নিউক্যাসেলের ‘ঝড়ো’ দলবদল আসন্ন

অর্থ অনর্থের মূল। কথাটার সত্যতা আপেক্ষিক। এই আপেক্ষিক এক বাক্যের বিষদ আলাপন বাদ দেওয়া যাক। সম্প্রতি এই অর্থের ঝাঁজের একটা আভাস পেয়েছে ইংল্যান্ডের ফুটবল অঙ্গন। নিউক্যাসেল ইউনাইটেড টেবিলের নিচের দিকে থেকে যারা শুরু করেছে এবারের মৌসুম তাদের জন্যে এক আশীর্বাদে পরিণত হতে যাচ্ছে অর্থ।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এই ক্লাবটির মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে গেলো সপ্তাহে। সাবেক মালিক মাইক অ্যাশলে ছেড়েছেন তাঁর পদ। ক্লাবের অধিকাংশ শেয়ারের অংশীদার এখন সৌদি ভিত্তিক পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড নামক একটি সংস্থা। এর ফলে ক্লাবটির ফান্ডের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৩০০ বিলিয়ন ইউরো।

এত পরিমাণ অর্থের ঝলকানি হয়ত দেখা মিলবে আসন্ন শীতকালিন দলবদলে। তবে এখনই হয়ত একেবারে রেকর্ড ভেঙ্গে, চমক দেখিয়ে নামকরা বিশ্বসেরা তারকাদের ঘরে ভেড়াতে পারছে না তাঁরা। অপেক্ষা করতে হবে আগামী মৌসুমের শুরুতে গ্রীষ্মকালীন দলবদলের। তবে এর আগে দলকে খানিকটা গুছিয়ে নেওয়া দরকার। দলকে প্রিমিয়ার লিগের অবনমন থেকে রক্ষা করে একটা ভাল পজিশনে থেকে এবারের মৌসুম শেষ করা জরুরী।

এতটুকু নিশ্চিত জানুয়ারির দলবদলে বেশকিছু পরিবর্তন আসতে চলেছে। সেই দলবদলকে ঘিরে বেশ কিছু গুঞ্জন ইতিমধ্যেই ছড়িয়েছে সেইন্ট পার্কসের বাতাসে। প্রধান পরিবর্তনটা হয়ত ম্যানেজার কিংবা কোচকে ঘিরেই হতে চলেছে।  দলের কোচের দায়িত্বে দেখা যেতে পারে এমন অনেকের নামই শোনা যাচ্ছে নিত্যদিন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক তারকা ফুটবলারও।

নিউক্যাসেল ইউনাটেডের কোচ হিসেবে সর্বপ্রথম যে সাবেক তারকা খেলোয়াড়ের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে তিনি লিভারপুল কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ড। লিভারপুলের এই কিংবদন্তি বর্তমানে স্কটল্যান্ডের একটি দলের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। খেলোয়াড়ি জীবনের ন্যায় তাঁর কোচিং জীবনটাও বেশ সাফল্যের সাথেই অতবাহিত করছেন তিনি, যদিও কোচিং ক্যারিয়ারের একেবারে শুরুর দিকে রয়েছেন তিনি। তাঁর সাথে যোগাযোগ করেছে লিউক্যাসেল কর্তরা এমন গুঞ্জনও বেশ প্রখর।

অন্যদিকে সাবেক চেলসি তারকা এবং কোচ ফ্র্যাঙ্ক ল্যামপার্ডও রয়েছেন নিউক্যাসেলের কোচ হবার দৌড়ে। সাবেক এই চেলসির কোচ বর্তমানে সন্ধানে রয়েছেন নতুন ডাগআউটের। খেলোয়াড়ি জীবনে ল্যামপার্ড ছিলেন সেরাদের একজন। অদূর ভবিষ্যতে তিনি হয়ত বনে যেতে পারেন জিনেদিন জিদানের মতো সফল কোচও।

তাঁর চাই একটি দীর্ঘ মেয়াদি সুযোগ আর নিউক্যাসেলের চাই একজন হাই প্রোফাইল কোচ। যে কিনা বড় দলগুলোর দর্শন, খেলার ধরণ ছড়িয়ে দিতে পারবেন নিউক্যাসেলের খেলোয়াড়দের মাঝে। সহজ সমীকরণের অঙ্কের সমাধান হয়ে গেলে ল্যামপার্ডকে দেখা যেতে পারে ম্যাগপাইদের ঘরে।

