ভরসার বিনিয়োগে সোনালি ফসল

দিল্লী ক্যাপিটালস তাঁদের স্ট্রেন্থ এবং কন্ডিশনিং কোচ বিবেক রামাকৃষ্ণকে উড়িয়ে নিয়ে এল চেন্নাই থেকে মুম্বাইয়ে। সাথে দলের ব্যাটিং কোচ প্রবীণ আম্রেও। মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের বান্দ্রা কুরলা কমপ্লেক্সে আরও হাজির তরুণ ব্যাটার পৃথ্বী শ। শোনা যায় এদের সাথে ফ্রাঞ্চাইজির উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাও ছিলেন। এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হওয়ার আগের ঘটনা। একসাথে চারজন বসে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন পৃথ্বীর সমস্যার সমাধান।

এবারের আইপিএলে হয়ে গেল মেগা নিলাম। এই মেগা নিলামের আগে প্রতিটি দল তাঁদের পুরোনো দল থেকে চারজন খেলোয়াড়কে রেখে দিতে পেরেছিল। দিল্লী যাদেরকে রেখে দিয়েছিল তাঁদের মধ্যে পৃথ্বী শ একজন। তরুণ এই টপ অর্ডার ব্যাটারকে নিয়ে নিশ্চয়ই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ছিল ফ্রাঞ্চাইজিটির। তা না হলে আগামী তিন মৌসুমের জন্যে রেখে দেওয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে তাঁকে রাখার তো বিশেষ কারণ নেই।

তাঁকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা বা চিন্তা রয়েছে দিল্লী ফ্রাঞ্চাইজির এটা আরও স্পষ্ট হয় আলোচনার শুরুর ঘটনার বর্ণনা থেকে। রঞ্জি ট্রফি চলাকালীন সময়ে পৃথ্বী শয়ের শারীরিক গঢ়নে তারতম্য এবং তাঁর ফিটনেস ইস্যুতে দুশ্চিন্তায় মগ্ন ফ্রাঞ্চাইজি পরিকল্পনা সাজাতে মিটিং অবধি করে ফেলেছে। এ থেকে খানিক আন্দাজ করে নেওয়া যায় দলটির জন্য ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় তিনি। তাছাড়া কর্তাদের মুখ থেকেও এমন বুলি শোনা যায় যে তাঁকে অযথাই রিটেইন করেনি দলটি।

বিশেষ পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তাঁকে নিয়ে আলাদাভাবে দুশ্চিন্তা এবং ফিটনেস ফিরে পাওয়ার ছক আঁকা হয়। সে ছক মোতাবেক নিজের ফিটনেস ফিরে পেতে টানা দশদিন কঠোর পরিশ্রমও করেছেন পৃথ্বী শ। কেননা কন্ডিশনিং কোচ বিবেক রামাকৃষ্ণ পরীক্ষা চালিয়ে দেখেন যে স্বাভাবিকের থেকে খানিক অধিক ওজন রয়েছে পৃথ্বীর। সে বাড়তি ওজনটুকু কমিয়ে পুরোপুরি ফিট হয়েই যেন তিনি খেলতে নামেন আইপিএল সে নিয়েই ছিল বেশ তোরজোর।

তবে কষ্টের খুব একটা সফলতা পাওয়া গেল না। ভারতের ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে হওয়া ইয়ো-ইয়ো পরীক্ষায় পাশ নম্বর মেলেনি তাঁর। ভারতের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে ইয়ো-ইয়ো ফিটনেস পরীক্ষায় পাশ নম্বর ১৬.৫। কিন্তু এমনটা শোনা যায় যে পৃথ্বীর নম্বর উঠেছিল ১৫। সুতরাং এবারের আইপিএলে শুরু হওয়ার আগে পৃথ্বী শকে নিয়ে বেশ একটা দুশ্চিন্তার সময় পার করছিল দিল্লী ক্যাপিটালস।

তবে সময়ের সাথে তিনি যে নিজের ফিটনেসের উপর কাজ করে যে আবার স্বরুপে ফিরছেন তাঁর প্রমাণ তো পাওয়া যাচ্ছে মাঠের ক্রিকেটে। এখন পর্যন্ত খেলা চার ম্যাচের মধ্যে টানা দুই ম্যাচে তিনি অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন। শেষ অর্ধশতকটা করেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে। সে ম্যাচেই তাঁর শরীরি ভাষায় বুঝে নেওয়া গেছে যে তিনি সঠিক পথেই আছেন।

ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও তাঁর প্রফুল্লতা বেড়েছে। তাছাড়া ফিটনেস নিজের পক্ষে থাকলে যে ক্রিকেটটা ভাল খেলা যায় তাঁর প্রমাণ তো ভুরিভুরি রয়েছে বিশ্ব ক্রিকেট। আরও এক উদাহরণে ক্রমশ নিজেকে পরিণত করছেন ২২ বছর বয়সী তরুণ ওপেনার পৃথ্বী শ। কলকাতা বিপক্ষে একেবারে ইনিংসের শুরু থেকে তিনি ছিলেন মারকুটে মেজাজে।

উমেশ যাদবের বলে দ্বিতীয় ওভারে তিনি টানা তিনটা চার মারেন। অথচ এবারের আসরে এখন পর্যন্ত দারুণ ছন্দে আছেন যাদব। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকেও মেরে খেলেছেন দ্বিধাহীনভাবে। সাত চার ও দুই ছয়ের বদৌলতে তুলে নিয়েছেন ফিফটি। সময় নিয়েছেন মাত্র ২৭ বল। শুরুতেই পৃথ্বীর এমন পারফরমেন্সের পর দিল্লির রান পেরোয় ২০০ রানের গণ্ডি।

ফিটনেসের কাজ করার পাশাপাশি নিজের ব্যাটিংটাও বেশ শাণ দিয়ে নিচ্ছেন পৃথ্বী শ। সময়টাও তাঁর পক্ষেই কথা বলছে। এমনটা চলতে থাকলে নিশ্চয়ই তিনি দিল্লীর সামনের দিনের প্রতিপক্ষের জন্যে বেশ বড় এক হুমকি হিসেবেই প্রতীয়মান হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link