তাঁকে মনে করা হয় ইতিহাসের প্রথম পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যান। প্রথম ক্রিকেটে তিনি যতগুলো সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, আর কেউই তা পারেনি; হয়তো পারবেও না কোনদিন। তিনি হলেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, তর্কযোগ্যভাবে সর্বকালের সেরা ওপেনার, ইংরেজ কিংবদন্তি স্যার জ্যাক হবস।
দুই দশক ধরে ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকার ও সেঞ্চুরি শব্দ দুটি প্রায় সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হবে না-ই বা কেন? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে করেছেন সেঞ্চুরি’র সেঞ্চুরি। কিন্তু স্যার জ্যাকের কৃতিত্বটা আরও অবিশ্বাস্য। তিনি যে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে একটুর জন্য মিস করে ফেলেছেন সেঞ্চুরির ‘ডাবল সেঞ্চুরি’! প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তাঁর নামের পাশে সেঞ্চুরি ১৯৯টি (মতান্তরে ১৯৭টি)! ব্র্যাডম্যানের ৯৯.৯৪ গড়ের মত তাই এটাও একটা আক্ষেপ।
প্রায় দুই যুগেরও বেশি লম্বা ক্যারিয়ারে তিনি গড়েছেন অসংখ্য কীর্তি, যা তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে ইতিহাসের পাতায়। দিনশেষে পরিসংখ্যানও তাঁর হয়েই কথা বলছে। অবশ্য পরিসংখ্যান কেবল ধারণাই দিতে পারবে যে তিনি কত বড় মাপের ক্রিকেটার ছিলেন, কিন্তু পুরোটা বোঝাতে পারবে না।
ফার্স্ট ক্লাস ক্যারিয়ারে মোট ৮৩৪টি ম্যাচ খেলেছেন হবস। ৫০.৭০ গড়ে রান করেছেন ৬১ হাজার ৭৬০! প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক প্যাটসি হেনড্রেনও (১৭০টি) তাঁর থেকে পিছিয়ে আছেন ২৯ সেঞ্চুরির ব্যবধানে! রানের দিক দিয়ে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের দ্বিতীয় সেরা ফ্রাংক উলির মোট রান ৫৮ হাজার ৯৫৯। উলির কাছে শুধু এক জায়গায় হেরেছিলেন হবস। উলির করা সর্বোচ্চ ২৯৫টি হাফ সেঞ্চুরির জায়গায় হবসের হাফ সেঞ্চুরি ২৭৩টি!
ফার্স্ট ক্লাসে সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি ছাড়াও স্যার হবসের আরেকটা রেকর্ড আছে। টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে সেঞ্চুরি হাঁকানোর বিরলতম রেকর্ড। ১৯২৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট সেঞ্চুরিটা হাঁকিয়েছিলেন ৪৬ বছর ৮২ দিন বয়সে!
মজার ব্যাপার হল, হবসের টেস্ট সেঞ্চুরির অর্ধেকের বেশিই এসেছে চল্লিশ পেরোনোর পর! আর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে এসে করেছেন ৫৮.৬২ গড়ে ২৬ হাজার ৪১১ রান! সেঞ্চুরি ৯৮টি! সাধে কি আর বলে, ‘Life begins after forty’! কথাটি হবসের বেলায় অক্ষরে অক্ষরে প্রযোজ্য।
১৮৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর, ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ শহরে জন্মেছিলেন তিনি। পুরো নাম জন বেরি হবস। ডাকনাম ছিল জ্যাক। ১২ ভাইবোনের মধ্যে জ্যাক ছিলেন সবার বড়। তাঁর বাবা জন কুপার ছিলেন একজন গ্রাউন্ডসম্যান। স্থানীয় ক্লাব ক্রিকেটে আম্পায়ারিংও করতেন মাঝেমধ্যে।
বাবার হাত ধরেই হবসের ক্রিকেটের হাতেখড়ি মাত্র ৯ বছর বয়সে। ছেলেবেলায় রাস্তার ধারে খোলা ময়দানে স্টাম্প আর পুরনো টেনিস বল দিয়েই খেলতেন। পরবর্তীতে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর খেলেছেন সেন্ট ম্যাথুস চার্চ এবং ইয়র্ক স্ট্রিট বয়েজের হয়ে।
