নিতিশ রানা, কিং অব ক্যালকাটা

মৌসুমের শুরুতে কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পর চমকে উঠেছিলেন সকলে। ফর্মটাও নিজের পক্ষে কথা বলছিল না। তবে মৌসুমের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জ্বলে উঠে নিজের সামর্থ্যের জানান দিলেন নিতিশ রানা।

আইপিএল দিয়েই ভারতীয় ক্রিকেটে রানার আবির্ভাব। তাঁর ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হলো টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডার যেকোনো পজিশনেই খেলতে পারেন সাবলীলভাবে। ইনিংসের শুরু থেকে মারকুটে ভঙ্গিতে খেলার স্বভাবটা সহজাত, খেলতে পারেন উইকেটের চারপাশেই।

পেশি শক্তির উপর নির্ভর না করে বরং প্রথাগত ক্রিকেটীয় শটেই রান করতে বেশি পছন্দ করেন রানা। এছাড়া মাঝের ওভারগুলোতে তাঁর ডানহাতি অফস্পিনও ভীষণ কার্যকরী।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএল ক্যারিয়ারের শুরুতেই আলো ছড়িয়েছেন। ২০১৫ সালের সেবারের আসরে প্রায় প্রতি ম্যাচেই ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মুগ্ধতা ছড়ান রানা। ফলে তারকাবহুল মুম্বাই দলেও নিজের জায়গা নিয়ে মোটেই ভাবতে হয়নি তাঁকে।

রোহিত শর্মা এবং মাহেলা জয়াবর্ধনের অধীনে নিজেকে আরো শাণিত করে তোলেন রানা। পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটেও রান বন্যা বইয়ে দেন দিল্লীর হয়ে। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন এই তরুণের জাতীয় দলে ডাক পাওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

কিন্তু হুট করেই যেন ভাগ্যের চাকা উল্টো ঘুরতে শুরু করে রানার। ফর্ম হারিয়ে ফেলেন, এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল রান করাই বুঝি ভুলে গেছেন। মুম্বাইও ভরসা রাখতে পারেননি, দল বদলে যোগ দেন কলকাতা নাইট রাইডার্সে।

কিন্তু, ভাগ্যটা বদলায়নি এতেও, ২০২০ মৌসুমে তো পাঁচবার আউট হন রানের খাতা খোলার আগেই। সব মিলিয়ে রানার ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই।

তবে কলকাতা ম্যানেজমেন্ট ভরসা হারায়নি। রানাও কাজ করতে শুরু করেন নিজের ব্যাটিং নিয়ে। শুরতে কেবল লেগ সাইডেই খেলার চেষ্টা করতেন। ধীরে ধীরে অফ সাইডে শটের সংখ্যা বাড়ান। ইনিংসের শুরুতেই অহেতুক ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলার চাইতে মনোযোগী হন বড় ইনিংস খেলায়।

ফলে রানে ফিরতে সময় লাগেনি এই অলরাউন্ডারের। ২০২১ মৌসুমে কলকাতাকে ফাইনালে তুলতে ব্যাট হাতে নেতৃত্ব দেন সামনে থেকে। সেবারে ১৭ ম্যাচে ৩৮৩ রানে সংগ্রহ করেন এই তারকা।

২০২২ মৌসুমে তাই নিলাম থেকে রানাকে দলে ধরে রাখতে দুবার ভাবেনি কলকাতা। প্রায় সাড়ে আট কোটি রুপির বিনিময়ে এক প্রকার লড়াই করেই দলে ভেড়ায় এই অলরাউন্ডারকে। রানাও আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন দারুণভাবে, ১৪ ম্যাচে করেন ৩৬১ রান। এবারের মৌসুমের শুরুতেই তাই নিয়মিত অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার ইনজুরিতে ছিটকে গেলে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান রানা।

মৌসুমের শুরুতে আহামরি ভালো না খেললেও দলের প্রয়োজনের মুহূর্তেই যেন জ্বলে উঠলেন অধিনায়ক রানা। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল কলকাতা।

সেই পরিস্থিতি থেকেই যেন দলকে টেনে তুললেন রানা, একপ্রান্ত আগলে রেখে খেললেন ৩৮ বলে ৫১ রানের ম্যাচজেতানো এক ইনিংস। ছয় চার এবং এক ছক্কায় সাজানো তাঁর ইনিংসেই মূলত জয়ের ভিত পায় কলকাতা।

জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হলেও এখনো নিয়মিত হতে পারেননি রানা। কলকাতার অধিনায়ক তাই চাইবেন আইপিএলের ফর্মটা ধরে রেখে জাতীয় দলেও নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link