পেস বোলিং বিপ্লব ২.০

স্পিনার প্রসবা হিসেবেই বিশ্ব ক্রিকেটে বেশ সুখ্যাতি ছিল বাংলাদেশের। আরো ছোট করে বললে ‘বাঁ-হাতি স্পিনার’ প্রসবা। একের পর এক বাঁ-হাতি স্পিনার উঠে এসেছেন বাংলাদেশে। একটা সময় তো একাদশে এমন কি তিন জনও বাঁ-হাতি স্পিনারও খেলেছেন। মোহাম্মদ রফিক, আব্দুর রাজ্জাক, সাকিব আল হাসানরা দীর্ঘদিন বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের মূলস্তম্ভ ছিলেন দীর্ঘদিন। সেই স্পিনারদের দেশেই কিনা ২০১৫ সালে এক অর্থে ঘটলো পেস বিপ্লব।

একটা সময় একাদশে একজন পেসার নিয়ে খেলতো বাংলাদেশ। খুব বেশি হলে দুই পেসারের বেশি নিয়ে একাদশ সাজানো হতো না কখনো। সেই বাংলাদেশই কিনা ২০১৫ সালে মাঠে নেমে গেল চার পেসার নিয়ে। মাশরাফি মোর্তজার নেতৃত্বে সেই ঘটনাকে পেস বিপ্লব বললে বর্তমান বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণকে এক অর্থে পেস বিপ্লব ২.০ বলাই যায়।

মাশরাফি,রুবেল আর তরুণ তাসকিন, মোস্তাফিজদের নিয়ে সেই পেস বোলিং আক্রমণ ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশকে জিতিয়েছে একের পর এক ম্যাচ। কিন্তু বাংলাদেশের সেই পেস আক্রমণের অন্য দুই ফরমেটে সাফল্য ছিল খুবই কম। মাশরাফির সেই পেস আক্রমণ কিছুটা হলেও ধাঁর হারায় পরবর্তী সময় গুলোতে। কোভিড-১৯ এর দীর্ঘ বিরতির পর আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরুর পর থেকেই নতুন করে চোখে পড়ে বাংলাদেশের নতুন দিনের পেস বিপ্লব।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় পেস বোলিং বিপ্লবের নেতা নিঃসন্দেহে তাসকিন আহমেদ। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায়ে নিজেকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করেছেন তাসকিন। তিন ফরমেটেই বাংলাদেশের পেস বোলিংকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামনে থেকে। শুধু মাত্র পরিসংখ্যান দিয়ে হয়তো তাসকিনের পারফরম্যান্সের বিচার করা যাবে না। দক্ষিন আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মত বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের নায়কও এই তাসকিন।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় পেস বিপ্লবের উল্লেখযোগ্য জায়গাটা হলো তিন ফরমেটের পারফরম্যান্স। তাসকিন যেমন দক্ষিন আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজ জিতিয়েছেন বাংলাদেশকে, তেমনি এবাদত হোসেন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অবিস্মরণীয় টেস্ট জয়ে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। তাসকিন, মোস্তাফিজ, এবাদতদের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন অনুর্ধ্ব- ১৯ বিশ্বকাপজয়ী পেসার শরীফুল ইসলামও। গতি, আগ্রাসন আর ভ্যারিয়েশনে পেস বোলিং ইউনিটে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছেন শরীফুল ইসলামও।

পেস বোলিং ইউনিটের আরেক রত্ন হাসান মাহমুদও দারুণ ধারাবাহিক। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই দারুণ বোলিং করেছেন হাসান মাহমুদ। সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশে পেস বোলিংয়ের ভবিষ্যতও মনে করা হচ্ছে হাসানকে। এছাড়া মোস্তাফিজুর রহমানও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করে জানান দিয়েছেন হারিয়ে যাননি তিনিও। সাথে লাল বলে এখন দারুণ করছেন পেসার খালেদ আহমেদও। আর সাইড বেঞ্চে তো রেজাউর রহমান রাজা, মৃতুঞ্জয় চৌধুরিরা আছেনই।

বর্তমান পেস বোলিং আক্রমণের উত্থানটা শুরু হয় মূলত বাংলাদেশের সাবেক পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের আমলে। পেস বোলারদের আধিপত্যে এখন যেন স্পিনাররাই বাংলাদেশ দলে সৎ সন্তানে পরিণত হয়েছেন। ওটিস গিবসনের আমলেই মাউন্ট মঙ্গানুইতে অবিস্মরণীয় সেই টেস্ট জেতে বাংলাদেশ। শুধু ম্যাচ সেরা এবাদতই নন, অসাধারণ বোলিং করেছিলেন তাসকিন, শরীফুলরাও।

ওটিস গিবসনের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন বর্তমান পেস বোলিং কোচ এলান ডোনাল্ডও। এলান ডোনাল্ডের আমলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপসহ প্রতিটি সিরিজের দুর্দান্ত করছেন তাসকিন, এবাদতরা। এলান ডোনাল্ডের শিষ্যদের নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করাটা নজর কেড়েছে সবার। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় এবাদতের কথাই। এবাদতকে লাল বলের বোলার হিসেবেই ধরা হচ্ছিল। কিন্তু গত বছরই সাদা বলের দুই ফরমেটে অভিষেকের পর থেকেই দারুণ ধারাবাহিক এবাদতও। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে নিয়েছেন বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ নয় উইকেটও।

তাসকিন,মোস্তাফিজ, হাসান মাহমুদ, এবাদত, শরীফুলদের পেস বোলিং আক্রমণ বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে দারুণ কিছু করার। এবছরের শেষেই আছে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ ভারতের মাটিতে হলেও হালের ওয়ানডে ক্রিকেটে ম্যাচ জিততে বড় ভূমিকা রাখতে হয় পেসারদের। কারণ দুই প্রান্ত থেকে দুই নতুন বলে শুরু হয় খেলা। অ্যালান ডোনাল্ডের পেস বোলিং ব্যাটারির ধারাবাহিকতা ইতোমধ্যেই নজর কেড়েছে সবার। সামনেই যখন এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপের মত দুটি বড় আসর তখন বাংলাদেশের মূল ভরসা পেসাররাই; এই কথায় দ্বিমত নিশ্চই কেউ করবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link