হবসকে কেউ কোনদিন কোচিং করান নি, যা কিছু শিখেছেন সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায়। ছেলেবেলায় বিখ্যাত ক্রিকেটার রণজিৎ সিংহজীর এলিগ্যান্স ও রিস্টপ্লের খুব ভক্ত ছিলেন। তাঁর স্টাইল দেখে অনুকরণ করার চেষ্টা করতেন। তবে আইডল হিসেবে মানতেন সারে লিজেন্ড টম হেওয়ার্ডকে। হবসের বড় ক্রিকেটার হবার পেছনে যার রয়েছে অনেক বড় ভূমিকা। একটু পর আসছি সে প্রসঙ্গে।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় পড়ালেখাটা বেশিদূর করতে পারেন নি হবস। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে যোগ দেন কলেজ সার্ভেন্ট হিসেবে। কাঁধে তুলে নেন সংসারের জোয়াল। হবস যে কলেজে চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিলেন সেখানে তাঁর কাজও ছিল ক্রিকেট নিয়েই। কলেজের ক্রিকেট দলের ফুট ফরমায়েশ খাটতেন, পাশাপাশি গ্রাউন্ডসম্যান ও নেট বোলারের ভূমিকাও পালন করতেন তিনি।
১৯০১ সালে হবস যোগ দেন কেমব্রিজের একটি আধা-পেশাদার ক্লাবে। সেখানে ভাল পারফর্ম করার সুবাদে এক বছরের মাথাতেই নাম লেখান পেশাদার ক্রিকেটারের খাতায়। সাপ্তাহিক মাত্র ১০ শিলিংয়ের চুক্তিতে যোগদান করেন বেডফোর্ড ক্লাবে। পেশাদার ক্যারিয়ারের অভিষেক ম্যাচেই হাঁকান সেঞ্চুরি।
এদিকে হঠাৎ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান হবসের বাবা। ফলে তাদের পরিবারে নেমে আসে চরম আর্থিক সংকট। স্থানীয় কাউন্টি দল এসেক্সে ট্রায়ালের জন্য আবেদন করেন হবস। কিন্তু সে আবেদন না-মঞ্জুর করে দেয় ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
এক্ষেত্রে হবসের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ছেলেবেলার আইডল টম হেওয়ার্ড। প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ হয়ে হবসকে তিনি কাউন্টি দল সারের ট্রায়ালে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেন। যথারীতি ট্রায়ালেও মুগ্ধ করেন সবাইকে। হবসের মত প্রতিভা খুঁজে বের করার জন্য মিস্টার হেওয়ার্ড আলাদা একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন।
১৯০৩ সালের এপ্রিলে কাউন্টি দল সারের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিবদ্ধ হন জ্যাক হবস। তবে ফার্স্ট ক্লাস অভিষেকের জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় আরও দুই বছর।
অবশেষে ১৯০৫ সালে সারের মূল একাদশে খেলার সুযোগ পান তিনি। নিয়মিত ওপেনার টম হেওয়ার্ডের জন্য একজন নতুন ‘সঙ্গী’ খোঁজা হচ্ছিল। প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ ব্যাটসম্যানদের ভেতর থেকে শেষ পর্যন্ত হবসকেই বেছে নিয়েছিল তারা। অথচ হবসের ওপেন করার তেমন কোন পূর্ব অভিজ্ঞতাই ছিল না, মিডল অর্ডারেই খেলতেন বেশিরভাগ সময়।
হবসের ফার্স্ট ক্লাস অভিষেকে প্রতিপক্ষ ছিল ডব্লু জি গ্রেসের জেন্টলম্যান একাদশ। অভিষেক ম্যাচের দুই ইনিংসে হবস করেছিলেন যথাক্রমে ১৮ ও ৮৮ রান। কথিত আছে, হবসের খেলা কিছুক্ষণ দেখার পরই নাকি গ্রেস সাহেব ভবিষৎবাণী করেছিলেন, ‘এই ছেলে একদিন বড় কিছু হবে।’
