বিসিবি যেন এক নিশ্চুপ নগরী

বিসিবি কর্তারা যেন মুখে কুলুপ এঁটে আছেন। নিশ্চুপ যেন গোটা ক্রিকেট পাড়া।

অথচ কথা ছিল তোলপাড় হয়ে যাবে সবকিছু। যাওয়ার হবে ব্যর্থতার একেবারে গভীরে। নেওয়া হবে যথাযথ ব্যবস্থা। কোন কোন ক্ষেত্রে শাস্তির আওতায় আসতে পারেন সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু ব্যক্তিবর্গ। বিশ্বকাপের ভরাডুবির পর তো এমন সব পদক্ষেপই গ্রহণ করবার কথা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের।

তবে তেমনটা আর হচ্ছে কই! বিসিবি কর্তারা যেন মুখে কুলুপ এঁটে আছেন। নিশ্চুপ যেন গোটা ক্রিকেট পাড়া। বোঝার উপায় নেই যে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম বাজে এক বিশ্বকাপ কাটিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। কোন তোরজোর নেই। নেই কোন কারণ দর্শানোর বালাই।

তিনটি রিপোর্ট অবশ্য জমা পড়েছে বিসিবি অফিসে। হেড কোচ চান্ডিকা হাতুরুসিংহে, অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন তিনটি পৃথক পৃথক রিপোর্ট ইতোমধ্যেই জমা দিয়েছেন। সে বিষয়টি পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস নিশ্চিত করেছেন।

স্বাভাবিক নিয়মে সেই রিপোর্টগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করবার কথা বিসিবি কর্তাদের। তবে অতীত ইতিহাস বলছে, তেমনটি কখনোই করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তারা বরং সহজ পন্থা বেছে নিয়েছেন প্রতিবার। কোন একজনের ঘাড়ে ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে দিয়ে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে নিজ পদ থেকে।

সবচেয়ে কাছের উদাহরণ সম্ভবত সাবেক হেড কোচ স্টিভ রোডস। ২০১৯ বিশ্বকাপের আশানুরুপ ফলাফল না পাওয়ায় চাকরি খুইয়েছিলেন রোডস। অথচ বাংলাদেশ দলের আসল সমস্যা সমাধানে কখনোই উদ্বুদ্ধ হতে দেখা যায়নি ক্রিকেট বোর্ডকে।

এমনকি মাঠের ক্রিকেটে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তিকে শাস্তি হিসেবে দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা একেবারেই বিরল। স্রেফ ২০১১ সালে সাকিব আল হাসান ও তামিমের কাছ থেকে দায়িত্বভার বদল করবার দৃষ্টান্ত রয়েছে। তাছাড়া বলবার মত ‘অ্যাকশন’ কখনোই নেয়নি ক্রিকেট বোর্ড।

এমনকি অধিনায়ক, কোচ ও টিম ডিরেক্টরের দেওয়া টুর্নামেন্ট রিপোর্ট পড়েও দেখেন না বিসিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তেমন গুঞ্জনও একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার নয়। অথচ এবারেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা যেতে পারত। ব্যর্থতার সমস্ত কারণ খুঁজে বের করে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া এমনকি ক্ষেত্র-বিশেষে ছাটাইকরণ প্রক্রিয়াও চালাতে পারতে বিসিবি।

অথবা দৃষ্টিগোচর হওয়ার মত পরিবর্তন অন্তত করতেই পারত বোর্ড। তবে তেমনটি এখন অবধি করেনি তারা। যা কিছু পরিবর্তন হতে চলেছে, তা অবধারিত। নভেম্বর মাসেই অধিকাংশ কোচদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সেদিক থেকে একঝাক নতুন মুখ খুঁজে বের করতে হবে, যুক্ত করতে হবে জাতীয় দলের সাথে। সে প্রক্রিয়ায় বিশ্বকাপের ব্যররথতা ধামাচাপা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

বোর্ড কর্তারা সম্ভবত সে সময়ের অপেক্ষাটুকুই করছেন। ব্যর্থতার অনুসন্ধান না হওয়া পর্যন্ত শূন্যহাতে বাড়ি ফেরার ধারা পরিবর্তন হবে না নিশ্চয়ই। সব মহলেই তো সদিচ্ছা থাকা চাই। নতুবা সফলতা বুলি আওড়ায় দিনশেষে সমালোচনাই হবে সঙ্গী।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...