পেলে নাকি মেসি – সেরা কে?

লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারের দখিনা দুয়ার খুলে গিয়েছে; তাই তো এখন বয়ে চলছে সুবাতাস। আর সেই বাতাসে ভাসছে শুধুই আর্জেন্টাইন অধিনায়কের গুণগান। বিশ্বকাপ জয়ের জয়ের স্বপ্ন পূরণ করার পর থেকেই অন্য মাত্রা পেয়েছেন তিনি। নতুন করে শুরু হয়েছে সর্বকালের সেরা ফুটবলারের বিতর্ক।

অনেক অনেক অর্জনের পরেও লিওনেল মেসিকে পিছিয়ে রাখা হয়েছিল, একটি বিশ্বকাপ না জিততে পারায় ম্যারাডোনা কিংবা পেলের সাথে একই সারিতে উচ্চারিত হতো না তাঁর নাম। কিন্তু সেই বাধা টপকে গিয়েছেন তিনি, কাতারে বিশ্বকাপের ২২তম আসরে শিরোপার স্বাদ পেয়েছেন এই তারকা। তাই নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক; মেসি না পেলে – কে ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা?

১২০০ এর অধিক গোল আর তিন তিনটি বিশ্বকাপ ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের ক্যারিয়ারের হাইলাইটস। ফিফা কতৃক ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ উপাধি পেয়েছিলেন তিনি। এছাড়া বিশ শতাব্দীর সফলতম ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক এই ফুটবলার। নিশ্চিতভাবেই সেই সময়কার সেরা ফুটবলার ছিলেন তিনি।

অন্যদিকে সাতটি ব্যালন ডি’অর জেতা লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারে রয়েছে অবিশ্বাস্য সব রেকর্ড। আর্জেন্টিনার এই সুপারস্টার দুইটি বিশ্বকাপে জিতেছেন গোল্ডেন বল; বিশ্ব মঞ্চে সর্বাধিক ম্যাচ, সবচেয়ে বেশি মিনিট খেলার রেকর্ডও তাঁর দখলে। সম্ভাব্য সব ট্রফি জেতা মেসি নিজের পায়ের জাদুতে সম্মোহিত করে রেখেছেন পুরো একটি প্রজন্মকে। অর্জনের হিসেবে তাঁর কাছাকাছিও আসতে পারেননি তেমন কোন ফুটবলার।

যেকোনো গ্রেট ফুটবলারের মাঝে তুলনা করা একটু কঠিনই বটে; আর তাঁরা যদি হউন পেলে আর লিওনেল মেসি তাহলে তো কথাই নেই। এই যেমন গোলের হিসেব করলে মেসির চেয়ে এগিয়ে আছেন পেলে; আবার বিশ্বকাপ জয়ের সংখ্যাতেও ৩৫ বছর বয়সী ফুটবলারকে পিছনে ফেলেছেন এই কিংবদন্তি।

আবার অতীতের একটি সাক্ষাৎকারে কেউ পেলে হবেন কি না এমন প্রশ্নে নেতিবাচক উত্তরই দিয়েছিলেন স্বয়ং পেলে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি পেলে হওয়াটা বেশ কঠিন। কারণ আমার মা-বাবা পেলে তৈরি করার মেশিনটি বন্ধ করে ফেলেছে। দুর্দান্ত খেলোয়াড়দের সবসময়ই দেখা যাবে। তারা কেউ আমার চেয়ে বেশি সময় খেলবে, কেউ আমার চেয়ে বেশি গোল করবে। কিন্তু আমি মনে করি কাজটি অত্যন্ত কঠিন।’

কিন্তু ফুটবলে তো গোল বা বিশ্বকাপ জয়ই সবকিছু না। গোলই যদি সবকিছু হতো তাহলে অ্যান্ডি কোলেকে এরিক ক্যান্টোনার চেয়ে ভাল ফুটবলার ভাবা হতো। আবার বিশ্বকাপ জয়ই যদি হয় একমাত্র মানদণ্ড সেক্ষেত্রে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে ছাপিয়ে যাবেন অলিভার জিরুড। তাই এক বা দুইটি হিসেবেই পরিপূর্ণ গ্রেটনেস বোঝা যায় না।

ড্রিবলিং, পাসিংয়ের ক্ষেত্রে লিওনেল মেসিকে এগিয়ে রাখতেই হবে। মেসি যতটা সহজে বল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন কিংবা প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারকে ড্রিবলিংয়ে বোকা বানিয়ে এগিয়ে যান সেটা পেলের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ছয়-সাতজন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে গোল পেলে কখনো হয়তো দেননি কিন্তু মেসি দিয়েছেন।

অবশ্য এরিয়াল ডুয়েলে পেলে লিওনেল মেসির চেয়ে এগিয়ে আছেন। বাই সাইকেল কিক কিংবা হেডারে অনেক গোলই করেছেন ‘ফুটবলের রাজা’, অন্যদিকে মেসিকে সচরাচর হেডের সাহায্যে গোল দিতে দেখা যায় না। যদিও ২০০৯ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে মেসির হেডে করা গোলটি ফুটবলের এক আইকনিক মুহূর্ত।

ইউরোপিয়ান ফুটবলে লিওনেল মেসির অতিমানবীয় মাইলফলকগুলোর জবাবও নেই পেলের কাছে। নিজের সেরা সময়ে ব্রাজিলের বাইরে না খেলায় পেলে কখনোই পাননি ইউরোপীয় ফুটবলের আনন্দ। তাই তো মেসির ক্যারিয়ারে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মত মর্যাদাপূর্ণ ট্রফি থাকলেও পেলের নেই কোন ইউরোপীয়ান কাপ।

দুইটি ভিন্ন সময়ের, ভিন্ন যুগের ফুটবলারের মাঝে তুলনা করা অসম্ভব। কেননা দুইজনের পরিস্থিতি থাকে আলাদা, ফুটবলীয় সংস্কৃতিও থাকে ভিন্নতা। কিন্তু ভক্তের মন তো যুক্তি মানে না, তাই ঠিকই তাঁরা মেতে উঠে বিতর্কে। অবশ্য ১৮ই ডিসেম্বর সোনালী ট্রফি উঁচিয়ে ধরার মধ্য দিয়ে সেই বিতর্কে অনেকখানি ভাল অবস্থানে চলে এসেছেন আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link