পরের ম্যাচটা ছিল এসেক্সের বিপক্ষে। মাত্র ‘তিন’ ঘন্টা ব্যাট করে হবস তুললেন ১৫৫ রান! পরের ম্যাচে অ্যাশেজ খেলতে ইংল্যান্ড সফরে আসা অস্ট্রেলিয়ান একাদশের বিরুদ্ধে করলেন ৯৪ রান! শুরুর ছন্দটা অবশ্য বেশিদিন ধরে রাখতে পারেন নি হবস। ক্যারিয়ারের প্রথম ফার্স্ট ক্লাস সিজনে হবসের সংগ্রহ ছিল দুই সেঞ্চুরিসহ মাত্র ২৫.৮২ গড়ে ১৩১৭ রান।
পরের দুই মৌসুমে অবশ্য ব্যাট হাতে ছিলেন বেশ ধারাবাহিক। ১৯০৬ ও ১৯০৭ কাউন্টি সিজনে হবসের ব্যাটিং গড় ছিল যথাক্রমে ৪০.৭০ এবং ৩৭.৪৫।
ব্যাট হাতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পুরস্কারটা তিনি পেয়েছিলেন হাতেনাতেই। ১৯০৭-০৮ অ্যাশেজের স্কোয়াড ঘোষণার সময় ডাকা হয়েছিল হবসের নামটাও।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলা। জীবনের প্রথম বিদেশ সফর নিয়ে হবস ছিলেন বেশ রোমাঞ্চিত। তো প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ড হেরে গেল অল্পের জন্য, মাত্র ২ উইকেটের ব্যবধানে। না, হবস ছিলেন না সে ম্যাচে। ২৫ বছর বয়সী হবসের ডেব্যু করানো হল পরের ম্যাচে। খেললেন ওপেনারের ভূমিকায়। অভিষেক ইনিংসেই করলেন ৮৩ রান। পরে দ্বিতীয় ইনিংসেও করেন ২৮ রান। প্রথম ম্যাচের মত সে ম্যাচেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড জিতেছিল মাত্র ১ উইকেটের ব্যবধানে।
অভিষেকে ভাল করায় সিরিজের বাকি ম্যাচগুলোতও সুযোগ দেয়া হয় তাঁকে। চতুর্থ ও পঞ্চম টেস্টে হাঁকান আরও দুটো ফিফটি (৫৭ ও ৭২)।
সেবারের অ্যাশেজটা ইংল্যান্ড হেরেছিল ৪-১ ব্যবধানে। ক্যারিয়ারের প্রথম ওভারসিজ ট্যুরে হবসের সংগ্রহ ছিল ৪৩.১৪ গড়ে ৩০২ রান।
১৯০৯ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ফিরতি অ্যাশেজটাও জিতেছিল (২-১) অস্ট্রেলিয়া। হবস অবশ্য ভাল করতে পারেন নি এবার। তিন ম্যাচ খেলে করেছিলেন মাত্র ২৬.৪০ গড়ে ১৩২ রান।
১৯০৯ সালের জুলাইতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায় ইংল্যান্ড। সফরটা ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। এর কারণ ছিল দুটো। এক. দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাটিং উইকেটে খেলার অনভ্যস্ততা, দুই. গুগলি বোলার আতঙ্ক; যারা কিনা এর আগের সিরিজগুলোতেও ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো নাকানি চুবানি খাইয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রোটিয়া দলে সেসময় একসাথে চার-পাঁচজন ডানহাতি লেগ স্পিনার খেলতেন, যাদের প্রত্যেকে ছিলেন রঙ-আন অর্থাৎ ‘গুগলি’তে পারদর্শী। অব্রে ফকনার‚ বার্ট ভোগলার, রেজি শোয়ার্জ এবং গর্ডন হোয়াইট- এই চারজনকে একসঙ্গে বলা হত ‘গুগলি কোয়ার্টেট’। আরও ছিলেন উদীয়মান লেগি সিডনি পেগলার।
এদিকে ইংল্যান্ড তখন ওপেনার সংকটে ভুগছে। ব্রিটিশ অধিনায়ক স্যার লেভেসন গাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন হবসের সাথে ওপেন করতে পাঠাবেন উইলফ্রেড রোডসকে; যিনি ছিলেন মূলত বোলিং অলরাউন্ডার, ব্যাট করতেন লোয়ার অর্ডারে। জোহানেসবার্গে সিরিজের প্রথম টেস্টেই রোডস-হবস জুটির বাজিমাত! প্রথম ইনিংসের উদ্বোধনী জুটিতে আসল ১৫৯ রান! রোডস আউট হয়েছিলেন ৬৬ রানে আর হবস করেছিলেন ৮৯। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসেও হবসের ব্যাট থেকে আসলো ৩৫ রান।
ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা হেরেছিল মাত্র ১৯ রানে! গুগলি কোয়ার্টেটের দুই সদস্য বার্ট ভোগলার (১২) আর অব্রে ফকনার (৮) মিলেই নিয়েছিলেন ২০ উইকেট!
