একটা দল বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে কখনো হারাতে পারেনি তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দী দলকে। কিন্তু ২০২১ সালে এসে দলে থাকা দুইজন খেলোয়াড়দের উপর ভর করে প্রতিপক্ষকে উপহার দিলো লজ্জাজনক এক বিশাল হারের। সেই দুইজন খেলোয়াড় পাকিস্তানের বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান ও তাঁদের চিরপ্রতিদ্বন্দী ভারতকে ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারানোর গল্প। কি অনবদ্য ব্যাটিং-ই না করেছিলেন তাঁরা। এছাড়া ভারতের ব্যাটারদের খুব বেশি সুযোগ না দেওয়া শাহিন আফ্রিদি ও শাদাব খানদের কথাও ভুলে যাওয়ার নয়।
শুধু যে চিরপ্রতিদ্বন্দীদের হারিয়েই পাকিস্তান হয়েছে ক্ষান্ত বিষয়টা তা নয়। এ বছর বিশ্বক্রিকেট সন্ধান পেয়েছে এক অন্য পাকিস্তানের। অন্তত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। ২০২১ সালে পাকিস্তান ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ম্যাচ জিতেছে মোট ১৮টি। যা কি না এক পঞ্জিকা বর্ষে সেরা রেকর্ড।
তাছাড়া বেশকিছু তরুণ উদীয়মান সম্ভাবনা জাগানিয়া খেলোয়াড়ও উপহার দিয়েছে পাকিস্তান। বিশেষ করে এই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। কখনো কি ভেবে দেখেছেন পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা যদি সুযোগ পেতেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল), তবে তাঁরা কি পরিমাণ অর্থ বাগিয়ে নিতেন? পাকিস্তানের কোন খেলোয়াড়দেরকে দলে নিতে ফ্রাঞ্চাইজিরা ভুলে যেতেন অর্থের হিসেব তা নিয়েই আজকের আলোচনা।
- শাহিন শাহ আফ্রিদি
পাকিস্তান ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’ বলাই যেতে পারে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে। বা-হাতি ফাস্ট বোলার আফ্রিদি পুরো বছর জুড়েই রয়েছেন দারুণ ছন্দে। টেস্টে উইকেট শিকারীদের তালিকার শুরুর দিকে থাকা আফ্রিদি টি-টোয়েন্টিতেও পাকিস্তানের এক মূল অস্ত্র।
দুই পাশেই সুইং করানোর দক্ষতার পাশাপাশি উচ্চতার এক বাড়তি সুবিধার সাথে দারুণ গতির সমন্বয়ে আফ্রিদি বর্তমানে বিশ্বক্রিকেটের বোলিং আইকন, ব্যাটারদের ত্রাসের কারণ। এই বছর ২১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে আফ্রিদি তাঁর ঝুলিতে পুরে নিয়েছেন ২৩টি উইকেট। ইকোনমি রেট আট ছুঁইছুঁই আর গড় ২৬ এর গড়ে। তাঁকে দলে ভেরাতে নিসঃন্দেহে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হতো আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজিদের।
- শাদাব খান
বর্তমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে লেগ স্পিন বোলারদের বেশ কদর রয়েছে। সে দিক বিবেচনায় সাদব খান নিশ্চয়ই পেয়ে যেতে পারতেন আইপিএলে একটি দল। কিন্তু তাঁকে দলে ভেড়াতে ফ্রাঞ্চাইজিদের একটা মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হতো। কেননা সাদাব ইনিংসের শেষের দিকে ব্যাটটাও চালাতে জানেন দারুণভাবে।
এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের হয়ে খেলা ৬৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সাদাবের ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ১৩৬ এর বেশি। এর পাশাপাশি সাতের ঘরের ইকোনমি রেটে তাঁর নামের পাশে রয়েছে ৭৩টি আন্তর্জাতিক উইকেট। সুতরাং একজন অলরাউন্ডার কোটায় যে কোন ফ্রাঞ্চাইজি দলে জায়গা করে নিতেন সাদাব বিপুল অংকের অর্থের বিনিময়ে।
