ইশ! মাশরাফির মত একজন অলরাউন্ডার যদি ভারতে থাকতো!

বাংলাদেশের সেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডার কে? সাবেক ক্রিকেটার ও ধারভাষ্যকার আতহার আলী খানকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি একটু ক্ষেপে যান। বলেন, ‘মাশরাফির মত একজন থাকতে এই প্রশ্ন আসে কি করে!’

কথাটা একদমই বাড়িয়ে বলা নয়, আসলেই বড় অলরাউন্ডার হওয়ার সব রকম যোগ্যতাই তাঁর ছিল। অবাক করার ব্যাপার হল, বাংলাদেশ ক্রিকেট শুরুতে তাকে চিনেছিল। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুর্ধ্ব ১৭ ক্রিকেটে কুয়েতের বিপক্ষে ২৭ বলে ৭৩ রানের ঝড়ো এক ইনিংস খেলে ক্রিকেট আঙিনাকে চমকে দিয়েই তাঁর শুরু।

তখন ২০০১ সাল। সেই বছরই মাশরাফির টেস্ট অভিষেক। সেই সময় পেস বোলিং ক্যাম্প করাতে এসে মাশরাফির ব্যাপারে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি অ্যান্ডি রবার্টস যে বক্তব্য রেখেছিলেন সেটা রীতিমত ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে গেছে। কালক্রমে মাশরাফি অনেক কিছুই অর্জন করেছেন।

তাঁর হয়তো সম্ভাবনা ছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসার হওয়ার। সেটা না পারলেও তিনি দেশের অবিসংবাদিত সেরা পেসার। ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ের সেরা দশেও ছিলেন। মূলত ইনজুরি আর অস্ত্রোপচারের কারণে তাঁর পুরো সক্ষমতাটা কখনোই দেখতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট।

একই কারণে মাশরাফির ব্যাটসম্যানশিপটাও হারিয়ে গেছে। যদিও, লোয়ার অর্ডারে বেশ কার্যকর অসংখ্য ইনিংস আছে তাঁর। ‘অলরাউন্ডার মাশরাফি’কে নিয়ে একবার সাকিব আল হাসান বলেছিলে, ‘বোলার কৌশিক ভাইয়ের কথা বাদ দেন। ব্যাটসম্যান মাশরাফির কথা ভাবেন শুধু। বাংলাদেশের হয়ে কত রান করেছেন উনি? হাজার দেড়েক। এই দেড় হাজার রান দিয়ে উনি বাংলাদেশকে যে কয়টা ম্যাচ জিতিয়েছেন, তা আমরা তিন-চার হাজার রান করে করতে পারিনি। ওনার ১৫ রান মানেই ম্যাচে আমরা এগিয়ে গেলাম। শোনেন, একটা কথা বলি। কৌশিক ভাই নিজেকে নিয়ে খামখেয়ালি না করলে সে থাকত বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। কৌশিক ভাই কত বড় অলরাউন্ডার হতে পারতেন, উনি নিজেও জানেন না।’

কৌশিক, মানে মাশরাফি নিজে না জানলেও তার এই সক্ষমতাটা সাকিব ছাড়াও আরেকজন বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি হলেন ‘দ্য গ্রেট ওয়াল’ খ্যাত রাহুল দ্রাবিড়। রাহুল দ্রাবিড় অধিনায়ক হয়ে বাংলাদেশে বসে একবার আফসোস করে বলেছিলেন, ‘ইশ! মাশরাফির মত একজন অলরাউন্ডার যদি ভারতে থাকতো!’

আরো বলেছিলেন, ‘মাশরাফি দুর্দান্ত একজন ক্রিকেটার। আমি মনে করি, এমন একজন ক্রিকেটার দলে থাকাটা বাংলাদেশের জন্য সৌভাগ্যজনক। ও দারুণ বোলিং করে, নিচের দিকে ব্যাট করে ভাল রান করে। ও নিজেকে, সত্যিকারের একজন অলরাউন্ডার হিসেবে গড়ে তুলছে। এমন ক্রিকেটার বিশ্বে এখন খুব বেশি নেই, বিশেষ করে ফাস্ট বোলিং অলরাউন্ডার তো খুঁজেই পাওয়া যায় না। এমন ক্রিকেটার দলের জন্য মূল্যবান।’

সেটা ছিল দ্রাবিড় বাহিনীর ২০০৭ সালের ভারত সফর। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে পাঁচ উইকেটের সাথে ৭৯ রানের ইনিংস খেলেন মাশরাফি। ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান। ঢাকায় পরের টেস্টে তাঁর ৭০ রানের ইনিংস ছিল। ভারতীয় দলে তখন শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড়, জহির খান, অনিল কুম্বলেরা ছিলেন, কিন্তু কোনো পেস বোলিং অলরাউন্ডার ছিল না। তাই, মাশরাফির মত কাউকে পাওয়ার জন্য আক্ষেপ করেছিলেন দ্রাবিড়।

কালক্রমে ভারতের সেই আক্ষেপ মিটে গেছে, মেটেনি বাংলাদেশের!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link