ডারবানে পরের ম্যাচটাও ইংল্যান্ড হেরেছিল ৯৫ রানে। প্রোটিয়া লেগ স্পিনারদের ঘূর্ণিজাদুর সামনে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্মসমর্পণের মিছিলে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন জ্যাক হবস। অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন দুই ইনিংসেই; উপহার দিয়েছিলেন ৫৩ ও ৭০ রানের ‘লড়াকু’ দুটো ইনিংস।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থ হলেও প্রথম ইনিংসে হবস-রোডসের উদ্বোধনী জুটি তুলেছিল ৯৪ রান। আর ভোগলার-ফকনার জুটির শিকার ছিল ১৫ উইকেট। শোয়ার্জ আর পেগলার নিয়েছিলেন দুটি করে উইকেট।
জোহানসবার্গে তৃতীয় টেস্ট জিতে অবশেষে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড; জয়ের নায়ক ছিলেন ওই একজনই; জ্যাক হবস।
চতুর্থ ইনিংসে স্বাগতিকদের দেয়া ২২১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে হবসকে পাঠানো হয়েছিল ৫ নম্বরে। উদ্দেশ্য মিডল অর্ডারের কলাপ্স ঠেকানো। নিয়মিত ওপেনার হয়েও মিডল অর্ডারে এসে খেললেন অপরাজিত ৯৩ রানের এক অনবদ্য মাস্টারক্লাস। যার কল্যাণে ৩ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ইংলিশরা।
কেপটাউনে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে পুরো দলের ন্যায় হবসও (০ ও ১ রান) ছিলেন ব্যর্থ। ওপেনারের ভূমিকায় ব্যর্থ ছিলেন রোডসও (০ ও ৫ রান)। স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছিল ৬ উইকেটে হেসেখেলে; নিশ্চিত করেছিল সিরিজ জয়টাও।
সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ড পেয়েছিল সান্ত্বনার জয়। প্রথম ইনিংসে হবস-রোডসের উদ্বোধনী জুটিতে এসেছিল তৎকালীন রেকর্ড সর্বোচ্চ ২২১ রান। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন হবস (১৮৭) আর রোডস হাঁকিয়েছিলেন দুর্দান্ত এক ফিফটি (৭৭)। ইংল্যান্ড জিতেছিল ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
৬৭.৩৮ গড়ে ৫৩৯ রান নিয়ে ইংল্যান্ডের পক্ষে সিরিজের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ছিলেন জ্যাক হবস। এমনকি তাঁর ধারেকাছেও কেউ ছিল না।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অসাধারণ পারফরম্যান্সের পর জ্যাক হবসকে বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন অনেক ক্রিকেটবোদ্ধা। লেগ স্পিনারের গুগলি কীভাবে সামলাতে হয় সেটা হবসই সর্বপ্রথম দেখিয়েছেন বলে মনে করেন অনেকে।
নেভিল কার্ডাসের মতে, ‘Hobbs was the first batsman to develop a technique to succeed consistently against the witchcraft of googly bowlers.’
এ প্রসঙ্গে উইজডেন লিখেছিল, ‘Beyond everything else from the English point of view the feature of the trip was the superb batting of Hobbs, who easily adapted himself to the matting wickets and scored against the mysterious googly bowlers with amazing skill and facility.’