কোচের পাশাপাশি বেশকিছু খেলোয়াড়ের পরিবর্তন আসতে চলেছে নিউক্যাসেল ইউনাইটেড শিবিরে। বর্তমানে কিছু সম্ভাবনাময়ী খেলোয়াড় রয়েছে নিউক্যাসেলে। তাঁরা নিসন্দেহে দলে টিকে যাবার মতো সামর্থ্য রাখে। অ্যালেন সেইন্ট-ম্যাক্সিমিন, মিগুয়েল আলমিরন, জো উইলক, ক্যালাম উইলসন এরা টিকে যাবার মতো সামর্থ্য ইতিমধ্যেই দেখিয়েছেন তাঁরা। বাকিদের হয়ত নিজেদের জায়গা ছেড়ে দিতে হতে পারে কিংবা ছাড়তে হতে পারে ক্লাবও।

নিউক্যাসেল যেহেতু চাইলেই নন্দিত তারকাদের জানুয়ারির দলবদলে দলে ভেড়াতে পারছে না সেক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্য হতে পারে উদীয়মান কিংবা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন খেলোয়াড় যাদের চুক্তি প্রায় শেষের দিকে। আক্রমণের দিক বিবেচনায় নিউক্যাসেল বার্সেলোনার উইঙ্গার ওসমান ডেমবেলে কে দলে ভেড়াতে পারে।

বার্সেলোনার আর্থিক সংকটাবস্থায় ডেমবেলের বিপরীতে একটা ভাল পরিমাণ অর্থের প্রস্তাব হয়ত ফিরিয়ে দেবেন না বার্সা সভাপতি লাপোর্তে। সেইন্ট-ম্যাক্সিমিন আর ডেমবেলে মিলে আক্রমণটাকে ঠিকঠাক সাজাতে পারবে নি:সন্দেহে। তাছাড়া স্টাইকার  ক্যালাম উইলসনের ইনজুরির কথায় মাথায় রেখে আর্সেনাল স্ট্রাইকার আলেকজান্ডার লাকাজাত হতে পারেন একজন আদর্শ বিকল্প। তাঁর সাথে আর্সেনালের চুক্তি প্রায় শেষের দিকে। গোল করে ম্যাচ বের করে আনার চিন্তাটা কিছুটা হলেও লাঘব করা সম্ভব।

মিডফিল্ডের সমস্যা দূরীকরণে ফ্রেঞ্চ ক্লাব অলিম্পিক মার্সেই এর সম্ভাবনাময়ী খেলোয়াড় বোবেকার কামারাকে ম্যাগপাইদের জার্সি পড়াতে বেশ একটা বেগ পোহাতে হয়ত হবে না। ২১ বছর বয়সী খেলোয়াড়ের বিপরীতে বড় পরিমাণ অর্থের লোভনীয় প্রস্তাবে না বলাটা মুশকিল। রক্ষণ মজবুত করতে ইংলিশ ক্লাব বার্নলি থেকে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় জেমস তারকোস্কিক্র দলে নিয়ে আশাটা লাভজনক হতে পারে নিউ ক্যাসেলের জন্যে। অন্ত্যন্ত এই মৌসুমের মতো কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে।

অন্যদিকে গোলকিপার সমস্যার সমাধান হতে পারেন আয়াক্স গোলকিপার আন্দ্রে ওনানা। ডোপ টেস্টে নিষেধাজ্ঞায় থাকা ওনানার নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে জানুয়ারির দলবদলের আগেই শেষ হয়ে যাবে। তিনি গোলবার আগলে রাখার দায়িত্বটা নেবার মতো বলিষ্ঠ কাঁধ তাঁর রয়েছে।

এসকল সম্ভাবনার কোন শেষ নেই। সবকিছু নির্ভর করে কোন কোচ দায়িত্ব নেবেন বর্তমান কোচ স্টিভ ব্রুসের পরিবর্তে। তাছাড়া কোন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোবেন নতুন ক্রীড়া পরিচালক তাও একটা নিয়ামক হতে পারে নিউক্যাসেলের দলবদলের। এর পাশাপাশি ইউরোপিও ফুটবলের ফেয়ার প্লে নিয়মের বেড়াজালে আটকে যেতে পারে নিউক্যাসেলের স্বপ্নের দলবদল। অপেক্ষা জানুয়ারির কিংবা আগামি জুনের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link