বিশ্বকাপের ডাচ বিপ্লবের সেই দিন

ইতিহাসে প্রথমবারের মত পরাশক্তি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পায় দলটি। এরপর অবশ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরেকবার ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল তাঁরা। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ইংল্যান্ডকে ৪৫ রানে হারায় নেদারল্যান্ড।

পাঁচ জুন, ২০০৯। নেদারল্যান্ডের ক্রিকেটের জন্য বিশেষ কিছুর অপেক্ষায় ছিল দিনটি।

বড় মঞ্চে বড় জয় দিয়ে ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করেছিল দেশটি। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডের মত দলকে হারিয়ে এক বার্তা দিয়েছিল দলটি। তবে সেই ধারা ধরে রাখতে পারেনি দেশটি। আজ নেদারল্যান্ড ক্রিকেট হয়তো আরো অনেক জয় নিয়েই গর্ব করতে পারতো। তবে সত্যিকার অর্থে আর তেমন বড় কোনো সাফল্য পায়নি দেশটি।

২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর্দা উঠেছিল ইংল্যান্ডে। আজকের দিনে ক্রিকেটের তীর্থ ভূমি লর্ডসে ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের ম্যাচের মধ্য দিয়ে পর্দা উন্মোচন হয় সেই বিশ্বকাপের। ইংল্যান্ডের হয়ে সেই ম্যাচে অভিষিক্ত হয়েছিলেন ইয়োন মর্গ্যান। ইংল্যান্ডের হয়তো অপেক্ষা করছিল আরেকটি সহজ জয়ের। তবে নেদারল্যান্ড সাজিয়েছিল ভিন্ন এক ছক।

সেই ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করে ইংল্যান্ড। দুই ওপেনার রবি বোপারা ও  লুক রাইট ঝড়ো শুরু এনে দেন ইংল্যান্ডকে। রবি বোপারা ৩৪ বলে ১৩৫.২৯ স্ট্রাইকরেটে করেছিলেন ৪৬ রান। অন্যদিকে লুক রাইট ছিলেন আরো বিধ্বংসী। ১৪৪.৮৯ স্ট্রাইকরেটে ৪৯ বলে করেন ৭১ রান। দুজনে মিলে করেন ১০২ রানের জুটি। তবে তারপরই নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে ইংল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬২ রান সংগ্রহ করে দলটি।

তবে ওদিকে নেদারল্যান্ডে শুরুটা ভালো ছিল না। প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় দলটি। ২৩ রানের মাথায় ২ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকেই গিয়েছিল নেদারল্যান্ড। তবে সেখান থেকে আবার প্রতিরোধ গড়া শুরু করে তাঁরা।

টম ডি গ্রুথ দলঅকে আস্তে আস্তে জয়ের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। ৩০ বলে ১৬৩.৩৩ স্ট্রাইকরেটে করেন ৪৯ রান। এছাড়া পিটার বোরেন ও রায়ান টেনও এগিয়ে নিতে থাকেন দলের স্কোর। তবে পিটার বোরেন ও গ্রুথ আউট হয়ে গেলে আবারো চাপে পড়ে নেদারল্যান্ড। শেষ তিন ওভারে নেদারল্যান্ডের দরকার ছিল ১৭ রান। তবে হাতে উইকেট ছিল মাত্র চারটি এবং ক্রিজে স্বীকৃত ব্যাটসম্যান ছিলেন শুধু রায়ান টেন ডেসকাট।

এক প্রান্ত থেকেই রায়ান এগিয়ে যেতে থাকেন জয়ের দিকে। শেষ ওভারে নেদারল্যান্ডের প্রয়োজন মাত্র ৭ রান। দেশটি তাঁদের ক্রিকেটের এক বড় উৎসব থেকে মাত্র ৭টি রান দূরে। বিশ্বকাপের এমন একটা শুরু যেনো স্বপ্নের মত। বড় মঞ্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় বদলে দিতে পারে দেশটির ক্রিকেটের অনেক গতি বিধিও। এতকিছু মাথায় রেখেও শক্ত হাতে ব্যাট ধরেছিলেন রায়ান। শেষ ৪ বলে যখন ৫ রান প্রয়োজন তখন একটি ক্যাচ ফেলে দেন ব্রড। সাথে হয়তো ম্যাচও ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।

উত্তেজনাপূর্ণ সেই ম্যাচের শেষ বল ছিল আরো নাটকীয়। শেষ বলে জয়ের জন্য যখন প্রয়োজন ২ রান তখন আস্তে করে পুশ করে সিঙ্গেল নিচ্ছিল নেদারল্যান্ড। তবে সেটাতেও ছিল রান আউটের সম্ভাবনা। ব্রড এবার স্ট্যাম্প লক্ষ করে থ্রো করেন। তবে সেই বল স্ট্যাম্প মিস করে চলে যায়। ওভার থ্রো থেকে আরেকটি রান নিয়ে জয়ের বন্দরে পৌছায় নেদারল্যান্ড।

ইতিহাসে প্রথমবারের মত পরাশক্তি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পায় দলটি। এরপর অবশ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরেকবার ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল তাঁরা। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ইংল্যান্ডকে ৪৫ রানে হারায় নেদারল্যান্ড।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...