প্রবীন তাম্বের ক্যারিয়ারটাই ঠিক প্রচলিত ছকে ফেলা যাবে না। বিশেষ করে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনি একটু বেশিই ব্যতিক্রম। ২০১৩ সালে যখন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) অভিষেক হয়, তখন বয়স ৪১ হয়ে গেছে। মানে, যে বয়সে সবাই খেলা ছেড়ে দেন – সেই বয়সে অভিষেক।
এর আগেই তিনি লম্বা সময় মুম্বাইয়ের ক্লাব ক্রিকেট খেলেছেন। তবে, আইপিএল মাঠে নামার আগে কখনো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটও খেলেননি। ২০০০ সালে মুম্বাইয়ের রঞ্জি দলে খেলার একটা সম্ভাব্যতা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু, সেটা শেষ অবধি পূর্ণতা পায়নি।
মূলত রঞ্জি খেলার জন্যই লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু এর মধ্যেই হঠাৎ করে আইপিএল থেকে ডাক আসবে সেটা ভাবেননি তাম্বে। কিন্তু, একটা ফোন কলেই সব বদলে গেল। সেই ফোনটা ছিল স্বয়ং রাহুল দ্রাবিড়ের।
দিনমজুর গোছের ক্রিকেটার ছিলেন। খ্যাপ ক্রিকেট খেলে কোনোক্রমে পেট চলে যেত। সাথে একটা চাকরিও করতেন। এমন সময় এই লেগ স্পিনার নজরে আসে রাজস্থান রয়্যালস দলের স্কাউটদের। ব্যাস! এক নিমিষে বদলে যায় প্রবীন তাম্বের জীবন।
বাকিটা স্রেফ ইতিহাস! ২০১৩ সালে তিনি মাঠে নামেন দিল্লী ডেয়ারডেভিলসের বিপক্ষে। এই বয়সে এসে এর আগে আর কারোরই অভিষেক হয়নি আইপিএলে।
পরের বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে তিনি আরো একবার চমকে দেন। ৬.৫০ গড়ে তিনি পান ১২ উইকেট। ওই আসরে তিনিই ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী বোলার। সেটা, সুনীল নারাইন কিংবা রবিচন্দ্রন অশ্বিন থাকার পরও।
সেই সুবাদে অধরা রঞ্জি ট্রফি খেলার স্বপ্নও পূরণ হয়। যদিও, রঞ্জি দলে থিঁতু হতে পারেননি। দুই ম্যাচ খেলে আবারো থেমে যায় ক্যারিয়ার। তবে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ক্রমেই তিনি পরিণত হন হট কেকে। তখন, ৬১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৬৭ উইকেট পাওয়াটা মুখের কথা নয়।
একটা জায়গাতে তিনি ছাড়িয়ে গেলেন ভারতের সবাইকেই। তিনিই প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার যিনি শীর্ষস্থানীয় কোনো ভিনদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার সুযোগ আসে। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) ৪৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারকে দলে নেয় ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স। তবে, এখানে তাম্বের জীবনে ছোট্ট একটা ধ্বস নামে।
এখানে আবার একটা ‘সূক্ষ্ম রাজনীতি’ আছে। ২০২০ সালের আইপিএলে তাঁকে দলে দিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। গেল ডিসেম্বর হয় নিলাম। কিন্তু, করোনা ভাইরাসের কারণে কয়েক দফা লক ডাউন দেওয়ায় বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) যথাসময়ে আইপিএল আয়োজনই করতে পারেনি।
দু’টি ফ্র্যাঞ্চাইজিই বলিউড তারকা শাহরুখ খানের মালিকানাধীন। ফলে, খেলতে বাঁধা কি! কিন্তু, ব্যাপার হল বিসিসিআইয়ের নিয়ম বলে, চুক্তিতে থাকা কোনো ক্রিকেটারই দেশের বাইরের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলতে পারবেন না। প্রবীন তাম্বের ক্ষেত্রেও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি।
সিপিএলে তিনি খেলেন ঠিকেই। বিসিসিআইয়ের অনুমোদনহীন টি-টোয়েন্টি লিগে অংশগ্রহণের দায়ে তিনি আইপিএলে অংশগ্রহনের যোগ্যতা হারান। আর সিপিএলে খেলার প্রশ্নে বিসিসিআইয়ের কার্যত তাই আপত্তি করার কোনো সুযোগ ছিল না। আর সেই সুযোগ তাম্বেও দেননি।
তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে অবসরও নিয়ে ফেলেছেন ভারতীয় ক্রিকেট থেকে। ভারতের ক্রিকেটে তাম্বের অধ্যায় সেখানেই শেষ হয়, তবে তিনি যে লিগ্যাসি রেখে গেছেন বুড়ো বয়সে ক্রিকেটের মূল ধারায় এসে – তার বোধকরি কোনো শেষ নেই।