স্যার জ্যাক তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন ১৯১১-১২ সালের অ্যাশেজ সফরে। ৯ ইনিংসে ব্যাট করে ৮২.৭৫ গড়ে সংগ্রহ করেছিলেন ৬৬২ রান। তিনটি ‘ম্যাচ উইনিং’ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন যথাক্রমে মেলবোর্ন (১৮৭), অ্যাডিলেড (১২৬*) এবং সিডনিতে (১৭৮)। উইলফ্রেড রোডসের সাথে ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ জুটির (৩২৩ রান) বিশ্বরেকর্ডও গড়েন ওই সিরিজেই। ইংল্যান্ড সিরিজ জিতেছিল ৪-১ ব্যবধানে।
১৯১২ সালে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তিন জাতি টেস্ট সিরিজ। যেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইংল্যান্ড। ১ সেঞ্চুরি ও ৩ হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪৮.৩৮ গড়ে হবসের ব্যাট থেকে এসেছিল ৩৮৭ রান।
১৯১৩ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ইংল্যান্ড জিতেছিল ৪-০ ব্যবধানে। ৩ হাফ সেঞ্চুরিসহ ৬৩.২৯ গড়ে হবস করেছিলেন ৪৪৩ রান।
উল্লেখ্য, সেবার একেবারেই নতুন খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া অনভিজ্ঞ একটা দল নিয়ে খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বিখ্যাত গুগলি কোয়ার্টেটের ‘বিলুপ্তি’র পর তাদের বোলিং আক্রমণটাও হয়ে পড়েছিল বেশ দুর্বল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে (১৯১৪-১৯১৯) হবসের ক্যারিয়ার থেকে হারিয়ে যায় ছয়-ছয়টি বছর। রয়্যাল এয়ারফোর্সের হয়ে হবসও অংশ নিয়েছিলেন যুদ্ধে।
যুদ্ধ যখন শেষ হল, হবসের বয়স তখন ৩৭। এই বয়সে যখন সবাই ক্রিকেট ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবেন, হবস তখন ফিরে এলেন নতুন উদ্যমে। এই হবস আগের চেয়ে আরও নিখুঁত, আরও ধারালো, আরও পরিণত, আরও ধারাবাহিক। তাঁর অসমাপ্ত ক্যারিয়ার যেন পুনর্জন্ম পেল। একের পর এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিজের ব্যাটসম্যানশিপকে নিয়ে গেলেন এক অনন্য উচ্চতায়; রীতিমতো ক্লাসিকের পর্যায়ে!
উইজডেনের ভাষায়, ‘After war, he extended the scope of batsmanship. He ripened into a classic. His style became as serenely poised as any ever witnessed on a cricket field.’
১৯১৯ থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত হবসের ফার্স্ট ক্লাস রেকর্ডটা নিজের চোখে একবার দেখুন।
- ১৯১৯ সাল- ২৫৯৪ রান, গড় ৬০.৩২
- ১৯২০ সাল- ২৮২৭ রান, গড় ৫৮.৮৯
- ১৯২১ সাল- ৩১২ রান, গড় ৭৮.০০ (অসুস্থ ছিলেন)
- ১৯২২ সাল- ২৫৫২ রান, গড় ৬২.২৪
- ১৯২৩ সাল- ২০৮৭ রান, গড় ৫৭.৯৭
- ১৯২৪ সাল- ২০৯৪ রান, গড় ৫৮.১৬
- ১৯২৫ সাল- ৩০২৪ রান, গড় ৭০.৩২
- ১৯২৬ সাল- ২৯৪৯ রান, গড় ৭৭.৬০
- ১৯২৭ সাল- ১৬৪১ রান, গড় ৫২.৯৩
- ১৯২৮ সাল- ২৫৪২ রান, গড় ৮২.০০
১৯২০-২১ সালের অ্যাশেজটা ছিল হবসের প্রত্যাবর্তন সিরিজ। দুটি সেঞ্চুরিসহ ৫৬.১১ গড়ে ৫০৫ রান করলেও দলীয় ব্যর্থতায় তা ম্লান হয়ে গিয়েছিল। লজ্জাজনকভাবে ইংল্যান্ড সেবার হোয়াইটওয়াইশ হয়েছিল ৫-০ ব্যবধানে!
অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন, উরুর মাংসপেশি ছিঁড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন অসুস্থতাজনিত কারণে পর পর দুটি সিরিজ মিস করেন হবস। অবশেষে ফিরে আসেন ১৯২৪ সালের জুনে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দেশের মাটিতে হাঁকান টেস্ট ক্যারিয়ারের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি (২১১)।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজেই হবসের নতুন ওপেনিং পার্টনার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আরেক কিংবদন্তি হার্বার্ট সাটক্লিফ।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে পাওয়া ছন্দটা হবস ধরে রাখেন পরবর্তী অ্যাশেজ সফরেও। ৩ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটিতে করেন ৫৭৩ রান। দু:খের বিষয় হল, ইংলিশরা এবারও হেরেছিল ৪-১ ব্যবধানে।
১৯২৬ সালে ঘরের মাঠে ফিরতি অ্যাশেজেও হবস ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। ২ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটিতে ৮১.০ গড়ে ৪৮৬ রান করে ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ শিরোপা পুনরুদ্ধারে রেখেছিলেন বড় ভূমিকা।
১৯২৮ সালে চতুর্থ দেশ হিসেবে টেস্ট মর্যাদা পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল দলটি। সিরিজের দুটি ম্যাচে অংশ নিয়ে একটি সেঞ্চুরিসহ হবস করেছিলেন ২১২ রান।
১৯২৮-২৯ সালে ১৭ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অ্যাশেজ জেতে (৪-১) ইংল্যান্ড। যে জয়ে হবসের অবদান ছিল ৫০.১১ গড়ে ৪৫১ রান। একমাত্র সেঞ্চুরিটা (১৪২) পেয়েছিলেন মেলবোর্নে। এটাই ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের সবশেষ সেঞ্চুরি।
১৯৩০ সালের অ্যাশেজটা ছিল স্যার জ্যাকের ক্যারিয়ারের শেষ সিরিজ। দুই ফিফটিতে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৩০১ রান আর ইংল্যান্ড হেরেছিল ২-১ ব্যবধানে।
বাইশ বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে ইংল্যান্ডের হয়ে মোট ৬১টি টেস্ট খেলেছেন হবস। ৫৬.৯৪ গড়ে করেছেন ৫৪১০ রান। সেঞ্চুরি ১৫টি, হাফ সেঞ্চুরি ২৮টি। সর্বোচ্চ ২১১ রান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে।
গত শতাব্দীর সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন হবসের ব্যাটিং গড় (৫৬.৯৪) অন্তত পাঁচ হাজার রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। তাঁর উপরে আছেন কেবল ব্র্যাডম্যান, সোবার্স, ব্যারিংটন, হ্যামন্ড ও সাঙ্গাকারা।
টেস্টে ওপেনারের ভূমিকায় অন্তত ৪ হাজার রান করেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেবলমাত্র হার্বার্ট সাটক্লিফ (৬১.১১) আর লেন হাটনের (৫৬.৪৮) গড়ই হবসের (৫৬.৩৭) চেয়ে বেশি।
উল্লেখ্য, উইলফ্রেড রোডস ও হার্বাট সার্টক্লিফের সঙ্গে মিলে সর্বকালের সেরা দুই ওপেনিং জুটির অংশীদার ছিলেন জ্যাক হবস। সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছেন সাটক্লিফকে নিয়ে; ব্যাটিং গড়ে টেস্ট ইতিহাসের বাকি সব জুটিকে পেছনে ফেলেছেন তাঁরা। হবস-সাটক্লিফ জুটি একসাথে খেলেছেন ৩৮ ইনিংস; ৩২৪৯ রান করেছেন ৮৭.৮১ গড়ে! শতরানের জুটি আছে ১৫টি!
