মানসিকতাই আসল নিরাময়

বাড়ির দেয়ালগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। পরিবর্তন নেই তার। তবে সময় একটা পর্যায়ে গ্রাস করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় উঁচু সে দেয়ালকে। মানুষের জীবন অন্তত দেয়াল নয়। মানুষ চাইলেই নিজের থমকে যাওয়া জীবনে গতি নিয়ে আসতে পারে। তেমন এক উদাহরণ নুরুল হাসান সোহান। জাতীয় দলের এক সময় ব্রাত্য থেকে এখন তিনি কখনো অধিনায়ক কখনো ভারপ্রাপ্ত কিংবা সহ-অধিনায়ক।

নুরুল হাসান সোহান, বাংলাদেশের ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলোতে নিয়মিত পারফরম করছেন নিজের ক্যারিয়ার জুড়েই। তবুও কোথাও একটা বাঁধার সম্মুখীন যেন তিনি হচ্ছিলেন ক্রমাগত। নিজেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পথটা বড্ড কঠিন মনে হচ্ছিল তাঁর। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ঝড়ে পড়া বিষয়টা একেবারেই নতুন বা অনিয়মিত নয়। হয়ত সোহানও সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে পারতেন। তবে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ঘুরে দাঁড়ানোর। নিজের সেই অচল অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন সোহান।

তবে নিজের এমন পরিস্থিতির পরিবর্তনের পেছনের অনুঘটক যে মানসিক সেটাই তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন। তিনি মনে করেন সঠিক মানসিকতাই বদলে দিতে পারে যেকোন পরিস্থিতি। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের আকাঙ্ক্ষা, লক্ষ্য, ভয়, দূর্বলতা নিয়ে কথা বলি না, আর এটাই আমাদের সংস্কৃতি।’ ইতিবাচক মনোভাব আর মানসিক দৃঢ়তা নিয়েই নিজেকে বদলে ফেলেছেন সোহান। তিনি এই ইতিবাচক মানসিকতার সংস্কৃতির বিস্তার চান বাংলাদেশের ক্রিকেটে।

সোহান আরও বলেন, ‘যদি আমি আজকে বলি যে আমরা বিশ্বকাপ জিততে চাই তবে তার মানে এই নয় যে আমাদের এখনই জিততেই হবে। কিন্তু বারবার একটা কথা বলতে বলতে হয়ত আমাদের পরবর্তী ব্যাচ বিশ্বকাপ জেতার বিষয়ে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হবে। আমি হয়ত তখন থাকব না, তবে বিশ্বাসটা থেকে যাবে।’ ঠিক এমন করেই একটা মানসিক বিশ্বাস ছড়িয়ে দিতে চান নুরুল হাসান সোহান।

বাংলাদেশ দল আরও এক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। মাঝে অবশ্য নিউজিল্যান্ডে ত্রি-দেশীয় সিরিজ খেলবে টাইগাররা। দুই ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন সোহান। এর আগে অবশ্য অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবার অভিজ্ঞতাও হয়ে গেছে তাঁর। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলকে ইতোমধ্যেই নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে অধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর সোহানের সাথে লিটন দাসের নামও শোনা যাচ্ছিল পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে।

তবে সোহানের বেশকিছু গুণাবলী তাঁকে অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচন করতে উদ্বুদ্ধ করেছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। প্রথমত সোহান একজন ‘টিমম্যান’। দ্বিতীয়ত ঘরোয়া টুর্নামেন্টে অধিনায়ক হিসেবে সাফল্যের দেখাও পেয়েছেন সোহান। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে গেল আসরের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতাতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন সোহান। তবে বাংলাদেশ জাতীয় দলের এত গুরুদায়িত্ব পাওয়ার পর তেমন একটা উচ্ছ্বসিত ছিলেন না তিনি তেমনটাই জানিয়েছেন সোহান।

তিনি বলেন, ‘আমি খুব সম্ভবত তখন তেমন একটা খুশি হয়নি। কিন্তু মাথায় কাজ করেছিল আমার উপর এখন দায়িত্ব রয়েছে এবং আমাকে সেটা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। আমি চ্যালেঞ্জ নিতে সবসময় পছন্দ করি। আমি খুব বেশি উচ্ছ্বসিত ছিলাম না বরং আমি আমার হাতে দেওয়া দায়িত্ব আর চ্যালেঞ্জকে নিয়ে ভেবেছি।’

এতেই আন্দাজ করে নেওয়া যায় সময়ের সাথে সোহান হয়েছেন পরিণত। মানসিকভাবে আরও সুদৃঢ় হয়েছেন তিনি। নিজের সে পরিবর্তন নিয়েও সোহান বলেন, ‘আমারও অনুভূতি রয়েছে। আমি আগের মত উচ্ছ্বসিত হই না। সম্ভবত আগে আমি অন্যরকম ছিলাম। কিন্তু এখন আমি ম্যাচ বাই ম্যাচ পরিকল্পনা করি। আমার চিন্তা থাকে একটা পারফরমেন্সের পর আরেকটা পারফরমেন্সের দিকে অগ্রসর হওয়া। ঠিকঠাক পারফরম করতে না পারলে আমার খারাপ লাগে। কিন্তু খারাপ লাগা সময়টা ভালভাবে উৎরে যাওয়াটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’

সময় পরিক্রমায় নিজেকে বেশ ভালভাবেই খাপ খাইয়ে নিয়েছেন নরুল হাসান সোহান। তাঁর নজর এখন ফলাফলের দিকে। তিনি তাঁর ব্যাটিং স্টাইল, সমালোচনার তোয়াক্কা করেন না। ২০২২ সালে শেষের পাঁচ ওভারে অন্তত তিনবার ব্যাটিং করা বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে তাঁর স্ট্রাইকরেট ১৬০.৯৭। যা কি না তাঁর নিজ দলের বিবেচনায় প্রসংশনীয়। নিজেকে বদলে ফেলার এই মন্ত্র নিশ্চয়ই তিনি শিখিয়ে দেবেন বাংলাদেশ দলের বাকি খেলোয়াড়দেরও।

অন্তত গোটা বাংলাদেশ দলের মানসিকতার পরিবর্তন সুফল বয়ে নিয়ে আসতে পারে। সোহানের মত তখন পুরো দল পারফরম করা শুরু করলে বাংলাদেশ আখেরে একটা দল হিসেবেই সফলতার দেখা পাবে। অপেক্ষা শুধু সেই দিনটার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link