পেশাদারিত্ব কেবল আপনার সেই পেশার উপর ঠিক কতটুকু নিবেদন সেখানেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং পেশাদারিত্ব মানে আপনি কাজকে কাজের জায়গায় ঠিকঠাক রাখতে পারেন। কাজ আর ব্যক্তিগত জীবনটা আলাদা রাখাটাও পেশাদারিত্বের মস্ত বড় একটা গুণ।
তবে আমরা বেশ আবেগপ্রবণ। আমরা কাজ আর ব্যক্তিগত জীবন গুলিয়ে ফেলি। দু’টোকে এক করে ফেলি প্রায়শই। তাইতো পরিবারের মানুষজন আমাদের কর্মক্ষেত্রের বিষয়গুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়। আর তাতে তাদেরও মানসিক অস্বস্তির জায়গা তৈরি হয়। পেশাদারিত্বের উপর এতক্ষণ এতগুলো কথা লেখার কারণ বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘ভাবী’দের অপ্রয়োজনীয় অংশগ্রহণ।
এতে কিঞ্চিৎ রাগান্বিত হতে পারেন অনেকেই। মনের ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা তো রয়েছে সবার। সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাইতো জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের স্ত্রী-রা বেশ সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সর্বশেষ সংযোজন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের স্ত্রী ও তার শ্যালিকা।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন। ধরেই নেওয়া যায় তিনি আর থাকছেন না জাতীয় দলে। এমনকি তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেও সমাপ্তি রেখা টেনে দেওয়া যায়। সেটা হওয়ার মঞ্চ বেশ আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। কালক্ষেপণ হয়েছে স্রেফ।
আবেগ আর পেশাদারিত্ব দু’টো কখনো সমান্তরাল লাইন হতে পারে না। তাতে ক্যারিয়ার নামক রেলগাড়ির লাইন বিচ্যুতি ঘটতে পারে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাইতো এবার আর আবেগকে সঙ্গী করেনি। সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে রিয়াদকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
তাতেই বেশ খোঁচা দিয়ে এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে বসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের শ্যালিকা জান্নাতুল কেফায়াত মন্ডি। তিনি লেখেন, ‘ইনজাস্টিস ইজ দ্য নিউ ট্রেন্ড’। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় অবিচার করাই এখন নতুন এক প্রবণতা। তিনি বিসিবির নির্বাচক আর বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকেই পরোক্ষভাবে দোষারোপ করেছেন রিয়াদের বাদ পড়ায়।
অথচ, বেশ জোরালো গুঞ্জন আছে যে, দু’দফা রিয়াদকে মাঠ থেকে অবসরের সুযোগ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু রিয়াদ আরও খানিকটা সময় নিতে চান। ঠিক এখানটায় আবার পেশাদারিত্বের কথা টেনে আনা যায়। পেশাদারিত্বের একটা বড় বিষয় নিজেকে জানা, নিজের সক্ষমতাকে জানা। যখন নিজের ভেতরে থাকা সবকিছু ফুরিয়ে যাবে, যখন আর কর্মক্ষেত্রে দেওয়ার কিছু থাকবে না। তখন সসম্মানে সে স্থান ছেড়ে যাওয়া।
রিয়াদ বুঝতে ভুল করেছেন। রিয়াদ নিজের সক্ষমতাই আন্দাজ করতে পারেননি। তাইতো এমন অবহেলিত এক সময়ের মধ্য দিয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটেছে। আর ওদিকে তার স্ত্রী- জান্নাতুল কাওসার মিস্টি বিশাল বড় এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন রিয়াদের যথাযথ সম্মান না পাওয়ার কথা। রিয়াদের নিবেদনের কথা।
কিন্তু রিয়াদ কি আদতে নিজের সম্মান নিয়ে ভেবেছিলেন? রিয়াদের নিবেদন কেউ ভুলে যাবে না নিশ্চয়ই। তবে এই যে রিয়াদের পরিবারের মানুষদের অপ্রয়োজনীয় সংযুক্তি স্রেফ হাস্যরসের উৎপত্তি ঘটিয়েছে। ক্রিকেটারদের স্ত্রীদের করা এমন সব স্ট্যাটাসের জন্য লোকেরা টিপ্পনি কাটছে। ট্রল আর কৌতুক করতেও পিছপা হচ্ছে না কেউ কেউ।
তাতে নিশ্চয়ই সম্মান বৃদ্ধি পায় না। তবে রিয়াদের এই ঘটনাই কিন্তু প্রথম না। এর আগেও বেশ ক’বার ক্রিকেটারদের স্ত্রীদের কাণ্ড হাস্যরসের জোগান দিয়েছে। বাংলাদেশের সমর্থকরা রীতিমত তাদের আবেগকে মজার বিষয়ে পরিণত করে ফেলেছে। এর কারণ নিজেদের পরিধিটুকু না জানা।
আবার উল্টো ঘটনাও কিন্তু রয়েছে। তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাসরা কিন্তু ভীষণ বাজে সময় পার করেছেন। তাদের সেই বাজে সময়ে নিশ্চুপ থেকেছেন তাদের সহধর্মিনীরা। তারাও কিন্তু বিপরীত তবে সুস্থ একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আড়ালে থেকে সাহস জুগিয়ে গেছেন। তাদের সাফল্যে নিশ্চয়ই এখন তারা বেশ গর্বিত হন। এমন একটা ‘ট্রেন্ড’-ই চলুক।