রোডস-হবস জুটির রেকর্ডটাও অবশ্য মন্দ না। উদ্বোধনী জুটিতে তাদের মিলিত সংগ্রহ ৩৬ ইনিংসে ৬১.৩১ গড়ে ২১৪৬ রান।
ক্রিকেটে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ১৯৫৩ সালে হবস ভূষিত হন সম্মানসূচক ‘স্যার’ উপাধিতে। উইজডেন মনোনীত বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জেতেন দুইবার; ১৯০৯ ও ১৯২৬ সালে। আর ২০০০ সালে উইজডেন কর্তৃক নির্বাচিত হন শতাব্দীর সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন।
উল্লেখ্য, ‘নাইটহুড’ উপাধি পাওয়া ইতিহাসের প্রথম পেশাদার ক্রিকেটার হলেন জ্যাক হবস। এখন যদি কিছু মনে না করেন তো এই প্রসঙ্গে কিছু কথা বলে রাখতে চাই।
আমরা সবাই জানি, ক্রিকেট হচ্ছে ভদ্রলোকের খেলা বা ‘জেন্টলম্যানস গেম’। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ‘জেন্টলম্যান’ কারা? জেন্টলম্যান বলতে আসলে বোঝাত সমাজের অভিজাত ও উঁচু শ্রেণির ব্যক্তিদের, যাঁদের কাছে ক্রিকেট খেলা ছিল একটি শৌখিন বিনোদন। আর যাঁরা জীবিকা নির্বাহের জন্য পেশাদার ক্রিকেট খেলতেন, তাঁদের বলা হতো ‘প্লেয়ারস’। স্যার জ্যাক হবস ছিলেন এই অবহেলিত ‘প্লেয়ার্স’ সমাজের প্রতিনিধি। তৎকালীন ব্রিটিশ সমাজব্যবস্থায় জেন্টলম্যান তথা অ্যামেচার এবং প্রফেশনালদের মধ্যে শ্রেণীবৈষম্য ছিল প্রকট। শুধুমাত্র পেশাদার ক্রিকেটার হবার কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও জ্যাক হবস কোনদিন অধিনায়ক হতে পারেন নি। এখানে গভর্নর জেনারেল লর্ড হকের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে, ‘প্রে গড দ্যাট নো প্রফেশনাল উইল এভার ক্যাপ্টেন ইংল্যান্ড!’
স্যার জ্যাককে সবাই ভালোবেসে ডাকতেন ‘দ্য মাস্টার’। উইজডেনের ভাষায়, ‘There is only one master: Jack Hobbs.’
সমসাময়িকদের অনেকের চোখে তিনি সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান, এমনকি ব্র্যাডম্যানের চেয়েও তাঁকে এগিয়ে রেখেছেন কেউ কেউ! বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের ‘বধ্যভূমি’ হিসেবে পরিচিত বৃষ্টিভেজা, ‘স্টিকি’ উইকেটে হবসের স্কোরিং অ্যাবিলিটি ছিল ব্র্যাডম্যানের চাইতেও ঢের বেশি। হার্বার্ট সাটক্লিফ, পার্সি ফেন্ডার, বার্ট ওলফিল্ডের মত লিজেন্ডরা ‘টেকনিক্যালি’ হবসকেই সেরা বলে মেনে নিয়েছেন।
হার্বার্ট সাটক্লিফের মতে, ‘I was his partner on many occasions on extremely bad wickets, and I can say this without any doubt whatever that he was the best batsman of all time.’
পার্সি ফেন্ডারের মতে, ‘Jack was the greatest batsman the world has ever known, not merely in his generation but any generation.’
সব ধরনের উইকেটে মাস্টার জ্যাকের টেকনিক্যাল এক্সিলেন্সি সম্পর্কে ক্রিকেট সাহিত্যের দিকপাল, জনাব নেভিল কার্ডাস বলেছেন, ‘On all kinds of pitches, hard and dry, in this country or in Australia, on sticky pitches here and anywhere else, even on the “gluepot” of Melbourne, on the matting of South Africa, against pace, spin, swing and every conceivable device of bowlers Hobbs reigned supreme.’
সাবেক উইজডেন সম্পাদক ম্যাথু অ্যাঙ্গেলের ভাষায়, ‘He was not an artist, like some of his predecessors, nor yet a scientist, like some of the moderns; he was perhaps the supreme craftsman.’
