অনন্য ডাবলের অতিমানবীয় নায়ক

তাতেই ক্ষান্ত না হয়ে তিনি নিজের ইনিংসটা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। সাতে নেমে ভারতের হয়ে করলেন সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এর পাশাপাশি তিনি আরো এক রেকর্ড গড়লেন নিজের অলরাউন্ড পারফর্মেন্স দিয়ে। এক টেস্টের এক ইনিংসে ১৫০ এর বেশি রান ও পাঁচ উইকেট শিকার করে মাত্র ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে জায়গা করে নিলেন রেকর্ড বইয়ে। সে ছাড়া অনন্য এক রেকর্ড হাতছানি দিয়ে ডাকছিলো তাঁকে। তবে সেই রেকর্ড হয়ত তুলে রাখলেন অন্য কোনো দিনের জন্যে।

শেন ওয়ার্ন হয়ত সেই দূর গগনের কোথাও একটা বসে থেকে দেখছেন আর নিজেকে বাহবা দিচ্ছেন। একেবারে তরুণ যে ছেলেটিকে তিনি ‘রকস্টার’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন সেই ছেলে সত্যিকারের রকস্টার হয়ে রেকর্ড বইয়ে হানা দিচ্ছে বারেবারে। রবীন্দ্র জাদেজা প্রথমে এক ইনিংসে তিনবার একশ কিংবা তাঁর বেশি রানের জুটি গড়লেন মোহালিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

তাতেই ক্ষান্ত না হয়ে তিনি নিজের ইনিংসটা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। সাতে নেমে ভারতের হয়ে করলেন সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এর পাশাপাশি তিনি আরো এক রেকর্ড গড়লেন নিজের অলরাউন্ড পারফর্মেন্স দিয়ে। এক টেস্টের এক ইনিংসে ১৫০ এর বেশি রান ও পাঁচ উইকেট শিকার করে মাত্র ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে জায়গা করে নিলেন রেকর্ড বইয়ে। সে ছাড়া অনন্য এক রেকর্ড হাতছানি দিয়ে ডাকছিলো তাঁকে। তবে সেই রেকর্ড হয়ত তুলে রাখলেন অন্য কোনো দিনের জন্যে।

জাদেজার আগে কেবল মাত্র পাঁচ বার ক্রিকেট ময়দানে ঘটেছিল দেড়শোর বেশি রান করার সাথে পাঁচ উইকেট বাগিয়ে নেওয়ার মতো কান্ড। ইতিহাসে বিরল এই রেকর্ডের বৃত্তান্ত নিয়ে হাজির হয়েছি আজ। চলুন রেকর্ডের দুনিয়ায় ডুব দেওয়া যাক।

  • ভিনু মানকড় (ভারত)

সালটা ১৯৫২। বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইংল্যান্ড তথা ক্রিকেটের ঐতিহ্য ধারণকারী লর্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হাজির ভারত। আরো একটু পরিষ্কার করে বললে বলা যায় ভারত ক্রিকেট দল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ। শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে একজন ভারতীয় বুক চিতিয়ে খেলেছিলেন। মানুষটা ভিনু মানকড়। নিজের অলরাউন্ড পারফর্মেন্সে তিনি প্রথম নিজের নামটি লেখান বিরল এক রেকর্ডে।

দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিনি ব্যাট হাতে করেছিলেন ৭২ রান। তারপর ইংল্যান্ডে দূর্গে আঘাত হানেন তিনি। তুলে নেন পাঁচ উইকেট। তবে তাতে যে ইংল্যান্ডের বড় রান করা আটকাতে পেরেছিলো ভারত তা কিন্তু নয়। ৫৩৭ রান সংগ্রহ করে লিড নিয়ে নেয় ইংলিশরা।

জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করত নামেন ভিনু মানকড়। ব্যাস! এদফা প্রতিজ্ঞাই হয়ত তিনি করে ফেলেন রেকর্ড গড়ার। করেনও তিনি। ১৮৪ রানে আউট হন তিনি। ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দেড়শোর বেশি রান ও পাঁচ উইকেট নেওয়া অলরাউন্ডার ভিনু মানকড়।

  • ডেনিস অ্যাটকিনসন (ওয়েস্ট ইন্ডিস)

ইতিহাস সেরাদের এক আঁতুড়ঘর ওয়েস্ট ইন্ডিস। সেখানকারই এক অলরাউন্ডার ডেনিস অ্যাটকিনসন আজকের তালিকার দ্বিতীয় ক্রিকেটার। তিনিও এক ইনিংসে দেড়শ রান ও পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন এক টেস্ট ম্যাচে।

তিনি সেটা করেছিলেন মানকড়ের রেকর্ডের বছর তিনেক বাদে। অর্থাৎ ১৯৫৫ সালে। তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলো অস্ট্রেলিয়া। তবে ভিন্ন আর এক অনন্য রেকর্ডেরও মালিক এই ডেনিস অ্যাটকিনসন।

সিরিজের চতুর্থ টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করে ৬৬৮ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায়। সেই রান টপকে যাওয়ার আশা করতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক অ্যাটকিনসনের ব্যাটে।

প্রথম ইনিংসে তিনি করে ফেলেন ২১৯। ঠিক তার পরের ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ ব্যাটারের উইকেট নিজের ঝুলিতে পুরেন অ্যাটকিনসন। দেড়শ কিংবা তাঁর বেশি রান করে আবার পাঁচ উইকেট পাওয়া দ্বিতীয় খেলোয়াড় হলেও দ্বিশতক করে পাঁচ উইকেট নেওয়া প্রথম খেলোয়াড় তিনি।