- আসিফ আলী
ব্যাটিং এ খানিক নিচের দিকে নেমে পাওয়ার হিট করতে পারে এমন খেলোয়াড়দের বেশ কদর রয়েছে আইপিএলে। সেই দিক বিবেচনায় নিলে বেশ ভাল পারশ্রমিকই পেতে পারতেন পাকিস্তানের হার্ড হিটার ব্যাটার আসিফ আলী। পাকিস্তান বিশ্বকাপ দলে তাঁর অন্তর্ভুক্তি ছিল বেশ বিতর্ক জর্জরিত। কিন্তু তিনি তাঁর ফিনিশার রোলের সবটুকু দায়িত্ব পালন করে সকল বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছেন।
নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের গতিপথ যেকোন দিকে ধাবিত হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেমে আসিফ দুটো ম্যাচেই নিজের দলের জয় নিশ্চিত করেছেন তাঁর ঝড়ো ব্যাটিং দিয়ে। আফগানিস্তানের অন্যতম সেরা বোলার করিম জান্নাতকে তো টানা চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে করেছিলেন নির্ভার। তাছাড়া তাঁর স্ট্রাইকরেটটা স্বস্তিদায়ক, ১৩৫ এর আশেপাশে।
- বাবর আজম
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিশ্বসেরা ব্যাটারদের একজন পাকিস্তানের বাবর আজম। টেস্ট ও ওয়ানডেতেও তিনি অব্যাহত রেখেছেন ধারাবাহিকতা। যে কোন ফরম্যাটে মানান সই ব্যাটিং করতে ওস্তাদ বাবর আজম। তাছাড়া স্পিন এবং পেস উভয়ই বেশ ভাল খেলতে পারার সুদক্ষতা রয়েছে তাঁর মধ্যে।
এর পাশাপাশি পাওয়ার প্লে-তে ফিল্ডিং এর ফাঁকফোকর খুঁজে দারুণভাবে ব্যাট চালাতে পটু বাবর আজম। ২০২১ সালে পাকিস্তানের হয়ে সব ক’টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অংশ নেওয়া বাবরের রান সংখ্যা ৯৩৯। প্রায় ১২৮ স্ট্রাইকরেটে একটি শতক ও নয়টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন বাবর। রয়েছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রান সংগ্রাহকদের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। সুতরাং তাঁর মতো নানন্দনিক শৈলীর কার্যকরী ব্যাটারকে দলে পেতে আগ্রহী হতো বেশকিছু ফ্রাঞ্চাইজি এতে করে তাঁর পারিশ্রমিক হতে পারতো রেকর্ড ছোঁয়া।
- মোহাম্মদ রিজওয়ান
এক পঞ্জিকাবর্ষে ১০০০ টি-টোয়েন্টি রান করার রেকর্ড একার দখলেই রেখেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ২০২১ সালটা রিজওয়ানের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের এক স্বর্ণালী অধ্যায়। তিনি এই বছর যখনই খেলতে নেমেছেন তখনই দেখা পেয়েছেন রানের।
বাবর আজমকে সঙ্গী বানিয়ে ভারতকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারানোর অন্যতম কারিগরও ছিলেন তিনি। ইনিংসের শেষ অবধি ব্যাটিং করার দক্ষতার পাশপাশি ইনিংসের মধ্যভাগে হাত খুলে দ্রুত রান সংগ্রহ করতেও বেশ পারদর্শী রিজওয়ান এই বছর ২৯ টি-টোয়েন্টি থেকে রান করেছেন ১৩২৬।
তাছাড়া ১৩৫ ছোঁয়া স্ট্রাইক রেটে একটি শতকের সাথে ১২টি অর্ধশতক রয়েছে তাঁর নামের পাশে। এছাড়াও বেশ ভাল মানের উইকেট রক্ষক রিজওয়ান এই বছর দস্তানা হাতে ২২টি উইকেট শিকারে অবদান রেখেছেন তিনি রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে। অতএব তিনি যে ফ্রাঞ্চাইজিদের চাহিদার শীর্ষে থাকতেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।