২০২১ সালের আইপিএলে সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র একটি ম্যাচে। এরপরের আসরে তো দলই পেলেন না। বয়স ত্রিশের কোঠা পেরিয়ে ৩৫-এ ধাক্কা দেওয়া একজন ক্রিকেটারের জন্য সেখানেই আইপিএল ক্যারিয়ারের যবনিকাপাত ঘটার কথা।
তবে বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আগের আসরে ব্রাত্য থাকা লেগ স্পিনার পিয়ুষ চাওলা এবার নাম লেখালেন জাত্যদের কাতারে। এবারের আইপিএল দিয়ে ক্যারিয়ারে দারুণ এক মোড় আনলেন তিনি। একদম পুরনো বোতলে নতুন মদের মতো।
আগের আসরে অবিক্রীত থাকায় ২০২৩ এর আইপিএলে পিয়ুষ চাওলা খেলবেন, এমনটা হয়তো ঘূণাক্ষরেও কেউ ভাবেননি। কিন্তু এবারের নিলামে মাত্র ৫০ লাখ রূপিতেই তাঁকে বাগিয়ে নেয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। এত কম মূল্যে মুম্বাই যে সেদিন এক অভিজ্ঞ অমূল্য রতন কিনেছিল তা বোধহয় ফ্রাঞ্চাইজিটির মালিকরা কল্পনাই করেননি।
তবে এবারের আইপিএলে সেই কল্পনাকে বাস্তব প্রমাণ করে ঠিকই সামর্থ্যের প্রতিদান দিয়ে যাচ্ছেন পিয়ুষ যাওলা। এখন পর্যন্ত রানপ্রসবা এই আইপিএলে যেমন কিপ্টে বোলিং করেছেন, ঠিক তেমনি টপাটপ উইকেটও তুলে নিয়েছেন। ১১ ম্যাচে ১৭ টা উইকেট নিয়ে রয়েছেন শীর্ষ ৫ উইকেটশিকারীদের তালিকাতেও।
চাওলাকে এবার ব্যাটারদের খেলতে কতটা কঠিন হয়েছে তার একটা প্রমাণ মিলে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ম্যাচেই। পুরো ম্যাচে ৪১৫ রান হয়েছে। চেন্নাইয়ের বোলাররা শেষ ৫ ওভারে ৯৬ রানে হজম করে ম্যাচ খুইয়েছে।
কিন্তু, একমাত্র পিয়ুষ চাওলা ছিলেন ব্যতিক্রম। ব্যাটারদের আগ্রাসনের সামনে তিনি ছিলেন শক্ত ঢাল হয়ে। পুরো ম্যাচ যেখানে গড়িয়েছে বোলারদের প্রায় ১০ উপর ইকোনমিতে, সেখানে চাওলা বোলিং করেছিলেন মাত্র ৫ ইকোনমি রেটে।
পিয়ুষ চাওলার এমন রাজসিক প্রত্যাবর্তনের একটা ব্যাখ্যা অবশ্য মিলেছে সাবেক লেগস্পিনার লক্ষ্মণ শিবারামাকৃষ্ণর কাছ থেকে। তিনি মনে করেন, শেষ দুই বছরে চাওলার উন্নতিটা হয়েছে মূলত ব্যাটারের মুভমেন্ট বোঝার ক্ষেত্রে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ও এখন ব্যাটারদের দারুণ রিড করতে পারে। আর সেই অনুযায়ী বলটাও করতে পারে। এজন্যই মূলত এবার ওর সফলতার হার বেশি।’
এ ছাড়া চাওলার গুগলির প্রশংসা করে তিনি আরো বলেন, ‘চাওলা এখন আগের চেয়েও দুর্দান্ত গুগলি করতে পারে। মূলত ওর শক্তির জায়গাটা হলো গতি। গুগলিতেও সে অতিরিক্ত পেস দিতে পারে। যার ফলে ব্যাটারের জন্য ওর বল প্রতিহত করাটা কঠিন হয়ে পড়ে।’
চাওলাকে দলে পেয়ে উচ্ছ্বসিত মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কোচ মার্ক বাউচারও। সাবেক প্রোটিয়া ক্রিকেটার বলেছেন, ‘সে আমাদের দলের জন্য দুর্দান্ত এক সম্পদ। এর আগে সে কিন্ত ঐ ভাবে সুযোগ পায়নি। তবে এবারের আইপিএল দারুণ উপভোগ করছে চাওলা। পুরো আইপিএলে যেভাবে বল করছে তাতে সে এখন আমাদের দলের বড় এক অস্ত্র।’
পিয়ুষ চাওলার মতো এবারের আইপিএলে বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখাচ্ছেন আরেক লেগস্পিনার অমিত মিশ্রাও। ৪০ বছর বয়সে এসেও যেন সমানে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছেন এ স্পিনার।
লখনৌ সুপারজায়ান্টসের হয়ে শেষ ম্যাচেই নিয়েছেন দুটি উইকেট। এ ছাড়া ব্যাট হাতেও সে ম্যাচে ১৯ রানের ছোট একটি ইনিংস খেলেন মিশ্রা।
প্রসঙ্গত, শেষ আসরে অবিক্রীত থাকলেও আইপিএলের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী কিন্তু পিয়ুষ চাওলাই। এখন পর্যন্ত ১৭৪ টি উইকেট নিয়ে যুজবেন্দ্র চাহাল আর ডোয়াইন ব্রাভোর পরেই এ লেগস্পিনারের অবস্থান। আর ১৭২ টি উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর তালিকায় চারে আছেন অমিত মিশ্রা।