  • পলি উমরিগার (ভারত)

আরো একজন ভারতীয় ক্রিকেটার জায়গা করে নিয়েছনে আজকের তালিকায়। পলি উমরিগার ভিনু মানকড়ের করা রেকর্ডের প্রায় এক দশক বাদে নিজের নামটি লেখান ইতিহাসের পাতায়। ১৯৬২ সালে পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি সেই বিরল রেকর্ড নিজের নামের পাশে জুড়ে নেন।

সে বছর ট্যুরে যাওয়া ভারত দল চতুর্থ বারের মতো মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। প্রথম ইনিংসে পলি উমরিগার ১০৭ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট তুলে নেন ক্যারিবিয়ানদের।

নিজেদের প্রথম ব্যাটিং এ কোনরকম পাত্তাই পায়নি ভারত। দ্বিতীয় দফা ব্যাটিং করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টার্গেট ছুড়ে দেয় ভারত। ফলোঅনে ব্যাটিং করতে থাকা ভারত দলের ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন উমরিগার।

একপ্রান্ত আগলে রেখে তিনি ১৭২ রান সংগ্রহ করেন। তবে তাঁকে সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হয় ভারতের ব্যাটাররা। অগ্যতা মাত্র ১৭৬ রানের টার্গেট দিতে সক্ষম হয় ভারত। ক্যারিবিয়ানরা সাত উইকেট জয় তুলে নিলেও সেদিন রেকর্ড বইয়ে উঠেছিলেন পলি উমরিগার।

  • স্যার গ্যারি সোবার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

অলরাউন্ডারদের গুরু, অলরাউন্ডারদের সত্যিকারের আইডল স্যার গ্যারি সোবার্স থাকবেন না অলরাউন্ড পারফর্মেন্স নিয়ে হওয়া একটি তালিকায় তা কি করে হয়? তাঁকে ছাড়া তো অপূর্ণই থেকে যায় পুরো ক্রিকেটের ইতিহাস। স্যার গ্যারি সোবার্স ইনিংসে দেড়শ রান করার পাশাপাশি পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের ঘরের মাটিতেই ৪ আগস্ট ১৯৬৬ সালে।

প্রথম ইনিংসে ব্যাট করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয় উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৫০০ রান জমা করে। যার ১৭৪ রান এসেছিলো সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার সোবার্সের ব্যাট থেকে। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে আবারও আঘাত হানেন সোবার্স। তুলে নেন ইংলিশদের পাঁচ উইকেট।

ফলোঅনে পড়া ইংলিশদেরকে নাকানিচুবানি খাওয়ান সোবার্স ও ল্যান্স গিবস। গিবস ছয় উইকেট না বাগিয়ে নিলে সেদিন হয়ত অনন্য আরেক রেকর্ড হতো। দেড়শ রান ও দশ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড।

  • মুশতাক মোহাম্মদ (পাকিস্তান)

উপমহাদেশ ক্রিকেটকে সবসময়ই দু’হাত ভরে দিয়েছে। বরাবরই পারফর্মেন্স দিয়ে উপমহাদেশের খেলোয়াড়রা জায়গা করে নিয়েছেন ইতিহাসে। তেমনই একজন খেলোয়াড় পাকিস্তানের মুশতাক মোহাম্মদ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি এক ইনিংসে দেড়শ বা তার বেশি রান করার সাথে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট ১৯৭৩ সালে।

নিউজিল্যান্ডে ডানেডিনে প্রথম দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে পাকিস্তান। মুশতাক মোহাম্মদ ২০১ রানের দূর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন। যার সুবাদে ৫০৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে তাঁরা।

দুই ইনিংস মিলিয়েও নিউজিল্যান্ড সেই রান টপকাতে পারেনি। প্রথম ইনিংসে সে জন্যে প্রশংসা পেতে পারেন ইনতিখাব আলম। তিনি নেন সাত উইকেট। এরপরের ইনিংসে মুশতাক মোহাম্মাদ তুলে নেন পাঁচ উইকেট।

  • রবীন্দ্র জাদেজা (ভারত)

নিজেকে নতুন করে যেন ফিরে পেতে শুরু করেছেন দূর্দান্ত অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা। দারুণ সময় পার করছেন তিনি। মোহালিতে তিনি যেন হয়ে গেলেন নতুন এক জাদেজা।

২০২২ সালে এসে তিনি যে পুরোদস্তুর একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার সেই প্রমাণ দিয়েছেন উচ্চস্বরে। লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে তিনি একা হাতেই সামলেছেন ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ সেটা বললে খুব একটা ভুল বলা হয় না।

এক ইনিংসেই তিনি তিন বার শতকের বেশি রানের জুটিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। সেই সাথে ১৭৫ রানে ছিলেন অপরাজিত। শুধু তাই নয়। তিনি পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কার পাঁচ উইকেট নিয়ে তাঁদেরকে ফলোঅনের মুখে ঠেলে দেন।

তারপরের ইনিংসেও তিনি লঙ্কানদের চারটি উইকেট বাগিয়ে নেন। অল্পের জন্যে এক অভূতপূর্ব রেকর্ড গড়া হয়ে ওঠেনি তাঁর। আর একটি উইকেট পেলেই দেড়শ ছাড়ানো রানের পাশাপাশি দশ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটা হয়ে যেতো তাঁর নামে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...