশা জাগানিয়া ইনিংস। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাঁর ২৮ রানের ইনিংসেই দারুণ একটা শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু নাঈম শো যেন ততটুকুতেই আটকে যায়।
সুপার ফোরে এসে পাকিস্তানের বিপক্ষ বৃত্তবন্দী হলেন ২০ রানে। এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১। এ নিয়ে টানা তিন ইনিংসে ২০-এর ঘরে আউট হলেন নাঈম শেষ। যেন এই ব্যাটারে সামর্থ্যই আটকে গিয়েছে ২০ এর ঘরে।
আগের ৩ ম্যাচে তবুও ব্যাট হাতে শুরুটা ভাল করেছিলেন। কিন্তু নিজের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। এই যুক্তিতে তিনি পার পেয়ে যেতেই পারেন। এমনকি টিম ম্যানেজমেন্টের প্রত্যাশার পালে হাওয়া দিয়ে একাদশে সুযোগও নিশ্চিত করতে পারেন। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ ম্যাচে যে ইনিংসটা তিনি খেললেন তা রীতিমত ব্যখ্যাতীত।
প্রথমত, বল হজম করেছেন ৪৬ টা। কিন্তু বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রানের চাকাটা আর সচল রাখতে পারেননি। যোগ করতে পেরেছেন মাত্র ২১ টি রান। কলম্বোর উইকেট অনেকটা নিচু আর মন্থর গতির। তবে সেটিও নিশ্চিতভাবেই এমন হতশ্রী ব্যাটিংয়ের অন্তরালের ব্যাখ্যা হতে পারে না। কেননা, অপর ওপেনার মেহেদী মিরাজ রান করে গিয়েছেন প্রায় বলের সাথে পাল্লা দিয়েই।
আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দলে ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে নাঈম শেখকেই এতদিন বিবেচনা করা হচ্ছিল। টানা সুযোগও পেয়েছেন। কিন্তু সেই তুলনায় কাজে লাগাতে পেরেছেন কমই। এমনটা একটা ইনিংসের পর একাদশ থেকে বাদ পরা এখন প্রায় আসন্ন। তবে এমন সুযোগ হেলায় হারিয়ে এখন তাঁর বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভ্রষ্ট হয়ে গেল কিনা, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।