মাস্টার জ্যাকের ব্যাটিংয়ে সবচাইতে বড় গুণ ছিল অ্যাডাপ্টিবিলিটি। যেকোন উইকেট ও আবহাওয়ার কন্ডিশনের সাথে সহজেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতেন। তাঁর অসাধারণ টেকনিক নিয়ে খুব বেশি কিছু বলার নেই। ক্লাসিকাল ব্যাটসম্যান ছিলেন যার পুরোটাই ছিল ব্যালান্স এবং ফুটওয়ার্ক নির্ভর। প্রায় সব ধরনের কপিবুক শটেই পারদর্শী ছিলেন, আলাদাভাবে কোন সিগনেচার শট ছিল না। আর হ্যাঁ, তিনি সবসময় সোজা ব্যাটে খেলতে পছন্দ করতেন।
বিশিষ্ট ক্রীড়ালেখক রবার্টসন-গ্লাসগোর মতে, ‘His footwork was, as near as is humanly possible, perfect. Every movement at the crease spoke of poise and fluency.’
হবসের ব্যাটিংকে সংজ্ঞায়িত করতে মাত্র দুটি শব্দ ব্যবহার করেছেন বিখ্যাত ক্রীড়ালেখক ও ধারাভাষ্যকার জন আর্লট, ‘Spontaneous and original.’
ব্যাকফুটে হবসকে মানা হয় সর্বকালের সেরাদের একজন। ফ্রন্টফুটের থেকে বেশি পছন্দ করতেন ব্যাকফুটে খেলতে, সে ডিফেন্স হোক বা অ্যাটাক। কাট, পুল এবং কন্ট্রোলড হুক শটে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। গুগলি আর লেট সুইং সামলাতে হবসের মোক্ষম অস্ত্র ছিল এই ব্যাকফুট প্লে।
ইতিহাসবিদ ডেভিড ফ্রিথের ভাষায়, ‘He was at his audacious best while indulging in the glorious cuts and pulls. He often pulled balls wide of the off-stump through mid-wicket with casual nonchalance.’
হ্যাম্পশায়ারের সাবেক ফাস্ট বোলার অ্যালেক্স কেনেডি একবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ওভালে খেলা ছিল। বোলার ছিলাম আমি। একটি লেট আউটসুইঙ্গারকে অফ স্ট্যাম্পের উপর থেকে চোখের পলকে স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দিলেন হবস।’
একটা ছোট্ট গল্প বলি শুনুন। তৎকালীন সময়ের দ্রুততম ফাস্ট বোলারদের একজন ছিলেন জ্যাক গ্রেগরি। একদিন হবস নাকি তাকে এতটাই স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে মোকাবিলা করছিলেন যে তিনি রীতিমতো কনফিউশনে পড়ে গেলেন। আম্পায়ার ফ্রাঙ্ক চেস্টারকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা, আমার বলের গতি ঠিক আছে তো? কমে-টমে গেল নাকি আবার!” চেস্টার হাসতে হাসতে জবাব দিলেন, “ইউ আর কুইক এনাফ ফর আদার্স, বাট নট ফর হবস।”
স্যার জ্যাক হবসের টেম্পারমেন্ট, শট সিলেকশন এবং ফিল্ডারদের মাঝে গ্যাপ খুঁজে বের করার ক্ষমতা ছিল প্রায় নিখুঁতের কাছাকাছি। অযথা র্যাশ শট খেলে উইকেট বিলিয়ে আসার বিলাসিতা তাঁর মধ্যে ছিল না। বাউন্ডারি মারার চাইতে সিঙ্গেলস-ডাবলসের ওপর বেশি জোর দিতেন। রানিং বিট্যুইন দ্য উইকেটে ছিলেন সময়ের সেরাদের একজন। রানের খাতা খুলতেন সফট হ্যান্ডে পুশ করে এক রানের জন্য খেলে।
এ প্রসঙ্গে উইজডেন বলছে, ‘The beautifully timed push to the off to open his account — the push was not hurried, did not send the ball too quickly to the fieldsman, so that Hobbs could walk his first run.’
১৯৬৩ সালে ৮১ বছর বয়সে মারা যান স্যার জ্যাক হবস। কিন্তু কথায় বলে, কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। হবসও আজীবন বেঁচে থাকবেন তাঁর কীর্তিতে।