তাঁকে ভাবা হয় ফুটবলের সবচেয়ে দুর্ভাগাদের একজন, তাঁকে বলা হয় প্রজন্মের অন্যতম সেরা – তিনি ব্রাজিল দলের কাণ্ডারি নেইমার জুনিয়র। লিওনেল মেসির পর সম্ভবত সবচেয়ে পরিপূর্ণ ফুটবলার মনে করা হয় এই তারকাকে।
মেসি-রোনালদোর দাপটে কখনো একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি তাই সমর্থকেরা আশায় বুক বেঁধেছিল এবার অন্তত রাজত্ব শুরু করবেন ব্রাজিলিয়ান রাজপুত্র। কিন্তু কে জানতো অদৃষ্টের লিখন; সবাইকে বিস্মিত করে নেইমারও বিদায় নিলেন ফুটবলের উজ্জ্বলতম অধ্যায় থেকে, যোগ দিলেন সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালে।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো নিজের ক্যারিয়ারের শেষের শুরুটা করেছেন আল নাসেরের জার্সি গায়ে জড়িয়ে। এরপরই সৌদি আরবের প্রো লিগে যোগ হতে থাকে করিম বেনজেমা, এনগোলো কান্তে, রবার্তো ফিরমিনো, রিয়াদ মাহরেজদের মত বড় নাম। সেই ধারাবাহিকতায় নেইমারকেও ছিনিয়ে নিয়েছে আরব ফুটবল; আল হিলালের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করেছেন তিনি।
হেক্সা স্বপ্নে বিভোর ব্রাজিল দলের প্রাণভোমরা নেইমার জুনিয়র; আর ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে তাঁকে ঘিরে হয়তো শেষবারের মত পরিকল্পনা করবে সেলেসাও ম্যানেজম্যান্ট। কিন্তু এই ফরোয়ার্ড সৌদি আরবে চলে যাওয়ায় সেই পরিকল্পনা থমকে যেতে পারে, কেননা ইউরোপীয় ফুটবল হতে দূরে থেকে বিশ্ব আসরে ভাল করাটা বেশ কঠিন।
নেইমার জুনিয়র যখন পিএসজিতে যান তখন ট্রান্সফার ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামি খেলোয়াড় বনে যান। এরপর কেটে গিয়েছে প্রায় অর্ধযুগ, অথচ অর্জনের খাতায় যোগ হয়নি বলার মত কিছুই। ইনজুরির বাঁধায় ঠিকঠাক খেলতেই পারেননি তিনি, বারবার প্রতিপক্ষের শক্ত ট্যাকেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে হয়েছে তাঁকে। হয়তো সেজন্যই ইউরোপের আগ্রাসী ফুটবলে বিতৃষ্ণা জন্মেছে সাম্বা বয়ের।
টপ কোন লিগেই চোটপ্রবণ শরীরটাকে বাঁচিয়ে খেলতে পারবেন না নেইমার জুনিয়র। তাই হয়তো একটু নিশ্চিন্তে ফুটবল উপভোগ করতে আল হিলালে চলে গেলেন তিনি। এসব যুক্তিতে অবশ্য আক্ষেপ কমবে না নেইমার ভক্তদের। রাত জেগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ দেখা দর্শক কিংবা পাঁড় ব্রাজিল ভক্ত কারোই যে পছন্দ হয়নি এই লেফট উইঙ্গারের এমন সিদ্ধান্ত।
তবে একেবারে বিদায় নেয়ার আগে যদি শেষবারের মত নিজের ঝলক দেখাতে পারেন নেইমার জুনিয়র, যদি কোপা আমেরিকার শিরোপা এনে দিতে পারেন, যদি হেক্সা স্বপ্ন পূরণ হয় নেইমারের ভাঙা দু’পায়ে ভর করে – তবে সব অভিযোগ ধুলোয় মিশে যাবে।
নেইমার জুনিয়রকে একবারের জন্য হলেও ব্যালন ডি’অরের মঞ্চে দেখতে চেয়েছে ভক্ত-সমর্থকেরা৷ নেইমার নিজেও হয়তো ছুঁয়ে দেখতে চাইতেন আরাধ্য এই শ্রেষ্ঠত্বের স্মারক। কিন্তু এখন তিনি যেখানে যাচ্ছেন সেখান থেকে এমন স্বপ্ন পূরণ করার সম্ভাবনা প্রায় শূণ্যের কোটায়। অসীম প্রতিভা নিয়ে এসেও স্বর্গ ছুঁতে না পারার আক্ষেপ নিয়েই হয়তো বিদায় নিবেন এই তারকা।
কি জানি, কিসের জন্য এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিলেন নেইমার জুনিয়র। বিশাল অংকের টাকার প্রলোভন নাকি ফুটবলের প্রতি অনাগ্রহ – কিছু একটা কারণ তো আছেই। তবে কারণ যাই হোক, ইউরোপ শাসন করার জন্য যার আগমন ঘটেছিল, তাঁকে এত দ্রুত অন্য কোথাও দেখা নিশ্চয়ই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাবে ফুটবলপ্রেমীদের।